- অপরাধ
- সবজি বিক্রেতা, বাসকর্মী দেন সরকারি চাকরি!
সবজি বিক্রেতা, বাসকর্মী দেন সরকারি চাকরি!

গ্রেপ্তার আকাশ ও হালিম। ছবি: সমকাল
ঢাকার আশুলিয়ার হালিম খান পেশায় সবজি বিক্রেতা। মাঝে মধ্যে জমি বিক্রির দালালিও করেন। আর জামাল উদ্দিন উত্তরাঞ্চলের বাসের কন্ডাক্টর। তাঁদের সঙ্গে আছেন দুবাইফেরত মনির হোসেন ওরফে আকাশ, অপকর্মে সিদ্ধহস্ত আবদুল আজিজ ও সচিবালয়ের একজন এমএলএসএস (অফিস সহায়ক)। এটুকু শুনে তাঁদের সাধারণ বলে মনে হলেও নিজেদের তাঁরা ভাবেন সিনিয়র সচিব বা আইজিপি! সেই পরিচয়েই অন্যদের সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন তাঁরা। চাকরিপ্রত্যাশীরাও আশ্বস্ত হয়ে তাঁদের হাতে তুলে দেন লাখ লাখ টাকা। এরপর পুরোনো গল্পের মতোই টাকা হাতিয়ে চম্পট দেন তাঁরা।
সম্প্রীতি এ চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে এসেছে তাঁদের প্রতারণার বৃত্তান্ত। গ্রেপ্তার দু’জন হলেন আকাশ ও হালিম। রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এলাকার একটি রেস্তোরাঁ থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছে পাওয়া গেছে পুলিশ কনস্টেবল, আনসার সদস্য ও ফায়ার ফাইটার (অগ্নিনির্বাপক কর্মী) পদে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে নেওয়া বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, স্ট্যাম্প, নিয়োগ পরীক্ষার ফিল্ড টেস্টের পরিচয়পত্র।ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান সমকালকে বলেন, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, কারাগার এমনকি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগের সময় চক্রটি তৎপর হয়ে ওঠে। তারা গ্রামে গ্রামে চাকরিপ্রার্থী ও তাঁদের অভিভাবককে খুঁজে বের করে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে ফাঁদ পাতে। কখনও মন্ত্রী, কখনও সচিব, কখনও অধিদপ্তরের মহাপরিচালকদের নামে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেয়। প্রার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষার প্রবেশপত্র, ব্যাংক চেক, নগদ টাকা, স্বাক্ষরিত নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প নিয়ে রাখা হয়। এরপর তাঁদের নির্দিষ্ট মাঠে বা পরীক্ষাকেন্দ্রে হাজির হতে বলে নিজেরা গাঢাকা দেয়। অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীরা ফোন করলে তাঁদের প্রশাসনের কর্মকর্তা বা সাংবাদিকদের ভয় দেখিয়ে বলা হতো, চাকরির জন্য টাকা দেওয়া মস্ত বড় অপরাধ।
ডিবি সূত্র জানায়, সর্বশেষ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় চলমান কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা টার্গেট করে মাঠে নামে প্রতারক চক্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও আইজিপির পরিচয় দিয়ে কনস্টেবল হিসেবে নিয়োগের নিশ্চয়তা দিয়ে টাকা হাতিয়ে আসছিল তারা। রাজশাহী জেলা পুলিশ এই চক্রের আবদুল আজিজ ও জামাল উদ্দিনকে বিভিন্ন আলামতসহ গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যে ২৫ ফেব্রুয়ারি মেরুল বাড্ডায় অভিযান চালান ডিবি লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি জোনাল টিমের এডিসি কায়সার রিজভী কোরায়েশী। তখন অপর দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় বাড্ডা থানার মামলায় আসামিরা রিমান্ডে আছে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, গাজীপুরের মনির হোসেন ওরফে আকাশ ২০০৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন। তার পর তিনি কখনও ফোন-ফ্যাক্সের দোকান, কখনও ঝুটের ব্যবসা করেন। এক পর্যায়ে পাড়ি জমান দুবাইয়ে। কাজ নেন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে। তবে সেখানে স্থায়ী হননি তিনি। বাংলাদেশে ফিরে প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন।
মন্তব্য করুন