- অপরাধ
- জামাতুল আনসারের আমিরের উগ্রবাদী বক্তব্যের ভিডিও উদ্ধার: র্যাব
জামাতুল আনসারের আমিরের উগ্রবাদী বক্তব্যের ভিডিও উদ্ধার: র্যাব

নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র প্রধান নেতা বা আমির আনিছুর রহমান ওরফে মাহমুদ এবং দাওয়াতী শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মাইমুনের উগ্রবাদী বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও উদ্ধার করেছে র্যাব। পাহাড়ে চলমান জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সর্বশেষ গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে একজনের মোবাইল ফোনে ছিল এ ভিডিও। সেখানে সংগঠনের দুই শীর্ষ নেতা অর্থ ও সদস্য সংগ্রহের জন্য আহবান জানিয়েছেন। এই ভিডিও থেকে নতুন চার জঙ্গিকে শনাক্ত করা হয়েছে। এদিকে আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে জঙ্গিরা এখন পাহাড়ের গোপন আস্তানা থেকে সমতলের দিকে চলে আসছে বলে জানিয়েছে গ্রেপ্তাররা।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি র্যাবের গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব -৭ চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত আরও চার জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে আল আমিন ওরফে মিলদুকের কাছে পাওয়া মোবাইল ফোনে আনিছুর রহমান ও আব্দুল্লাহ মাইমুনের বক্তব্যের ভিডিও পাওয়া যায়। তথ্যমতে, ভিডিওটি গত বছরের নভেম্বরের। ওই সময় ভিডিওটি তৈরির কাজ শুরু হয় এবং তা চলমান ছিল। এই ভিডিওটি আপাতত তাদের গ্রুপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
তিনি জানান, গত ২২ জানুয়ারি এই সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রণবীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন তার মোবাইল ফোন থেকে আট মিনিটের একটি ভিডিও উদ্ধার করা হয়। ভিডিওতে মোট ২৯ জঙ্গিকে সনাক্ত করা হয়। এবার পাওয়া ৭ মিনিট দৈর্ঘ্যের ভিডিওতে ২৩ জঙ্গিকে সনাক্ত করা হয়েছে। তাদের ১৯ জন আগের ভিডিওতেও ছিলেন। অর্থাৎ এই ভিডিওতে নতুন চার জঙ্গির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তারা হলেন- শেখ আহমেদ মামুন ওরফে রমেশ, শামিম মিয়া ওরফে বাকলাই ওরফে রাজান, নিজাম উদ্দিন হিরন ও ডা. জহিরুল ইসলাম ওরফে আহমেদ। ভিডিওর তথ্য অনুযায়ী. ডা. জহিরুল গত বছরের ৬ জুন মারা গেছেন। তার নামে জঙ্গিরা একটি ক্যাম্পও করেছে। এই দু'টি ভিডিওতে শনাক্ত জঙ্গিদের মধ্যে র্যাব এ পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনেছে। বাকি জঙ্গিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, নতুন ভিডিওটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, মূলত অর্থ ও সদস্য সংগ্রহের জন্য এই ভিডিও তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে। অপরদিকে দেশে বড় কোনো নাশকতার পর নিজেদের অস্তিত্ব দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে জানান দেয়ার উদ্দেশ্যেও এই ভিডিও তৈরি করে রাখা হতে পারে। সংগঠনটির নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তি অর্থাৎ আমির আনিছুর রহমান, অর্থ ও মিডিয়া শাখার প্রধান রাকিব, দাওয়াতী শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মাইমুনকে গ্রেপ্তার করা গেলে এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যাবে। তবে এখন পর্যন্ত জানা গেছে, দু'টি ভিডিওর নেপথ্যকণ্ঠ দিয়েছেন আল আমিন ওরফে বাহাই। তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে নিখোঁজ শিক্ষার্থী রিয়াসাত রায়হান ওরফে আবু বক্করের প্রাইভেট টিউটর। আর ভিডিও সম্পাদনা করেছেন পাভেল নামে আরেক জঙ্গি।
ধর্মান্তরিত তরুণের জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, পার্থ কুমার দাস ২০১৮ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ঢাকার কাকরাইলে চাকরি করার সময়ে পলাতক জঙ্গি সিরাজের মাধ্যমে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। পরে তাকে বলা হয়, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে চাকরিসহ দাওয়াতী কার্যক্রমে তাকে নেওয়া হবে। সেই কথা অনুযায়ী তিনি পাহাড়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছিলেন।
পাহাড় থেকে জঙ্গিদের সমতলে চলে আসার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্রেপ্তাররা বলছে, আমিরের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজেদের নিরাপত্তার জন্য আপাতত তারা আত্মগোপনে থাকছে। এখন তারা শুধু আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে সমতলে এসেছে না অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে তা পরে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে। সর্বশেষ গ্রেপ্তার চারজনের সঙ্গে আরও চার-পাঁচজনের একটি দল ছিল। তারা বান্দরবানের গহিন থেকে চারদিন হেঁটে শহরে আসে। ভেঙে ভেঙে তারা চট্টগ্রামের দিকে আসছিল।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মানবিক উদ্যোগসহ নানারকম ভালো কাজের নামে তারা বিভিন্নজনের কাছ থেকে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করে।
র্যাব জানায়, গত বছরের ২৩ আগস্ট কুমিল্লা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আট তরুণ নিখোঁজের সূত্র ধরে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা এবং অন্যান্য ব্যাটালিয়ন গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। একপর্যায়ে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের খোঁজ পাওয়া যায়। এই সংগঠনের ৫৫ জন সদস্য পাহাড়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকী চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ছত্রছায়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের গহীন অরণ্যে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে গত ৩ অক্টোবর থেকে র্যাব ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলছে। র্যাবের অভিযানে এ পর্যন্ত ৫৯ জন জঙ্গি এবং জঙ্গি প্রশিক্ষণে সহায়তার অভিযোগে ১৭ জন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়াও র্যাব এই সংগঠনের দুই সদস্যকে জঙ্গিবাদের পথ থেকে ফিরিয়ে এনে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে।
মন্তব্য করুন