
যত দিন গড়াচ্ছে, ততই জমে উঠছে ভোটের প্রচার। এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা পরস্পরকে
অভিযোগে বিদ্ধ করেছেন। উত্তর সিটিতে প্রচারাভিযানে হামলার শিকার হয়ে বিএনপি
প্রার্থী তাবিথ আউয়াল দায়ী করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলামকে।
অন্যদিকে, আতিকুল ইসলাম সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, এ হামলার ঘটনা সাজানো হতে
পারে। বিএনপির নেতাকর্মীরাই এটা ঘটিয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসও
বাক্যবাণে বিদ্ধ করেছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ইশরাক
হোসেনকে। তাপস বলেছেন, বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনকে ঢাকাবাসীর উন্নয়নে নয়,
তার নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলন হিসেবে নিয়েছেন। আর তিনি ভোট
করছেন ঢাকাবাসীর সেবা ও উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে। তাপসের এই কটাক্ষের জবাবে
ইশরাক বলেছেন, তার পেছনে রাষ্ট্রীয় শক্তি নেই। কিন্তু ভোটের অধিকার রক্ষায়
প্রয়োজনে জীবন দেবেন, রক্ত ঝরাবেন। তবুও মাথা নত করবেন না।
সাঈদ খোকনের সমর্থন পেয়েছেন তাপস :গতকাল পুরান ঢাকার অলিগলি চষে বেড়ান
নৌকার প্রার্থী তাপস। রায়সাহেব বাজার মোড়ের ৪২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ
কার্যালয়ের সামনে থেকে গণসংযোগ শুরু করে তিনি সূত্রাপুর, কোতোয়ালি,
গেণ্ডারিয়া ও ইসলামপুরে প্রচারপত্র বিলি করে মানুষের কাছে ভোট ও দোয়া
প্রার্থনা করেন।
শেখ ফজলে নূর তাপস জানিয়েছেন, আচরণবিধির কারণে বিদায়ী মেয়র সাঈদ খোকন
সরাসরি প্রচারে নামতে না পারলেও তাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন,
মনোনয়ন না পাওয়ায় সাঈদ খোকন হয়তো মনে একটু কষ্ট পেয়েছেন; কিন্তু দলগতভাবে
আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। সর্বস্তরের নেতাকর্মীরাই স্বতঃস্ম্ফূর্ত
গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে- বিএনপির প্রার্থীর এ দাবি নাকচ
করে তাপস বলেছেন, এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এতে ঢাকাবাসী যোগ্য ও দক্ষ
প্রার্থীকেই নির্বাচিত করবেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিএনপির প্রার্থী
নির্বাচনকে ঢাকাবাসীর উন্নয়নের নির্বাচন হিসেবে নিচ্ছেন না। তারা এই
নির্বাচনকে তাদের আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিচ্ছেন। ইভিএম নিয়ে বিএনপির অভিযোগ
প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, ইভিএম আধুনিক প্রযুক্তি। এটা নিয়ে কারও
কোনো শঙ্কা নেই। তাপস আশাবাদী ঢাকাবাসী তার উন্নয়নের রূপরেখা গ্রহণ করে
তাকে ভোট দেবেন।
তাপস তার প্রচারে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী
মো. সেলিম ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী নাসিমা আহমেদকে পরিচয় করিয়ে
দেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের
সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, সানজিদা খানম, ঢাকা মহানগর
দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী প্রমুখ।
জনগণই ভরসা ইশরাকের :ধানের শীষের প্রার্থী ইশরাক বলেছেন, তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তার রাষ্ট্রীয় শক্তি নেই, পেশি শক্তি নেই, পুলিশি
শক্তি নেই। জনগণই তার শক্তি। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই তিনি এগিয়ে যাবেন। গতকাল
রাজধানীর ডেমরায় ভোটের প্রচারে তিনি এসব কথা বলেন। পথসভায় ইশরাকের পক্ষে
ভোট চেয়ে বক্তৃতা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ
হোসেন, দলের কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ, নবীউল্লাহ নবী প্রমুখ।
ইশরাক বলেন, তার বাবা প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকা মুক্তিযুদ্ধে যাত্রাবাড়ীতে
গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। জনগণের পক্ষে আন্দোলন করে রক্ত দিয়েছেন। তাকে কেউ
দাবিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পান না। খালেদা জিয়াকে
মুক্ত করতে সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। দূষণমুক্ত নগর গড়ার প্রতিশ্রুতি
দিয়ে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ধানের শীষে ভোট প্রার্থনা করেন ইশরাক। গতকালও তিনি
অভিযোগ করেন, বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা ও তাদের ভয়ভীতি দেখানো
অব্যাহত রয়েছে। হোসেন প্লাজা মার্কেট থেকে বাওয়ানি জুটমিল, ডেমরা থানা,
ডেমরা বাজার, মালা মার্কেট, মীর পাড়াসহ দক্ষিণের ৬৬ ও ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডের
বিভিন্ন এলাকায় গতকাল গণসংযোগ করেন ইশরাক। তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভাইস
চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম সচিব খায়রুল কবীর খোকন, হাবিব-উন-নবী
খান সোহেল প্রমুখ।
বেরাইদ হবে হাতিরঝিলের চেয়ে সুন্দর :ঢাকা উত্তর সিটিতে যুক্ত নতুন ১৮টি
ওয়ার্ডের কোথাও কাঁচা রাস্তা থাকবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ
প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। গতকাল বেরাইদে ভোটের প্রচারে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
উত্তরের ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে বেরাইদ মুসলিম হাইস্কুল মাঠে নির্বাচনী সভায়
নৌকার প্রার্থী বলেন, তাকে মেয়র নির্বাচিত করলে হাতিরঝিলের চেয়ে সুন্দর হবে
বেরাইদ। গতকাল সাতারকুল, উত্তর বাড্ডা, মোল্লাপাড়ায়ও জনসংযোগ করেন তিনি।
কয়েকটি পথসভায় বক্তব্য দেন। এ সময় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি
শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচিসহ স্থানীয় নেতারা
উপস্থিত ছিলেন।
আতিকুল ইসলাম বলেন, নতুন ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে।
গুলশান, বনানী, বারিধারার চেয়েও সুন্দর রাস্তা তৈরি হবে নতুন ওয়ার্ডে। এর
জন্য চার হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ আসছে। বেরাইদের রাস্তা প্রশস্ত করা,
জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দেন আতিকুল ইসলাম।
মন্তব্য করুন