যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া দ্রুত উপকারভোগীর তালিকা প্রস্তুত, পণ্য কেনার স্বচ্ছতার ঘাটতি এবং অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের পরিপূর্ণ সুফল পায়নি বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বৃহস্পতিবার 'টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড কার্যক্রম সুশাসনের চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

টিআইবি বলেছে, প্রকৃত উপকারভোগীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ফ্যামিলি কার্ড তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। এ ছাড়া উপকারভোগীদের চাহিদা, পণ্য কেনার সামর্থ্য এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তির বিষয়গুলো যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়নি। টিআইবি একই সঙ্গে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড কার্যক্রমে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ উত্তরণে ১০ দফা সুপারিশও করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।

টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরামের তত্ত্বাবধানে গবেষণাটি উপস্থাপন করেন একই বিভাগের রিসার্চ ফেলো মোহাম্মদ নুরে আলম ও রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মুহা. নুরুজ্জামান ফরহাদ।

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্নেষণ করে মিশ্র পদ্ধতিতে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। এ বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত গবেষণার তথ্য সংগ্রহ এবং ১৮ থেকে ২৬ এপ্রিল একটি জরিপ করা হয়। জরিপে ৩৫ জেলা থেকে ৩০ থেকে ৩৫ জন করে মোট ১ হাজার ৪৭ জন উপকারভোগী অংশ নেন।

গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবি বলেছে, গত মার্চ-এপ্রিলে নিম্নআয়ের ১ কোটি পরিবারকে টিসিবির 'ফ্যামিলি কার্ড' দেওয়ার মাধ্যমে সাশ্রয়ী দরে পণ্য সরবরাহ কমসূচি নেয় সরকার। উপকারভোগী তালিকায় করোনাকালে 'আড়াই হাজার টাকা নগদ সহায়তা' কর্মসূচির আওতাভুক্ত ৩৮ লাখ ৫০ হাজার উপকারভোগীর সবাইকে রেখে নতুন করে ৬১ লাখ ৫০ হাজার জনকে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।

তবে নগদ সহায়তা পাওয়া ৩৯.৫ শতাংশ উপকারভোগী ফ্যামিলি কার্ড পাননি। এর মধ্যে ৮০.৪ শতাংশ সম্ভাব্য উপকারভোগীকে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বাদ দেওয়া হয়। জরিপে অংশগ্রহণকারী নারীদের ৩৪.৪ শতাংশ এবং পুরুষদের ৩১.৪ শতাংশ উপকারভোগী অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ফ্যামিলি কার্ড পাননি বলে অভিযোগ করেন।

নতুন তালিকায় বিভিন্ন সচ্ছল ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দুর্গম এলাকার নারী ও আদিবাসী; যাদের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের যোগাযোগ কম- এমন ব্যক্তিদের অনেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে ১ কোটি পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়ার প্রশংসনীয় উদ্যোগটি প্রত্যাশিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। স্বচ্ছতার অভাব, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে প্রকৃত অনেক উপকারভোগী তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। আশা করি, সরকার পরবর্তী সময়ে টিআইবির সুপারিশগুলো বিবেচনায় নিয়ে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব পরিহার করে এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নে উদ্যোগী হবে।'

টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড কার্যক্রমে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ উত্তরণে টিআইবি যে ১০টি সুপারিশ করেছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জনপ্রতিনিধি উপকারভোগীদের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করার পর ওয়ার্ড সভার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের মতামতের ভিত্তিতে তালিকা চূড়ান্ত করা; নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, দলিত, আদিবাসী, প্রভৃতি প্রান্তিক ও দুর্গম এলাকার জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা; শুধু দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমে ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ করা এবং বিতরণের সময়, তারিখ ও স্থান তথ্য প্রচারের ব্যবস্থা করা; বিনামূল্যে তালিকাভুক্তি ও কার্ড বিতরণে অর্থ লেনদেন না করার বিষয়ে উপকারভোগীদের সচেতন করতে মাঠ পর্যায়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা; উপকারভোগীদের চাহিদা ও সামর্থ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে প্যাকেজে পণ্যের ধরন, পরিমাণ ও মূল্য নির্ধারণ করা।