বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সদ্য পদত্যাগী সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, ‘বিগত সময়ে স্বাধীনতার স্বপক্ষে ও বিপক্ষে বলে জাতিকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। আমরা জাতিকে বিভক্ত করা থেকে ফিরিয়ে আনবো। আমরা সবাইকে দেখিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। আমরা ক্ষমতায় গেলে সংবিধান সংস্কার কমিশন করবো। কেন করবো? আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে বিনা ভোটের ক্ষমতায় থেকে সংবিধানকে কাটাছেড়া করে তাদের দলীয় একটা বইয়ে পরিণত করেছে। সংবিধানের কিছু ধারা এমন ভাবে পরিণত করেছে, যে ভবিষ্যতে কোনো সংসদে এটি পরিবর্তন করা যাবে না।’

শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপি ঘোষিত আন্দোলনের ১০ দফা দাবি এবং রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা বিষয়ক ২৭ দফা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। শহরের পুনিয়াউটস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল এর বাসভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব উন- নবী-খান সোহেল।

রুমিন ফারহানা আরও বলেন, ‘বিনা ভোটে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ। সংবিধান সংস্কার করার এখতিয়ার রাখতে পারে না। এই ক্ষমতা আওয়ামী লীগের নেই। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়বো। যে বাংলাদেশ হবে ধর্মনিরপেক্ষ। দল মত নির্বিশেষে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা এ দেশকে নতুন করে গড়ে তুলবো।’

তিনি বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে দলীয় সরকার অধীনে অবাধ সুস্থ নির্বাচন না হবে, ততদিন পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোট হতে হবে। জনগণের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়া সুযোগ দিতে হবে। সংবিধানের মালিক জনগণ। জনগণ তার মালিকানা হারিয়েছে। তাই আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, টেক ব্যাক বাংলাদেশ।’

রুমিন আরও বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হবে। আওয়ামী লীগ ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সেই সময়কার নির্বিচনে প্রায় সব আসনের জয়লাভ করেছিল। দু-একটিতে ন্যাপ ও জাসদের প্রাথী জয়লাভ করলেও পরে তাদেরকে পরাজিত দেখানো হয়েছে।’

তিনি তার বাবা অলি আহাদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমার বাবা সেই সময়ের নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জয়লাভ করেছিলেন। কিন্তু পরে নির্বাচনের ফলাফল বদলে তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে বিজয়ী দেখানো হয়েছে। সেই থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ভোট কারচুপি করছে বলে অভিযোগ করেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য ফিরিয়ে আন হবে উল্লেখ করে রুমিন বলেন, ‘সব ক্ষমতা এক ব্যক্তির হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত। রাষ্ট্রপতির কোনো ক্ষমতা নাই। তিনি কেবল জানাজা পড়েন আর ফিতা কাটেন। এর বাইরে তার আর কোনো কাজ নেই। এই ফিতা কাটা আর জানাজা পড়া থেকে রাষ্ট্রপতিকে বের করে নিয়ে আসবো আমরা। যেখানে আমরা ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে আসবো। টানা দুইবারের বেশি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী একই ব্যক্তি থাকতে পারবেন না। এ ছাড়া আমরা বলেছি, সংসদকে আমরা দুই কক্ষে বিভক্ত করবো। একটি হবে উচ্চকক্ষ, অপরটি হবে নিম্নকক্ষ। সংদকে কার্যকর করার জন্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে যা ঘটেছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। একটি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বারের সভাপতি যে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছেন একজন জজ সাহেবকে, এটা আদালতে চলতে পারে না।’ তিনি আদালতের সমালোচনা করে বলেন, ‘আপনারা বিএনপি নেতাকর্মীদের দেখলে জামিন দেন না। সরকারের ইশারায় আপনারা চলেছেন। এখন এর জন্য আপনারা দায়ী।’

মির্জা ফখরুল ইসলামের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল অত্যন্ত সজ্জন রাজনীতিবিদ। তাকে রাত ৩টার দিকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তুলে নেওয়া হয়েছে। তাকে চারদিন ধরে কোনো ডিভিশন দেওয়া হয়নি। হাইকোর্ট রিট করে ডিভিশন নিতে হয়েছে। তার নাম না থাকা সত্ত্বেও তিনি জামিন পাননি। এটাই বাংলাদেশের আদালতের অবস্থা।’

রুমিন বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় গেলে একটি নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী বিচার বিভাগ তৈরি করবো। সেই বিচার বিভাগ দল মত নির্বিশেষে সবার জন্য আইনের সমান প্রয়োগ দেখাবে। আমরা প্রশাসনিক সংস্কার করবো। কারণ প্রশাসনে তো এখন লীগ ছাড়া আর কিছু নেই। পুলিশ লীগ, ক্যাডার লীগ, বিচারক বিচারক লীগ। এই লীগের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে হবে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাবিব উন-নবী খান সোহেল তার বক্তব্যে বলেন, ‘পল্টনে বিএনপির জনাতঙ্কের ভয়ে পল্টনে সভা করতে দেয়নি আওয়ামী লীগ। তারা এখন চামচামিতে লিপ্ত। ছাত্রলীগ নেতাদের ভারে মঞ্চ থেকে ধপাস করে ভেঙে পরেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।’ এমনি ভাবে একদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গদিও ধপাস করে ভেঙে পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সভায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান জিল্লুর সভাপতিতে সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী  কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুল হক সাঈদ, সদস্য রফিক শিকদার, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সদস্য জহিরুল হক খোকন, সিরাজুল ইসলাম সিরাজসহ কেন্দ্রীয় বিএনপি এবং জেলা বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।