- অপরাধ
- পুলিশ চায় ডিএনএ পরীক্ষা, এড়াতে চান সেই ‘নবাব’
পুলিশ চায় ডিএনএ পরীক্ষা, এড়াতে চান সেই ‘নবাব’

ঢাকার নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ বাহাদুরের নাতি দাবি করা সেই আলী হাসান আসকারির ডিএনএ পরীক্ষা করতে চায় পুলিশ। আসকারির আপন ভাইয়েরা স্বীকার করেছেন, তারা নবাবের বংশধর নন। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) তদন্তেও প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, আসকারি প্রতারক। নবাব সলিমুল্লাহর পরিবারের কেউ নন তিনি। অথচ নবাব পরিবারের সদস্য দাবি করে আসছেন আসকারি।
এটি আরও নিশ্চিত হতে আসকারির ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে গত জুনে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আবেদন করেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। পুলিশের তৎপরতায় আসকারি নিজেই ডিএনএ পরীক্ষা দীর্ঘায়িত করার কৌশল নিয়েছেন। সিটিটিসির আবেদনের বিপরীতে তিনি ঢাকা জজকোর্টে রিভিশন দাখিল করেছেন। এর শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী অক্টোবরে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় ২০২০ সালের অক্টোবরে আসকারির বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা হয়। ওই মামলার তদন্ত করছে সিটিটিসি। পরে আরও কয়েকটি থানায় তাঁকে আসামি করে মামলা ঠোকেন ভুক্তভোগীরা। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আলী হাসান আসকারির প্রকৃত নাম কামরুল হাসান হৃদয়। এই নাম বদল করেছেন নিজেই। ২০২০ সালের অক্টোবরে আসকারি গ্রেপ্তারের পর তাঁর প্রতারণা নিয়ে সে সময় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
মামলার তদারকি কর্মকর্তা সিটিটিসির সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার তানভীর রহমান সমকালকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, আসকারি নবাব পরিবারের সদস্য পরিচয় দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তদন্তের অংশ হিসেবে তাঁর আপন ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, নবাব পরিবারের সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। আসকারির ডিএনএ প্রোফাইল তাঁর ভাইদের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে জানিয়ে সিটিটিসি কর্মকর্তা তানভীর বলেন, ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ডিএনএ পরীক্ষা করলে আসকারির আসল পরিচয় বেরিয়ে আসবে, এ কারণে তিনি আবেদনের বিপরীতে রিভিশন দাখিল করেছেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আসকারি ছেলেবেলায় মা-বাবার সঙ্গে ভারত থেকে এসে ঢাকার ইসলামপুরে থাকতে শুরু করেন। সে সময় তিনি ইসলামপুরের এক কাপড়ের দোকানে কাজ করতেন। কাপড় ব্যবসায়ীর বাড়িতেই থাকতেন। পরে তিনি নবাব সলিমুল্লাহর পরিবার ও বংশ সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি নবাবের বংশধর দাবি করে বসেন। আসকারি ওরফে কামরুলের সাত ভাই ও দুই বোনের মধ্যে দুই ভাই সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলী মারা গেছেন। আমিনুল ইসলাম নামে এক ভাই থাকেন কামরাঙ্গীরচরে। বাকি তিন ভাই রাশেদ ওরফে রহমত আলী ওরফে রাজা, আহাম্মদ আলী ও বরকত আলী ওরফে রানা আসকারির সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আসকারি কোথাও পরিচয় দেন তিনি নবাব সলিমুল্লাহর মেয়ের সন্তান। অর্থাৎ সলিমুল্লাহ তাঁর নানা। প্রচার করতেন দুবাইয়ে স্বর্ণের কারাখানার মালিক তিনি। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মালিকানা রয়েছে বলেও দাবি করতেন। তাঁর পরিবার ঢাকা ছাড়ার পর নেদারল্যান্ডসে স্থায়ীভাবে বাস করছে। নবাব সলিমুল্লাহর স্মৃতিচারণ করতে ঢাকা ফিরেছেন বলে দাবি করতেন। এসব বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতেন নিয়মিত। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে মন্ত্রী-এমপি, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে ছবি তুলে সেগুলো ফেসবুকে পোস্ট করতেন। প্রতারণার কাজে এসব ছবি ব্যবহার করতেন। নবাব এস্টেটের সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করতেই নবাব পরিবারের সদস্য দাবি করছেন তিনি। ঢাকার নবাব এস্টেটের সম্পত্তির মধ্যে শাহবাগের একটি অংশের মোতাওয়াল্লি হওয়ার জন্য ভূমি অফিসে দুটি মিসকেস করেন আসকারি। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জেও নবাব এস্টেটের কিছু সম্পত্তির মোতাওয়াল্লি হওয়ার জন্য তিনটি মিসকেস করেন। মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট করেন। জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টে স্থায়ী ঠিকানা দেখিয়েছেন আহসান মঞ্জিল।
নবাব পরিচয়ে দেশে-বিদেশে চাকরি দেওয়ার নামে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন আসকারি। অন্তত ৪০০ ব্যক্তিকে সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চাকরি দেওয়ার কথা বলে শুরুতে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা করে নিয়েছেন।
তারা যখন প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন, তখন ভুক্তভোগীরা মামলা করেন আসকারির নামে। ওই মামলায় ২০২০ সালের অক্টোবরে রাজধানীর মিরপুর থেকে আসকারিকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। একই সঙ্গে তাঁর আপন তিন ভাই রাশেদ, আহাম্মদ আলী ও বরকত আলীকেও ধরা হয়।
মন্তব্য করুন