সামরিক কর্মকর্তা থেকে দেশের প্রশাসক ও পরে রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহন করা জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশে সুশাসন ও গণতন্ত্র নিশ্চিত করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন তার ভাই ও দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

তিনি বলেন, ‘সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আসা অনেক নেতা ও তাদের সৃষ্ট রাজনৈতিক দল সু-শাসনের নজির স্থাপন করে জনগণের কাছে নন্দিত হয়েছেন। পল্লীবন্ধু দেশে সুশাসন ও গণতন্ত্র নিশ্চিত করেছিলেন।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির ঈদ পরবর্তী মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জি এম কাদের এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার বিভিন্ন বক্তৃতায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদকে ‘সামরিক শাসক’ হিসেবে উল্লেখ করে তাদের আমলে ‘গণতন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন।

তার এই বক্তব্যের জবাবে জি এম কাদের বলেন, ‘এখন আমরা যারা রাজনীতি করছি, তারা কেউই ক্যান্টনমেন্ট থেকে আসিনি। ১৯৯১ সালের পর থেকে সাংবিধানিক স্বৈরশাসন চলছে দেশে।’

দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন,‘দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি নিশ্চিহ্ন করতে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একদলীয় স্বৈরশাসন চালু হয়েছে। সংবিধানকে কাটাকাটি করে স্বৈরতন্ত্রকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। ’ 

ভাই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নিয়ে সমালোচনার জবাবে জি এম কাদের বলেন, ‘১৯৯০ সালে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এর বিরুদ্ধে মিথ্যে প্রচারনা আর অপবাদ দিয়ে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করতে অপচেষ্টা করা হয়েছে। তখন বলা হয়েছিল স্বৈরতন্ত্র নিপাতক যাক আর গণতন্ত্র মুক্তি পাক। কিন্তু পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তরের পর হয়েছে পুরোটাই উল্টো। পল্লীবন্ধু ক্ষমতা হস্তান্তরের পর থেকে গণতন্ত্র নিপাত গেছে আর স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’ 

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের।

এর কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন,‘নিরক্ষরতার জন্য নির্বাচনে যে দেশে নামের পাশে প্রতীক ব্যবহার করতে হয় কারণ, সবাই প্রার্থীর নাম পড়ে ভোট দিতে পারে না। এমন বাস্তবতায় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে না।’

ইভিএমে ভোটের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘ইভিএমের নির্বাচনে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারে না, কারণ ব্যালট পেপার থাকে না। ভোটিং মেশিন যে রেজাল্ট দিবে, তাই ঘোষণা হবে। এভাবে চলতে থাকলে গণতন্ত্রের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে। বহুদলীয় গণতন্ত্র রক্ষা করা যাবে না।’

এসময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টা বলেছেন, দেশে কোন বেকার নেই অথচ দেশে বেকারের সংখ্যা পাঁচ কোটি। যারা দেশের বেকারত্ব বোঝে না, তারা মানুষের কষ্টও বোঝে না। যারা মানুষের কষ্ট বোঝে না, তাদের দেশ পরিচালনার অধিকার নেই। ’

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা।