প্রতারণার মামলায় বছর পাঁচেক আগে কারাগারে যায় তামান্না। ধরা পড়ার পরই আসল নাম গোপন রেখে হৃদি মাহাজাবিন পরিচয় দেয়। কিছুদিন বাদে জামিনে মুক্তি পেয়ে সে ভারতে গিয়ে লিঙ্গ পরিবর্তন করে। আবরার জাওয়ার তন্ময় নাম নিয়ে আরেক রূপান্তরিত পুরুষ আহিয়ান শিশিরের সঙ্গে ভাব জমায়। শরিফুল ইসলামের সঙ্গে মিলে তিনজন গড়ে তোলে প্রতারক চক্র। কুয়েতের শ্রমিক ভিসা এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) কার্ড জালিয়াতি করে বিদেশে পাঠানোর নামে হাতিয়ে নেয় অর্থ।

চক্রের হোতা শরিফুল ইসলাম, তার সহযোগী রূপান্তরিত তন্ময় ও শিশিরকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। শুক্রবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং ঢাকার ভাটারা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৪০টি পাসপোর্ট, ৯টি জাল ভিসা ও ভুয়া বিএমইটি কার্ডের ফটোকপি জব্দ করা হয়।

শনিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ মিন্টো রোডের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।

শরিফুলের বাড়ি লালমনিরহাটের কোনিয়াগাছ। ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার  হাটপাগলা গ্রামে তন্ময় ও নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার চেন্নি গ্রামে শিশিরের বাড়ি হলেও সবাই ঢাকায় বসবাস করত। ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, তন্ময় ওরফে তামান্নার এলাকায় বিয়ে হয়েছিল, সেখানে ৯ বছর বয়সী ছেলে আছে। ২০১৮ সালের পর সে লিঙ্গ পাল্টায়। শিশিরের নাম ছিল শারমিন।

ডিবি জানায়, চক্রটি ছদ্ম নামে ফেসবুক পেজ খুলে কুয়েতে লোক পাঠানোর কথা বলে বিজ্ঞপ্তি দেয়। যোগাযোগ করলে তাদের সঙ্গে ভিসা, বিএমইটি কার্ডসহ কুয়েত যাওয়ার পুরো প্যাকেজের চুক্তি করে। চক্রের হোতা শরিফুল ভুয়া এনআইডি দিয়ে গুলশান, বারিধারা ও ভাটারা এলাকায় ডেকোরেশনসহ অফিস ভাড়া নিত। প্রতারণা করার পর সেসব ঠিকানা থেকে পালিয়ে যেত।

প্রতারণার শিকার বেশ কয়েকজন ডিবি কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জানান, বিদেশ পাঠানোর কথা বলে তাদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেন জানান, ফেসবুকের বিজ্ঞপ্তি দেখে যোগাযোগ করে চুক্তি অনুযায়ী গত জুনে তিনি কয়েক ধাপে দেড় শতক ভিটে জমি বিক্রির ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দেন শরিফুলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।

চক্রের সদস্যরা কুয়েতের ভিসা, বিএমইটি কার্ডসহ ১২ জুলাই ফ্লাইটের দিন দেয়। উড়োজাহাজের টিকিট সংগ্রহের জন্য ৬ জুলাই গুলশান-১ এ চক্রের অফিসে গিয়ে তালা দেওয়া পান।