সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়নি শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীম ও আবদুল করিম রাজীব। তারা দুই বাসের বেপরোয়া প্রতিযোগিতার শিকার হয়েছে। একে দুর্ঘটনা বলা যায় না। ওরা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। আদালতের রায়ে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। তাই দোষীদের যাবজ্জীবন সাজা খুব স্বাভাবিক রায়, আবেগতাড়িত নয়। রায়ে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে  আপিলের দরজা খোলা রয়েছে। তাই কারও উচিত হবে না দণ্ডিতদের রক্ষায় ধর্মঘট ডেকে সড়ক অচল করে দেশবাসীকে জিম্মি করা। সড়কে দুর্ঘটনার জন্য সাজা নতুন নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির পরিবারের সদস্যও সাজা পেয়েছেন। বলিউডের তারকা অভিনেতা সালমান খানও সাজা পেয়েছেন।

দিয়া ও রাজীবের মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা পথে নেমেছিল। তাদের আন্দোলন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল, সড়ক নিরাপত্তায় কতটা গলদ রয়েছে, পরিবহন খাতে কতটা নৈরাজ্য চলছে। তাদের আন্দোলনে সড়ক পরিবহন আইনের মতো একটি ভালো আইন হয়েছে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে দেখছি- আইনটি প্রয়োগ করা হচ্ছে না। আইন প্রয়োগ করতে না পারা সরকারের দুর্বলতা।

আইন প্রয়োগে যে দৃঢ়তা দেখানো প্রয়োজন, তা সরকার দেখাতে পারছে না। আইন কার্যকরের পরপরই অঘোষিত ধর্মঘট ডেকে সড়ক অচল করে, সারাদেশ জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের মাধ্যমে পুরনো আইন রহিত হয়েছে। এদিকে নতুন আইনও কার্যকর নয়। তাতে অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, বলতেই হচ্ছে- সড়কে এখন কোনো আইনই নেই। সড়ক এখন বেওয়ারিশ।

উন্নত সমাজে নমনীয় আইন করা হয়। কিন্তু আইনের কঠোরতম প্রয়োগ করা হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগে বলা যায়, বাংলাদেশে উল্টো হয়েছে। এখানে কঠোর আইন করে তার দুর্বলতম প্রয়োগ করা হয়। সড়ক আইন কঠোর; এর কড়াকড়ি প্রয়োগ হলে পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে- এটি কুযুক্তি। আইন প্রয়োগ না হলে আরও অনেক দিয়া ও রাজীবের প্রাণ যাবে।

আদালত দিয়া ও রাজীবের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের সাজা দিয়েছেন। পরিবহন চালক সমাজ, শ্রমিক সমাজকে সাজা দেননি। সড়কে কাউকে আহত-নিহত করলে সাজা পেতেই হবে; এ সত্য সবাইকে মেনে নিতে হবে। যাত্রী পেতে বাসে বাসে পাল্লা দিয়ে কাউকে মেরে ফেলা ও সড়ক দুর্ঘটনা এক নয়। রাস্তায় গতির প্রতিযোগিতা ফৌজদারি অপরাধ। এর বিচার হতেই হবে।