- অপরাধ
- পলাতক জঙ্গিদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছে জামাতুল আনসার: র্যাব
পলাতক জঙ্গিদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছে জামাতুল আনসার: র্যাব

ছবি: র্যাবের সৌজন্যে
নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র শুরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিবসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। সোমবার রাতে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তার অপর দু’জন হলেন- জাকারিয়া হোসাইন ও আহাদুল ইসলাম মজুমদার ওরফে সিফাত ওরফে মামিদ। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল ও নগদ ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ কিছু উগ্রবাদী লিফলেট উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব বলছে, গ্রেপ্তার রাকিব ২০১৫ সালে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে অবস্থানকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আনসার আল ইসলামের শীর্ষ এক জঙ্গির সঙ্গে পরিচিত এবং জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। পরে ২০১৬ সালে দেশে ফিরে যোগ দেয় ওই জঙ্গি সংগঠনে। জামাতুল আনসার প্রতিষ্ঠার সময় থেকে সে সংগঠনের অর্থ সংগ্রহ ও সরবরাহ এবং সমতলের যাবতীয় সাংগঠনিক কার্যক্রমের দেখাশোনা করত। পাহাড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান শুরু হলে সংগঠনের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদের নির্দেশনায় সে সমতলের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে থাকে। এ সময় সে আত্মগোপনে থাকা অন্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সংগঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। এর আগে সে আনসার আল ইসলামের সদস্য থাকায় ওই সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে আবারও সংগঠিত হওয়ার পরিকল্পনা করছিল জামাতুল আনসার।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা জানতে পারে, রাকিবসহ কয়েক জঙ্গি গাজীপুর হয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুরের দিকে যাচ্ছে। এরপর সোমবার রাতে র্যাব-১ ও ৭ এর যৌথ দল গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা থামিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় আশেপাশে থাকা তাদের কিছু সদস্য পালিয়ে যায়।
তিনি জানান, গ্রেপ্তার রাকিব দেশে ফিরে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি গার্মেন্টস পণ্যের ব্যবসা শুরু করে। আনসার আল ইসলাম থেকে পাওয়া প্রায় ১৫ লাখ টাকা তার কাছে জমা ছিল। সে রাজধানীর মুগদা এলাকায় থাকার সময়ে হিজামা সেন্টারের আড়ালে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়েছে। ঢাকায় শুরা কমিটির সব সভা তার তত্ত্বাবধানে হত। এর আগে গ্রেপ্তার সংগঠনের শূরা সদস্য মায়মুনসহ অন্যরা দেশ-বিদেশ থেকে সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে তার কাছে জমা রাখত। সে সংগঠনের অর্থায়নে মুন্সিগঞ্জে গবাদি পশুর খামার করেছে। তথাকথিত হিজরতের নামে ঘরছাড়া অধিকাংশ জঙ্গি সদস্য তার খামারে বিভিন্ন সময় অবস্থান করত। সেখানে তাদের শারীরিক কসরত ও তাত্ত্বিক জ্ঞান দেওয়া হত। সংগঠনের আমীরের নির্দেশনায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, অস্ত্র ও রসদ কেনাসহ সংগঠনের অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য অর্থ সরবরাহ করত রাকিব। শুকনা খাবারসহ পাহাড়ে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে পার্বত্য প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠাত। এ ছাড়াও স্বেচ্ছায় নিরুদ্দেশ সদস্যদের পাহাড়ে পাঠানোর কার্যক্রম সে দেখাশোনো করত। সে বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ পরিচালনা ও সাংগঠনিক কাজে পার্বত্য অঞ্চলের প্রশিক্ষণ শিবিরে গেছে বলে জানা যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে পাহাড় থেকে পালানোর সময় তার কাছে সংগঠনের ২০ লক্ষাধিক টাকা জমা ছিল। সে এরইমধ্যে সংগঠনের বিভিন্ন কাজে ৭ লক্ষাধিক টাকা খরচ করেছে বলে জানায়।
একজন শিক্ষক, আরেকজন ছাত্র: গ্রেপ্তার জাকারিয়া ২০০৮ সালে স্থানীয় মাদ্রাসা থেকে হিফজ সম্পন্ন করে ফরিদপুরের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করত। ২০২১ সালে সে রাকিবের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগ দেয়। পরিবারকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে যাওয়ার কথা বলে সে বাড়ি থেকে বের হয়। ২০২২ সালের প্রথম দিকে সে রাকিবের মাধ্যমে বান্দরবানের থানচি ও বাকলাইপাড়া হয়ে কেটিসিতে যায়। সে পাহাড়ে গিয়ে অস্ত্র চালানোসহ বিভিন্ন ধরণের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয়।
অপর জঙ্গি আহাদুল কুমিল্লার একটি কলেজে অনার্স চতুর্থ সেমিস্টারে পড়ছে। সে ২০১৮ সালে এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গেলে সংগঠনের আমীর মাহমুদের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে তার মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে সংগঠনে যোগ দেয়। সে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়। প্রথমে সে প্রায় দুই মাস আমীর মাহমুদের বাসায় থেকে তার ব্যক্তিগত সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। একপর্যায়ে বান্দরবানের থানচি হয়ে কেটিসিতে যায় এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয়। তারা দুজনই পরে সমতলে এসে আত্মগোপন করে।
আমির দেশেই আছে: সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, যতটুকু জানতে পেরেছি, সংগঠনটির আমির দেশেই আছে। তার নির্দেশেই সদস্যরা সব করছে। তাকে আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দারা কাজ করছেন।
এদিকে জঙ্গি সংগঠনটির কাছে অস্ত্র আছে। নির্বাচন সামনে রেখে কোনো রাজনৈতিক দল তাদের কাজে লাগাতে পারে কি না? জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল যদি ফায়দা নেওয়ার জন্য জঙ্গিদের কাজে লাগায়, এটা তাদের ভুল সিদ্ধান্ত। দেশের জনগণ তাদের মেনে নেবে না। নির্বাচন ঘিরে জঙ্গি, সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গোয়েন্দারা নজদারিতে রেখেছেন। তথ্য পেলেই তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত এমন কোনো তথ্য নেই যে রাজনৈতিক দল তাদের ব্যবহার করবে।’ নির্বাচন ঘিরে জঙ্গি তৎপরতার কোনো তথ্য নেই বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, দেশ-বিদেশ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জঙ্গিদের কাছে টাকা আসছে। এ ব্যাপারে আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। পার্বত্য চট্টগ্রামেও একই মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়।
মন্তব্য করুন