মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথা
ডা. মো. আব্দুল হাফিজ (শাফী)
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০১:৩২
মাথাব্যথা নিয়ে আমরা অনেকেই সচেতন নই। অন্য সব রোগের মতো আমরা মাথাব্যথাকে এতটা গুরুত্ব দিই না, যতক্ষণ না পর্যন্ত এটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যত্যয় না ঘটায়। মাইগ্রেন সেই রকমেরই মাথাব্যথা। টেনশন টাইপ মাথাব্যথার মতো মাইগ্রেনের মাথাব্যথা প্রায় প্রতিদিনই হয়। না, তবে মাইগ্রেন অ্যাটাক করে সাধারণত হঠাৎ করে, মাঝেমধ্যে যাকে পিরিয়ডিক অ্যাটাক বলে। দেখা যায়, মাসে একবার বা সপ্তাহে একবার বা দু-তিন মাস পরপর এই তীব্র মাথাব্যথা হয়। ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে এটা তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। অতিরিক্ত টেনশন, দুশ্চিন্তা-অস্থিরতা হতে পারে মাইগ্রেনের কারণ। যারা সব সময় ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে চিন্তাগ্রস্ত থাকেন বা দুশ্চিন্তায় ভোগেন, তাদের মাঝে মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথার প্রকোপ বেশি লক্ষণীয়। এ ছাড়া সেরেটোনিন নামক কেমিক্যালের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলেও এই ব্যথা হয়ে থাকে। এ ছাড়া যেসব নারী দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করেন, তাদের মাঝেও মাইগ্রেনের লক্ষণ বেশি দেখা যায়। মাইগ্রেনের ব্যথা মাঝারি থেকে জটিল ধরনের হয়। সাধারণত এটি মাথার একটি ভাগে হয়। পুরো মাথা ধরে ব্যথা মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে কম হয়। তবে দীর্ঘ সময় মাথাব্যথা স্থায়ী হলে পুরো মাথায় ব্যথা হয়। এই মাথাব্যথা চার ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মনে হয়, মাথাটা ছিঁড়ে যাবে। মাইগ্রেনের ব্যথার আরেকটি লক্ষণ হলো, মাথাব্যথার সঙ্গে দেখা যায় বমি বমি ভাব, অনেকের বমি হয়। দেখা যায়, এই মাথাব্যথার সময় আলো অথবা শব্দ এগুলো সহ্য করা যায় না। তাই দেখা যায়, মাইগ্রেন ব্যথা খুব বেশি হলে আক্রান্ত ব্যক্তি একটি অন্ধকার ঘরে আলো বন্ধ করে শুয়ে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের এই মাথাব্যথা থেকে মুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ দুটি অভ্যাস এড়িয়ে চলাই ভালো। এতে মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
পেট খালি না রাখা
দীর্ঘক্ষণ পেট খালি থাকলে মাইগ্রেনের ব্যথা বা সমস্যা শুরু হতে পারে। এর কারণ হলো, খালি পেটে থাকলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা মাথাচাড়া দেয়, যা মাইগ্রেনের ব্যথাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রচুর পানি পান করুন। কারণ ডিহাইড্রেশন মাথাব্যথার বড় কারণ।
আবহাওয়া
অতিরিক্ত রোদে ঘোরাঘুরির কারণে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত গরম, অতিরিক্ত আর্দ্রতার তারতম্যে মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়তে পারে। চিকিৎসা ছাড়া দীর্ঘদিন মাইগ্রেনে ভুগলে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এ রকম সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, আর সে অনুযায়ী নিয়ম মেনে ওষুধ খেতে হবে। সাধারণত মাইগ্রেনের ব্যথায় পেইনকিলার দেওয়া হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে পেইনকিলার খেলে অন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। রোগী নিজে থেকে যদি কোনো পেইনকিলার খেতে শুরু করেন, তার পরিণাম আরও ভয়াবহ হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না।v
[নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন, রেজিস্ট্রার, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল]