- মন্তব্য
- এক অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ এই বাংলা
এক অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ এই বাংলা

ফাইল ছবি
অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত দুর্গা পূজার মত এত বড় উৎসবকে সামনে রেখে কুচক্রী মহল স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি তথা পাকিস্তানের দালালরা, উগ্র মৌলবাদীরা যেভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে আঘাত করার মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকাণ্ড করেছে, তা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অর্জিত এই স্বাধীন ভূখণ্ডে আমরা দেখতে চাইনি। বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা কোনভাবেই এই ধরনের অনাকাঙিক্ষত ঘটনা কল্পনাও করেননি। সে কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার জিরো টলারেন্স উচ্চারণ করেছেন। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে বা ব্যক্তিদের এমন শাস্তি দেওয়া হোক যেন, সেই শাস্তির উদাহরণ দেখে সকল কুচক্রী আঁতকে উঠে।
আমরা তো জানি, বঙ্গবন্ধুর পর তার সুযোগ্য রক্তের উত্তরাধিকার জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলার হাল ধরে নৌকাকে মহাসমুদ্র পার করে কূলে ভিড়িয়েছেন। বাঙালি জাতির একমাত্র আশা-ভরসার আশ্রয় এবং মানবতার মা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছেন। আসল কথাটি বোধহয় আমরা সকলেই বুঝতে পারি। তা-হলো যে, সফল রাষ্ট্রনায়ক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করে সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের কাজ যখন প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন সারা বিশ্বের উন্নয়নের উদাহরণ সৃষ্টি করার মাধ্যমে বিশ্বসেরা নেতা হিসেবে বর্তমান পৃথিবীতে প্রশংসা এবং পুরস্কারে বার বার বাঙালি জাতির মাথা উঁচু করে চলেছেন। করোনা মোকাবিলা করে বাংলার মানুষের জীবন-জীবিকাসহ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়িয়ে সাফল্য অর্জন করে চলেছেন। ঠিক সেই সময় একটি উন্নয়নশীল পূর্ণগতিতে চলমান দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য কূটকৌশলে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের একটি বড় উৎসবকে বেছে নিয়ে অর্থাৎ খুবই স্পর্শকাতর ইস্যুকে লক্ষবস্তু করে দেশের মধ্যে মারামারি-হানাহানি করার এই প্রয়াস চালিয়েছে।
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করার জন্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিববুর রহমার তার জীবনের পুরো সময় ব্যয় করেছেন। অতীতের প্রতিটি ঘটনায় বঙ্গবন্ধু বিচক্ষণতার সাথে সাম্প্রদায়িকতার অন্ধকার জগত থেকে বাঙলি জাতিকে মুক্ত করার জন্য ত্যাগ, সংগ্রাম, জেল-জুলুম, হামলা-মামলা, অত্যাচার মাথায় নিয়ে এমন একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে দেশে কখনও জাত, কুল, ধর্ম, বর্ণ নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এবং সংস্কৃতিতে প্রশ্ন উঠার কোন সুযোগই নেই। বঙ্গবন্ধু কেবল একটি স্বধীন রাষ্ট্র দিয়েছেন এবং অনেক উঁচ্চতায় মানবিকতার ছোঁয়ায় সব ধর্মের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি, বন্ধন ও ভালোবাসায় বাঙালি জাতীয়তাবাদী, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতান্ত্রিক দর্শনও প্রতিষ্ঠিত করেছেন এই বাংলাদেশে।
উপমহাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প কোনোদিনই ছিলো না। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ মুসলমানদের ঘরে দাওয়াত খেতে আসত, মুসলমানরা যেতো খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ঘরে দাওয়াত খেতে, বৌদ্ধদের বিভিন্ন তিথিতে মুসলিমরাও যায়। কিন্তু জিন্নাহর টু’নেশান থিয়োরী ছড়িয়ে দিলো এই বিষবাস্প। এ সবের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হলো পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ভেবেছিল, বাঙালিরা একটি আদর্শ রাষ্ট্র পেলো যেখানে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। কিন্তু ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলন তাদের শিক্ষা দিল পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালিদের স্বপ্ন পূরণ হবে না। এই ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হয়েই শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পারলেন, বাঙালিরা প্রকৃত স্বাধীনতা পায়নি।
এই বাংলা হবে এমন একটি ভূখণ্ড যেখানে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা নিজদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির সবুজ ছায়ায় একসাথে বাস করবে। সেখানে থাকবে না কোনো ভিন্নতর মতবাদ, থাকবে না কোনো ধর্মীয় বিভেদ। সবাই নিজেদের পালা-পার্বণ, নিজস্ব অনুষ্ঠান, নিজদের অন্নপ্রাসন, বৌভাতের আনন্দ উৎসব, ঈদ উৎসব নিয়ে বাঙালি পরিচয়ে পাশাপাশি বসবাস করবে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকরা বাঙালি মুসলিমদের ভেতর ধর্মীয় চেতনা ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের আলাদা করে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায়। এছাড়াও জাতীয় আয়ের অসম বণ্টন ও অসাম্যের রাষ্ট্রীয় নীতিতে বাঙালিরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। বুনিয়াদি গণতন্ত্রের নামে আইয়ুবশাহী পূর্ব পাকিস্তানে সৃষ্টি করে এক তাবেদারী প্রশাসন। পূর্ব পাকিস্তানের উৎপাদিত পণ্য পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে তা আবারো করাচী বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে আসার জাহাজ ভাড়াসহ এ বাংলার পণ্য এ বাংলাতেই বেশি দামে বিক্রি হতে থাকে। সরকারি চাকরিতে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে কম সুবিধা দেওয়া হতে থাকে। সৃষ্টি হয় একই দেশে অসাম্যের শাসন।
দীর্ঘদিন এসব পর্যবেক্ষণ করেই পূর্ব বাংলার বুদ্ধিজীবীরা ও রাজনৈতিক নেতারা একটি স্বাতন্ত্র্য ভূখন্ডের স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে থাকবে না কোন ধর্মীয় অনুশাসন, সব মানুষই গণতন্ত্রের শাসনে দায়বদ্ধ থাকবে, থাকবে বর্ণগোত্রহীন একটি সমাজতন্ত্র এবং আমরা যে বাঙালি, আমাদের জাতীয়তা যে এক, সেই আদর্শে বলীয়ান এক জাতীয়তাবাদ। এ নীতি নিয়েই বঙ্গবন্ধুর মুজিববাদের পথচলা। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পরিচালক হিসেবে তিনি বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান বা অন্য কোন ধর্মের মানুষের প্রতি কোনো পার্থক্য করেননি। তিনি বাংলাদেশের একজন হিন্দুকে বা একজন খ্রিস্টানকে বা চট্টগ্রামের উপজাতি গোত্রের মানুষকে বাঙালি হিসেবে মূল্যায়ন করে সংবিধান প্রণয়ন করেন। তার কাছে দেশের মানুষ খুব প্রিয় ছিলো তা সে যে কোনো ধর্মেরই হোক না কেনো।
