মনোনয়ন বঞ্চনা
স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন সাত কাউন্সিলর

অমিতোষ পাল
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২০ | ১৩:১৬
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বা
সমর্থন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯
নেতা। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নির্বাচিত সেই কাউন্সিলরদের ১২ জন
দলীয় সমর্থন পেলেও বাকি সাতজন এবারও দলীয় মনোনয়ন পাননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী
হয়ে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের কেউ কেউ।
প্রার্থী হতে ইচ্ছুক এই কাউন্সিলররা এরই মধ্যে রিটার্নিং অফিসারের কাছে
মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ দলীয় সমর্থন না পেলে নির্বাচনে অংশ
নেবেন না বলে জানালেও রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রার্থিতার জন্য
কাগজপত্র জমা দিয়েছেন।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বা সমর্থন পাওয়া
কাউন্সিলরদের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে
(ডিএসসিসি) ছয়জন বিদ্রোহী প্রার্থী গত নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। তাদের
প্রত্যেকেই এবার দলীয় সমর্থন পেয়েছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের
(ডিএনসিসি) গত নির্বাচনে ১৩ জন বিদ্রোহী প্রার্থী কাউন্সিলর হয়েছিলেন।
তাদের মধ্যে সাতজন এবারও দলীয় মনোনয়ন পাননি। অন্য ছয়জন দলীয় সমর্থন
পেয়েছেন।
গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ডিএনসিসির ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় মনোনয়ন
পেয়েছিলেন তৎকালীন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বর্তমান বনানী থানা
আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আসলাম। তাকে পরাজিত করেন বনানী থানা আওয়ামী
লীগের সিনিয়র সহসভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নাছির। তবে এবারও তিনি দলীয়
মনোনয়ন পাননি। এবার সেখানে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান। এ প্রসঙ্গে মো. নাছির সমকালকে বলেন,
জনপ্রিয়তা রয়েছে বলেই গত নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। মনোনয়নপ্রাপ্ত
জাহিদুরের চেয়ে তার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি- এমন দাবি করে তিনি জানান, এবারও
তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন। রিটার্নিং অফিসারের কাছে এরই মধ্যে প্রার্থী
হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
যদি বলেন, তাহলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন তিনি।
গত নির্বাচনে ডিএনসিসির ৬ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় মনোনয়ন পান ওয়ার্ড আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী
হিসেবে নির্বাচন করেন রূপনগর থানা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি রজ্জব
হোসেন। এবার এ ওয়ার্ডে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে রূপনগর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ
সম্পাদক সালাউদ্দিন রবিনকে। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বিজয়ী
হলেও এবারও মনোনয়ন না পাওয়ার কারণ সম্পর্কে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর
রজ্জব হোসেন সমকালকে বলেন, দল যেটা ভালো মনে করেছে, সেটাই করেছে। তবে তিনি
রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রার্থিতার জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। তবে দলীয়
সমর্থন না পেলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। তিনি বলেন,
প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণার আগের রাত ১২টা পর্যন্তও তার নাম মনোনয়নের
তালিকায় ছিল। কিন্তু কেন পরদিন পরিবর্তন করা হলো, তা জানেন না তিনি। তার
বিশ্বাস, দলীয় সিদ্ধান্ত পাল্টে তাকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে।
বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন
তিতুও প্রথমে বাদ পড়েছিলেন মনোনয়নের তালিকা থেকে। ওই ওয়ার্ডে মনোনয়ন দেওয়া
হয়েছিল ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য আফছার উদ্দিন খানকে।
কিন্তু সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরদিন ডিএনসিসির ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ইকবাল হোসেন
তিতুকে প্রার্থী করে আওয়ামী লীগ। ডিএনসিসির কাউন্সিলর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের
হুমায়ুন রশিদ জনি, ২০ নম্বরের মো. নাছির ও ২৩ নম্বরের মোস্তাক আহমেদকেও
দলীয়ভাবে সমর্থন করা হয়নি।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গত পাঁচ বছরের কার্যক্রম ও অনেক বিষয়
পর্যালোচনা করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ ও ইতিবাচক
ভাবমূর্তি আছে, এমন নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
ডিএনসিসির গত নির্বাচনে বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে এবারের ভোটের
জন্য দলীয় মনোনয়ন পাওয়া কাউন্সিলরদের মধ্যে রয়েছেন- ১১ নম্বর ওয়ার্ডের
দেওয়ান আবদুল মান্নান, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের হারুন অর রশিদ, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের
সাদেক মোল্লা, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মতিউর রহমান, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল
ইসলাম রতন ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল হাসেম হাসু। ডিএনসিসির ৩ নম্বর
ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে একমাত্র বিদ্রোহী নারী প্রার্থী হয়ে
জয়ী হন আমেনা বেগম। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।
তবে গত নির্বাচনে ডিএসসিসির যে ছয় প্রার্থী দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে
বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন তাদের প্রত্যেকেই এবার দলীয় মনোনয়ন
পেয়েছেন। তারা হলেন- ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাসিবুর রহমান মানিক, ৩৩ নম্বর
ওয়ার্ডের আউয়াল হোসেন, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আবু সাঈদ, ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের
মোহাম্মদ সেলিম, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের আরিফ হোসেন ছোটন ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের
মো. মাসুদ।
গত বছর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর সেগুলোতে ৩৬টি করে ৭২টি
ওয়ার্ড যুক্ত করা হয়। একই বছর এসব ওয়ার্ডেও নির্বাচন হয়। তখন দল থেকে কাউকে
সমর্থন দেওয়া হয়নি। উন্মুক্ত পন্থায় ওইসব ওয়ার্ডে নির্বাচন হয়। এবার ওইসব
ওয়ার্ডেও বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন বেশ কয়েকজন।
- বিষয় :
- মনোনয়ন বঞ্চনা