ঢাকা বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

ফরিদপুরে নির্মাণাধীন ব্রিজের মাটি ধসে তিন শ্রমিকের প্রাণহানিতে ঠিকাদারকে দুষছেন এলাকাবাসী

ফরিদপুরে নির্মাণাধীন ব্রিজের মাটি ধসে তিন শ্রমিকের প্রাণহানিতে ঠিকাদারকে দুষছেন এলাকাবাসী

নির্মাণাধীন ব্রিজের মাটি ধস

ফরিদপুর অফিস ও সদরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৩ | ০২:৪৬ | আপডেট: ০১ জুন ২০২৩ | ০৫:১৫

ফরিদপুরের সদরপুরে নির্মাণাধীন ব্রিজের মাটি ধসে তিন শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দুষছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন- অনিরাপদ পরিবেশে কাজ করানোর কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। কয়েকজন শ্রমিক অভিযোগ করেছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার মাটি সরাতে বলা হলেও তারা এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়নি, বরং শ্রমিকদের হুমকি দিয়ে কাজে বাধ্য করছিল। ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মাণের কাজ পায় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফের ভাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আসিফ ইমতিয়াজ। সেতুটির দরপত্র মূল্য ছিল ৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। তিন শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়ে কথা বলতে আসিফ ইমতিয়াজের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

দুর্ঘটনার বিষয়ে এলাকার বাসিন্দা তোতা ফকির বলেন, সেতুর পাইলিংয়ের জন্য খালের পাশে তাঁর পাকা ভবনের কিনার ঘেঁষে গভীর গর্ত করে মাটি কাটা হয়। এ সময় তিনি ঠিকাদারের কাছে আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু ঠিকাদার তাঁর কথা শোনেননি। 
কয়েকজন শ্রমিক জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার মাটি সরানোর কথা বলা হলেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তারা উল্টো শ্রমিকদের হুমকি দিয়ে কাজে বাধ্য করছিল। 

বুধবার ভাষাণচর ইউনিয়নের জমাদার ডাঙ্গী এলাকায় সেতুর কাজ করার সময় মাটি ধসে তিন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে। এতে আহত হন আরও চারজন। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সদরপুর উপজেলার আমীরাবাদ এলাকার ভুবনেশ্বর নদ থেকে শুরু হয়ে একটি খাল কবিরহাট এলাকার দিকে গেছে। ওই খালের জমাদার ডাঙ্গী এলাকার তোতা ফকিরের বাড়ির সামনে সেতুটির নির্মাণকাজ করছিলেন শ্রমিকরা। সেতু নির্মাণের জন্য গভীর গর্ত করে পাইলিং করা হয়। গর্তের মাটি খালের পাড়ে তোতার বাড়ির কিনার ঘেঁষে স্তূপ করে রাখা হয়েছিল। বৃষ্টিতে সেই মাটির কিছু অংশ ধসে খালে পড়ে। বুধবার খালে নেমে সেই মাটি অপসারণ করছিলেন শ্রমিকরা। এ সময় খালের পাশে স্তূপ করে রাখা মাটি এবং খালপাড়ের মাটি ধসে সাত শ্রমিক চাপা পড়েন। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। বাকি চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, নির্মাণ কাজটি এলজিইডির, কাজেই কথা তো তাঁকেই (এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী) বলতে হবে। এত বড় দুর্ঘটনার দায় আমরা কেউ এড়িয়ে যেতে পারি না। সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এত বড় দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।

বুধবার বিকেলে এ বিষয়ে ডিসি অফিসে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন কয়েকজন সাংবাদিক। এ সময় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং ‘কথা বলতে বাধ্য নন’ বলে জানান। 

মাটি চাপায় নিহত শ্রমিকরা হলেন– বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার উদয়পুর গ্রামের আল আমিন খাঁর ছেলে জাবেদ খাঁ (২৩), ফরিদপুর সদর উপজেলার কবিরপুর গ্রামের আফজাল শেখের ছেলে অন্তর শেখ (২২) ও কুফুরদিয়া গ্রামের ইসমাইল মীরের ছেলে জুলহাস মীর (২১)। আহতরা হলেন– ফরিদপুর সদরের কুজুরদিয়া গ্রামের সুমন খান (২৭), শোলাকুণ্ডু গ্রামের ওয়াহিদুল ইসলাম (৩০), ঘোড়াদহ গ্রামের রাসেল শেখ (২৫) ও নজরুল ইসলাম (৩০)। তাঁদের সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। 

সদরপুর থানার ওসি সুব্রত গোলদার বলেন, মরদেহের সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃত শ্রমিকদের স্বজনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


/ওআর/ 


whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×