এরও আগে এ উপমহাদেশের বাংলায় বারো শতকের শেষদিকে যেদিন হযরত শাহজালাল (র.) ৩৬০ জন আউলিয়া নিয়ে সিলেটে আসেন, তখনো এ উপমহাদেশের মানুষ যার যার ধর্ম, তার তার মতো-এ মতবাদ ধারণ করে চলাচল করত। একই স্থানে মসজিদ-মন্দির গড়ে ওঠে। সন্ধ্যায় মসজিদগুলো থেকে আযানের ধ্বনি ভেসে আসতো, একই সময়ে হিন্দু বাড়িগুলো থেকে সন্ধ্যাপূজার শাঁখ বেজে উঠত। এ নিয়ে শত শত বছর পেরিয়ে গেছে এ বাংলায় কিন্তু তেমন কোন বিরোধের অধ্যায় ইতিহাসে নেই। ভারতবর্ষ উপমহাদেশে বাঙালিরা হাজার বছর ধরে একটা অসাম্প্রদায়িক অভ্যাস নিয়ে বসবাস করছে। এ কারণেই বঙ্গবন্ধুর চার মূল রাষ্ট্রীয় নীতির মধ্যে একটি করেছিলেন ধর্মনিরপেক্ষতা। তবে তিনি তার কোন এক ভাষণে এও বলেছিলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। তিনি এমত পোষণ করেছিলেন, যার ধর্ম, সে তা পালন করবে, এতে দেশের অন্য সম্প্রদায়ের বা অন্য ধর্মের মানুষের বাধা দেয়ার এখতিয়ার নেই। তার সারা জীবনের রাজনীতিতেও তিনি এমন মতবাদ পোষণ করতেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই তার শাসনামলে তিনি রাষ্ট্রে বসবাসকারী সবাইকে বাঙালি বলে ভাবতেন। এক ধর্মের মানুষের সাথে অন্য ধর্মের মানুষের ফারাক করেননি। তিনি গণতন্ত্রের পথে পরিচালিত করতেন প্রশাসনকে। এক সমাজতান্ত্রিক দেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষকে তিনি তাদের জাতীয় পরিচয় দিয়েছিলেন বাঙালি হিসেবে, এটিই ছিল তার জাতীয়তাবাদের মূল শিক্ষা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সেই একই পথে হাঁটছেন। তিনিও গণতন্ত্রকে সাথে নিয়ে মানুষের মাঝে শ্রেণিবোধ তুলে দিয়ে এক সমাজতান্ত্রিক পথে চলছেন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা চেতনায় বলীয়ান হয়ে। তিনি হিন্দু না হয়েও সব বাঙালির সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হিন্দু আইন সংশোধন করেন সম্প্রতি। এই আইনের বলে হিন্দু মেয়েরা তাদের বাবার সম্পত্তিতে অংশীদার হতে পারবে। ইন্দিরা গান্ধী ভারতে হিন্দুদের সম্পত্তিতে পুরুষ এবং মেয়ের সমান অধিকার আইন পাশ করেছিলেন একবার। তবে ভারতে অধিকাংশ সনাতনপন্থী এটি মেনে চলে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই মানবাধিকার নীতি নিয়েই রাষ্ট্রে সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকারের আওতায় চলছে। এ নীতি থেকেই দেশে ধর্মের বিভেদ উঠে গেছে। বর্তমান রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের অনেক উচ্চ পদে দেশের হিন্দু ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ আসীন রয়েছেন। দেশে ধর্মের ভেদে রাষ্ট্রীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত, এমন খবর বেশ কয়েক বছর ধরে মিডিয়ায় আসেনি। তিনি দেশে এক শ্রেণির ধর্মীয় উগ্রবাদীদের উন্মত্ততায় রামুতে ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধদের প্রধান উপাসনালয় রাষ্ট্রীয় খরচে মেরামত করে দেন। হিন্দু ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সরকারি কর্মচারীদের জন্য মুসলিম সম্প্রদায়ের ঈদের ভাতার মতো তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো উদযাপনের জন্যও উৎসব ভাতা দিয়ে আসছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। উদার অসাম্প্রদায়িক নীতিতে প্রশাসন পরিচালনা করছেন।
বাংলাদেশ এক অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে ইতোমধ্যে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। বড় বড় স্থাপনাসহ উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে দেশে। দেশে মানুষকে গণতন্ত্রের সর্বাধিকার দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই বাঙালিদেরই মধ্যে একদল পথভ্রষ্ট মানুষ ধর্মীয় উন্মাদনায় দেশকে বিপথে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় সবদিক দিয়েই চেষ্টা চালাচ্ছে। আর এদের নোংরা ষড়যন্ত্রের কাছে বলিদান দিয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বয়ং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে ৩৯ বার হত্যা চেষ্টা করে এই উন্মত্ত, অন্ধ, ধর্মের নামে উগ্র