সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে মূল্যস্ফীতি কেন্দ্র করেই আগামী বাজেটের সব কিছু ভাবতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক এবং গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। 

তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেটে যদি একটি মাত্র বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হয় সেটি হচ্ছে- মূল্যস্ম্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থেও এটি করতে হবে।’

আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সামস্টিক অর্থনীতির স্বার্থে মূল্যস্ফীতি কেন্দ্র করেই আগামী বাজেটের সব কিছু ভাবতে হবে। এটাকে কেন্দ্র করেই অর্থনীতির বাদ বাকি চলক ঠিক রাখতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেটের অন্তত তিনটি বিশেষ পরিপ্রেক্ষিত রয়েছে। প্রথমত, অতিমারি করোনার পূর্ব অবস্থায় এখনও ফিরে যেতে পারেনি অর্থনীতি। দ্বিতীয়ত জ্বালানি এবং খাদ্যপণ্যের দরে উর্ধগতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা। তৃতীয়ত, ২০০৮-০৯ অর্থবছরের পর সামস্টিক অর্থনীতির সবচেয়ে বড় টানাপড়েন। সবমিলিয়ে বর্তমান সরকারের মেয়াদে সবচেয়ে সংকটময় অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এবার বাজেট প্রণয়ন করতে হচ্ছে।’

সোমবারের  অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। বক্তব্য দেন একশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক রুমানা হক, আদিবাসি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেটের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের পরিচালক টনি মাইকেল গোমেজ প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘সরকারের দেওয়া মূল্যস্ফীতির তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতার আদৌ কোনো মিল নেই। এমনকি টিসিবির তথ্যের সঙ্গেও বিবিএসের তথ্যের অমিল রয়েছে। মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে ১২ শতাংশে এসে ঠেকতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।’

এর কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে যে সব পণ্যের দর বেড়েছে, সেগুলো এখনো দেশে এসে পৌঁছায়নি। এ পরিস্থিতির সঙ্গে টাকার মানের ধস-এসব কারণে আগামীতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।‘

কম কর-জিডিপি অনুপাত কম থাকা, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে পরিচালন ব্যয় বেশি হওয়া, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, চলতি হিসাবের ঘাটতি বৃদ্ধি ও ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়াসহ সামষ্টিক অর্থনীতির বেশ কিছু দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেন তিনি। 

সুদের হার বেঁধে রাখারও সমালোচনা করেন ড. দেবপ্রিয়। 

তিনি বলেন, বিনিয়োগ বাড়ানোর যে উদ্দেশ্যে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সে তত্ত্ব বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কার্যকর নয়।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে ভর্তুকি ব্যবস্থাপনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অসুবিধা কীভাবে দূর করা যায় তা ভাবতে হবে। ভর্তুকি বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরিধি বাড়ানো এবং সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।’

অধ্যাপক রুমানা হক বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি বরাদ্দ কেন খরচ করা যায় না সে কারণ নির্ণয়ে দীর্ঘমেয়াদী কৌশল নিতে হবে। সক্ষমতার ঘাটতি পূরণে ব্যবস্থা নিতে হবে ‘