- ঢাকা
- ভুয়া সিল দেখিয়ে তৈরি হয় ভেজাল জুস–ক্যান্ডি
ভুয়া সিল দেখিয়ে তৈরি হয় ভেজাল জুস–ক্যান্ডি

ছবি: সমকাল
ভেজাল জুস পানে এক কিশোরীর অসুস্থ হওয়ার সূত্র ধরে নকল খাদ্য উৎপাদনে জড়িত ১০ জনকে আটক করেছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে ঢাকা ও গাজীপুরের কয়েকটি এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় সন্ধান মেলে এসব নকল পণ্য উৎপাদনকারী চারটি কারখানার। সেখান থেকে জুস–ক্যান্ডিসহ বিপুল পরিমাণ নানা খাদ্যপণ্য জব্দ করা হয়। এসব পণ্যের গায়ে ব্যবহার করা হয় বিএসটিআইয়ের ভুয়া সিল। বুধবার সন্ধ্যায় মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিবি-মিডিয়া) মো. ইব্রাহিম খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গাজীপুর মহানগরের গাছা থানাধীন আধেপাশা এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ আলমের মেয়ে মিথিলা আলম (১৩) সেলিনা মেমোরিয়াল একাডেমিতে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ১০–১২ দিন আগে সে বিদ্যালয়ের পাশের দোকান থেকে এক বোতল লিচুর জুস কিনে পান করে। এর পর পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয় মিথিলায়। দফায় দফায় বমি হয় তার। ওই কিশোরী লিচুর জুস পান করেছিল যে বোতল থেকে এতে স্টিকার ছিল লিমন ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানির। চিকিৎসায় মেয়েকে সুস্থ করার পর কোম্পানিটির বিরুদ্ধে গাছা থানায় অভিযোগ দেন ফিরোজ আলম।
পুলিশ কারখানার সন্ধানে নেমে ওই কোম্পানিটির স্থানীয় ডিপোর মালিক ইসমাইল হোসেনকে আটক করে। তিনি পুলিশকে জানান, মোস্তাফিজুর রহমান কুদ্দুস নামে এক ব্যক্তি অনুমোদনহীন এসব পণ্যের উৎপাদনকারী ও বিতরণকারী। আটক করার পর মোস্তাফিজ জানান, সাভারের আশুলিয়ার কারখানায় নকল খাদ্য, পানীয় উৎপাদনের পর নিজেই বাজারজাত করেন। এ ছাড়াও ঢাকার বসিলা, বেরাইদ ও শনির আখড়ায় আরও তিনটি কারখানার সন্ধান পায় গাজীপুর মহানগর পুলিশ। এর মধ্যে বসিলায় অবস্থিত কোম্পানিটির প্রধান কারখানাটি।
উপকমিশনার মো. ইব্রাহিম খান বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, গাজীপুর মহানগর ডিবি ও গাছা থানার পুলিশ সদস্যরা যৌথ অভিযানে যান। মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত গাছার কামারজুরি ও ঢাকার বসিলা, আশুলিয়া, বেরাইদ ও শনির আখড়া থেকে ১০ জনকে আটক করেন তাঁরা।
তারা হলেন– কারখানার মালিক মোস্তাফিজুর রহমান, ইসমাইল হোসেন, মো. খায়রুল ইসলাম বুলবুল, মোশারফ হোসেন, রবিউল ইসলাম, মাসুদ রানা, রফিকুল ইসলাম, খবির উদ্দিন, জীবন রহমান ও হাফিজুর রহমান।
দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ইব্রাহিম খান জানান, চারটি কারখানা থেকে ৫৭ হাজার ৩২০ লিটার ম্যাংগো জুস, ৪৫ হাজার ২৫৬ লিটার অরেঞ্জ ও লিচি ড্রিংক, ৩৯৫ বয়াম ক্যান্ডি, ২ হাজার ৫০০ পিস আচার ক্যান্ডি, আইস ললি জব্দ করা হয়। এ ছাড়া নানা ধরনের প্যাকেজিং লেভেল, খালি বয়াম, জুস কন্টেইনার, মেশিনারিজ, কেমিকেল, প্রিজারভেটিভ, কৃত্রিম রং, ফ্লেভার ও খালি পলিপ্যাকও জব্দ করেন। এসব পণ্যের গায়ে বিএসটিআইয়ের ভুয়া সিল ব্যবহার করা হয় বলেও জানান তিনি।
পুলিশ জানায়, মোস্তাফিজের মালিকানাধীন কারখানায় উৎপাদিত অনুমোদনহীন পণ্যের মধ্যে রয়েছে–গ্রীণ স্টার সয়াবিন তেল, গ্রীণ স্টার ডেইরি মিল্ক, হজম ক্যান্ডি, পিনাট ক্যান্ডি, কফিকো ক্যান্ডি, ম্যাংগো ড্রিংকস, সরিষার তেল, চিনিগুঁড়া সুগন্ধি চাল, স্টিক, নুডুলস, লাচ্ছা সেমাই, চকোচকো, কুকিস বিস্কুট, বাটার টোস্টসহ নানা পণ্য।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার এ বিষয়ে সমকালকে বলেন, ওই কারখানাটির বিএসটিআইয়ের কোনো অনুমোদন নেই। গুণগত মানেরও কোনো সনদ নেই। অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে এসব শিশুখাদ্য উৎপাদন করা হতো। অভিযান চালানোর পর প্রধান কারখানাটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের অভিযোগে গাছা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) উত্তম কুমার সূত্রধর বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আটক ১০ জনকে বুধবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
মন্তব্য করুন