গোষ্ঠীটি। এ কারণে প্রায় প্রতি বছরই হিন্দু সম্প্রদায়ের জাতীয় উৎসব দুর্গা পূজাতে তাদের ষড়যন্ত্রের উগ্র বাসনা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সরকার এদের চেনে এবং এদের কূটচালের খবর রাখে। তাই প্রতিবছর হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবের দিনে সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়োজিত রাখে। এরপরও অন্ধ, উন্মত্তরা রাতের অন্ধকারে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ চালায়, তাদের প্রতীমা ভেঙে ফেলে। এদের এই নোংরা ক্রিয়াকলাপের ইতিহাস নতুন নয়। বাঙালি জাতি এদের চেনে। এরা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরই নয়, মুসলিম সম্পদায়ের একজন শিক্ষক, যিনি তার মৃত্যুর মাসেও চারবার কোরআন শরীফ খতম দিয়েছিলেন, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম এলাকার বুড়িমারীর সেই সাধারণ শিক্ষক শহীদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে মেরে ফেলে ধর্মের নামে অন্ধ-উন্মত্ত কিছু মানুষ। এরা ধর্মের প্রকৃত শিক্ষাও নেয় না, মানুষকে ধর্মের সঠিক পথেও পরিচালিত হতে বিভ্রান্তের সৃষ্টি করে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তাদের সাথে নেই। বাংলাদেশের মানুষ এক অসাম্প্রদায়িক মানসিকতায় যুগ যুগ ধরে এই বাংলায় বসবাস করে আসছে। গত কয়েকদিন আগে কুমিল্লার ঘটনাটি পর্যালোচনা করলেই দেখা যায়, বেদীর পদমূলে পবিত্র কুরআন এক মুসলিমই রেখে এসেছে। তার কিছু সহযোগী তাকে উদ্ভ্রান্ত মস্তিষ্কের বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করলেও সবাই জানে এক শ্রেণির চক্রান্তকারীরা তাকে দিয়ে এই কাজটি করিয়েছে। দেশের মানুষ সবাই জানে, হিন্দু সম্প্রদায়ের কোন সদস্যই কুরআনকে এভাবে বেদীর পদমূলে রাখার মতো জঘন্য কাজ কখনোই করবে না। এই বাংলায় কোনোদিন এমনটি ঘটেনি।
১৯৭২-এর ২৬ মার্চে বেতার ও টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘শ্মশান বাংলাকে সোনার বাংলা করে গড়ে তুলতে চাই। সেই বাংলায় আগামী দিনের মায়েরা হাসবে, শিশুরা খেলবে।‘ ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু আরো বলেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলবো আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ। বাংলা আমার ভাষা। আমাদের সাধারণ মানুষ যদি আশ্রয় না পায়, খাবার না পায়, যুবকরা যদি চাকুরী বা কাজ না পায়, তাহলে আমাদের এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে, পূর্ণ হবে না। আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিতে চাই যে, আমাদের দেশ গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতান্ত্রিক দেশ। এ দেশের কৃষক-শ্রমিক, হিন্দু-মুসলমান সবাই সুখে থাকবে, শান্তিতে থাকবে।‘
বাংলাদেশ একটি সামাজিক অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে সবারই ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে। সরকার থেকে এই ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করা হয়। এ কারণেই এদেশে হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ পাশাপাশি বাস করে। এদের ভেতর ধর্মীয় রীতি-নীতি নিয়ে হাজার বছরেও কোনো সংঘাত ছিল না, আজও নেই। তবে যে উগ্র মৌলবাদী চক্র বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বদলে যাওয়া উন্নয়নের বাংলাদেশেকে আঘাত করতে চেয়েছে এবং চায়, তাদের বিরুদ্ধে শুধু প্রতিবাদ-প্রতিরোধ নয়; তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চত করার মাধ্যমে কঠোর দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে হবে।
মন্তব্য করুন