ক্ষতিপূরণ বেশি পেতে উঠছে ঘরবাড়ি
মানিকগঞ্জে অধিগ্রহণ করা নাল জমিকে ভিটি জমি হিসেবে দেখিয়ে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য রাতারাতি গড়ে তোলা হয়েছে এসব বাড়িঘর -সমকাল
জাহাঙ্গীর আলম, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ)
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০০:৪০
ঢাকার ধামরাইয়ের কালামপুর থেকে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া হয়ে টাঙ্গাইল পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্ত করা হবে। এ জন্য দু’পাশের জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। টাঙ্গাইল অংশের মালিকরা অবকাঠামো বা জমির দাম ও ক্ষতিপূরণের চিঠি পেয়ে টাকা নিচ্ছেন। এ অংশে অধিগ্রহণ শেষ পর্যায়ে। এরপর সাটুরিয়া ও ধামরাইয়ের মালিকরা চিঠি পাবেন। এমন খবরে বেশি টাকা পাওয়ার আশায় অনেকে দু’পাশে রাতারাতি বাড়ি নির্মাণ শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কের দু’পাশে ২০ ফুট লম্বা ও ১৪ ফুট চওড়া দোচালা টিনের ঘর তোলা হয়েছে। অন্য ঘরের আকার ১২ ফুট লম্বা ও চওড়া ১০ ফুট। এগুলো রান্নাঘর। চার ফুটের টয়লেটও রয়েছে। এভাবে পূর্ণাঙ্গ বসতবাড়ি দেখাচ্ছেন জমির মালিকরা। সাটুরিয়ার উত্তর কাউন্নারা গ্রামের ৪০ শতাংশ নিচু ফসলি (নাল) জমির ওপর এমন পাঁচটি বাড়ি তোলা হয়েছে।
সদ্য নির্মিত প্রতিটি বাড়ির সামনে লাগানো হয়েছে নারকেল, পেয়ারা, আমসহ ফলদ গাছ। চাষ করা হয়েছে সবজি। এসব বাড়িতে কেউ থাকেন না। দেখে মনে হবে আদর্শ বাড়ির প্রদর্শনী হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিগ্রহণকৃত জমির অতিরিক্ত দাম পেতে এমন কাজ করছেন মালিকরা।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের কালামপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া হয়ে টাঙ্গাইল পর্যন্ত মহাসড়কটি প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। এ জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে। এসব জমির দাম বাড়াতে নাল জমিকে ভিটে দেখাতে রাতারাতি বসতবাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। কেবল কাউন্নারা নয়, যে যে অংশে জমি অধিগ্রহণ হবে, সেখানেই এভাবে বাড়িঘর তোলা হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, দালাল চক্র প্রতারণার জন্য জমির মালিকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন। অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে টাকার অংশ পাওয়ার চুক্তি করছেন তারা। দালালরা প্রতিদিনই দামি গাড়িতে এসে নিজেদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের লোক পরিচয় দিয়ে মালিকদের ঘর তোলায় উৎসাহ দিচ্ছেন।
সওজ মানিকগঞ্জ সূত্র জানায়, ৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। কিছু নতুন সেতু, কালভার্ট, রিটেইনিং ওয়াল ও ইউলুপও থাকবে। এ জন্য প্রায় ৭৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। সাটুরিয়া অংশে জরিপ করে লাল নিশানা লাগিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এরপরই জমি মালিকদের অনেকে বাড়িঘর তোলা শুরু করেন।
এসব বাড়ি অনেক আগের দেখাতে কম দামে পুরোনো টিন কিনে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাটুরিয়া বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, দু-তিন মাস ধরে পুরোনো টিনের চাহিদা বেড়েছে। জানা গেছে, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ফজলুর রহমান ও সজীব নামে দু’জন সাটুরিয়ায় এসে মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। তারা জমি অধিগ্রহণ বিভাগে চাকরি করেন বলে জানাচ্ছেন। তারাই মালিকদের পরামর্শ দিচ্ছেন ফসলি জমিতে বাড়ি তোলার জন্য। জমির দামের সঙ্গে স্থাপনার জন্য অতিরিক্ত টাকা পাইয়ে দেবেন তারা। সে টাকার অর্ধেক তারা নেবেন। তবে এ দু’জনকে ফোনকল দিলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে কয়েকজন জমির মালিকের বক্তব্য জানতে চাইলে তারা কিছু বলতে রাজি হননি। সাটুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন পিন্টু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এভাবে বাড়ি নির্মাণের বিষয়টি জানা নেই মানিকগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার আলমের। তবে তিনি বলেন, এভাবে জমির দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা অপরাধ ও প্রতারণা। সড়কের ম্যাপ করার সময় ভিডিও করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ বিভাগের কাছে সেগুলো হস্তান্তর করা হবে। ভিডিও দেখে জমি ও স্থাপনার ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করলে কেউ ফাঁকিবাজি করতে পারবেন না।