গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে নিয়ে গতবারের বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের বিস্ফোরক মন্তব্য উত্তাপ ছড়িয়েছে ভোটের মাঠে। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া হাসান সরকারের ওই মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে। সাময়িক বরখাস্ত সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকরা এ মন্তব্যকে বাহবা জানালেও আজমত উল্লা খান বলছেন, হাসান সরকার মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথা বলেছেন। তিনি এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেবেন। ওই টিভি চ্যানেলকে হাসান সরকার বলেন, ‘আজমত উল্লার  বিরুদ্ধে যে নির্বাচন করবে সেই জিতবে। আজমত উল্লার বিরুদ্ধে মানুষ ভোট দেবে। তারা (আওয়ামী লীগ) প্রার্থী দিতে পারেনি।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আজমত উল্লা মুক্তিযোদ্ধা না, সে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলে। যে মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মিথ্যা কথা বলে, সে মানুষের কী সেবা করবে।’

হাসান সরকারের এমন বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন আজমত উল্লা খান। তিনি সমকালকে বলেন, ‘ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে হাসান সরকার আমার বিরুদ্ধে এমন অসত্য মন্তব্য করেছেন। আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তাঁর আপন ছোট ভাই নুরুল ইসলাম সরকার পৌর নির্বাচনে বারবার আমার কাছে হেরেছে। এ কারণে আমার নামের প্রতি তাঁর বিদ্বেষ রয়েছে। আমাকে খাটো করা, মানুষকে খাটো করে কথা বলা তাঁর চিরাচরিত অভ্যাস। আজমত উল্লা খান আরও বলেন, ‘১৯৯৫ সালে টঙ্গী পৌর নির্বাচনের আগে একবার আমাকে তিনি ভুয়া অ্যাডভোকেটও বলেছিলেন। হাসান সরকারের কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে তো আমি যে মুক্তিযোদ্ধা এটা প্রমাণ করতে হবে না, যা সত্য তা মিথ্যা দিয়ে কোনো দিনই ঢাকা যায় না।’

এ প্রসঙ্গে হাসান উদ্দিন সরকার সমকালকে বলেন, ‘আমি জানি আজমত উল্লা খান মুক্তিযোদ্ধা না। আমি যেটা জানি, সেটাই বলেছি। তাছাড়া মাঠে জরিপ করে দেখেন আজমত উল্লার জনপ্রিয়তা কেমন? নৌকা নয়, মানুষ আজমত উল্লার বিরুদ্ধে।’
এদিকে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে  মো. জাহাঙ্গীর আলমও থেমে নেই। কর্মীবাহিনী নিয়ে তিনিও বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। ইতোমধ্যে নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ওপেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের মাঠে আমি পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত। কার জনপ্রিয়তা কতটুকু সেটি প্রমাণ হবে ২৫ মে।’

আসছে নির্বাচনে আজমত উল্লা খানের বড় চ্যালেঞ্জ জাহাঙ্গীরপন্থি দলীয় নেতাকর্মীকে তাঁর পক্ষে ভেড়ানো। জাহাঙ্গীরের দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের যে সব নেতাকর্মী তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কিংবা শেষ পর্যন্ত সমর্থন করেছেন এমন ২০০ জনকে গত জুনে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। এ তালিকায় ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে দলের প্রবীণ ও নবীন নেতাকর্মী। শোকজ পাওয়া নেতার অনেকের মধ্যেই এখনও ক্ষোভ রয়েছে। এদের বেশিরভাগই এখনও জাহাঙ্গীরের পক্ষে কাজ করছেন। তাছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৭৬ কাউন্সিলরের মধ্যে ৬১ জন নির্বাচিত কাউন্সিলরই জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। এ সব জনপ্রতিনিধিকে নৌকার পক্ষে কাজ করানোও আজমত উল্লার জন্য চ্যালেঞ্জ। তবে আজমত উল্লা খানের পক্ষেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন।