অভিযানের নামে ডাকাতি
আদালতে অপরাধ স্বীকার, পুলিশের তদন্তে নির্দোষ
প্রতীকী ছবি
বকুল আহমেদ
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৬:০০
মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে বাসায় ডাকাতির অভিযোগে করা মামলার সব আসামিকে ‘নির্দোষ’ উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। যদিও এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনজন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন আদালতে।
২০২৩ সালের ৬ জুন রাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ঢাকা মহানগর দক্ষিণের লালবাগ সার্কেলের তৎকালীন পরিদর্শক মোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জে ব্লকের ১ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির সাততলায় ওয়াসে আনোয়ার নামের এক ব্যক্তির বাসায় অভিযান চালানো হয়। তবে তারা সেখানে মাদক পাননি। পরে বাসা থেকে ২৩ হাজার টাকা লুট করার অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগে আভিযানিক দলটির বিরুদ্ধে গত বছরের ১৪ জুন ভাটারা থানায় ডাকাতি মামলা করেন আনোয়ার।
এজাহারে বলা হয়, অজ্ঞাতনামা সাত-আটজন তাঁর বাসায় প্রবেশ করে। তাঁর নাম ‘ইভান’ কিনা জানতে চায় তারা। নাম ওয়াসে আনোয়ার জানানোর পরও তল্লাশি শুরু হয়। এক পর্যায়ে তাঁর কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করে ওই ব্যক্তিরা। টাকা দিতে পারবেন না জানালে ঘরে থাকা ২৩ হাজার টাকা ও একটি হেডফোন নিয়ে বেরিয়ে যায়।
মামলার তদন্তভার পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের লালবাগ বিভাগ। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পেয়ে ডিএনসির এএসআই আবদুল হামিদ, ভাড়া করা মাইক্রোবাসের চালক জাহিদ হাসান, সোর্স দেলোয়ার হোসেন ও জসিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। ৭ জুলাই ভোরে পরিদর্শক মোফাজ্জল হোসেন আটক হন। তাঁকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে সন্ধ্যায় ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ আছে, মোফাজ্জল হোসেন ডিবির সে সময়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের শ্বশুরপক্ষের আত্মীয় হওয়ায় তাঁকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।
৭ জুলাই আসামি আবদুল হামিদ, দেলোয়ার ও জসিমকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করা হয়। এতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আসামিরা সরকারি কর্মচারী পোশাক পরে মামলার বাদীর বাসায় ডাকাতির ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনার সঙ্গে আরও অজ্ঞাত একাধিক আসামি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
রিমান্ডে তিন দিন ডিবি কার্যালয়ে আবদুল হামিদকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ১১ জুলাই তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। আসামিকে হাজির প্রসঙ্গে করা আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় আসামি মামলার ঘটনা এবং জড়িতদের সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃত ও সহযোগী আসামিদের ওই মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দেলোয়ার, জসিম ও জাহিদ ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
গত নভেম্বরে এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এতে তদন্ত কর্মকর্তা শাখাওয়াত উল্লেখ করেছেন, আসামিদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিদর্শক মোফাজ্জলের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয় আনোয়ারের বাসায়। কিন্তু টাকা দাবি এবং টাকা নেওয়ার অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। পরে পরিদর্শক মোফাজ্জলসহ আট আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আদালত আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। বাকি সাতজন হলেন– ডিএনসির এএসআই আবদুল হামিদ, সিপাহি আল-আমিন, শাকিল হোসেন ও শাহরিয়ার হোসেন, সোর্স দেলোয়ার ও জসিম এবং চালক জাহিদ।
মোফাজ্জল বর্তমানে ডিএনসির নরসিংদী জেলা কার্যালয়ে কর্মরত। সিপাহি আল-আমিন, শাকিল হোসেন ও শাহরিয়ার হোসেন হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেওয়ার পর নির্ধারিত তারিখের মধ্যে ঢাকার নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে তারা জামিনে বের হন। তাদের আত্মসমর্পণ ও কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।
এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন সমকালকে বলেন, তদন্ত শেষে পুলিশ প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিবেদনটি অভিযোগপত্র, নাকি চূড়ান্ত প্রতিবেদন– এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আদালত থেকে জেনে নেওয়ার কথা বলেন শাখাওয়াত হোসেন। চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরও বিষয়টি বলতে চাননি এই কর্মকর্তা। মামলার বাদী ওয়াসে আনোয়ার সমকালকে বলেন, ‘ফাইনাল রিপোর্ট দাখিলের আগে আমি জানতাম না। আদালত থেকে নোটিশ পাওয়ার পর জেনেছি।’
- বিষয় :
- মাদকবিরোধী অভিযান