ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ঘাটতির মধ্যেই চলছে চুরি, দেদার অপচয়

ঘাটতির মধ্যেই চলছে চুরি, দেদার অপচয়

হাসনাইন ইমতিয়াজ

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২২ | ১৪:১৯

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি বলে সরকার খোলাবাজার থেকে এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) কেনা বন্ধ রেখেছে। ফলে দিনে ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে। এতেই দেশের বিদ্যুৎ, শিল্প ও আবাসিক খাতে প্রচণ্ড সংকট দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে দেশ। বাধ্য হয়ে সরকার গ্যাস-বিদ্যুতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে এর মধ্যেও থেমে নেই গ্যাস চুরি। চলছে বাধাহীন অপচয়।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর ইউনিয়নে গত ২৭ জুন একাধিক অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তিতাস গ্যাস। চলতি সপ্তাহে ভবেরচরের বাসস্ট্যান্ডের উত্তর পাশের বিচ্ছিন্ন করা গ্যাসলাইনে আবার অবৈধভাবে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গজারিয়া উপজেলার আট ইউনিয়নের ছয়টিতেই গ্যাসের অবৈধ সংযোগ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের সনমান্দি ইউনিয়নে ১৫ কিলোমিটার অবৈধ লাইন রয়েছে। এভাবে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ জেলার অধিকাংশ এলাকায় লাখ লাখ অবৈধ সংযোগ রয়েছে। নিজেরা মাইলের পর মাইল পাইপলাইন বসিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে গ্রামের পর গ্রামে গ্যাস সংযোগ নিয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ দিয়ে গ্যাসের এই অবৈধ কারবার চলছে বছরের পর বছর।

সূত্র মতে, অবৈধ সংযোগ ও ওভারলোডের মাধ্যমে প্রতিদিন ১৫-২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস চুরি হচ্ছে, যা সিস্টেম লসের নামে চালিয়ে দিচ্ছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। পাশাপাশি সারকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং শিল্পকারখানার অদক্ষ বয়লার ও জেনারেটরের কারণেও দিনে ২০-২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাসের অপচয় হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুরি ও অপচয় ঠেকানো গেলে গ্যাসের চলমান ঘাটতি থেকে অনেকটাই মুক্তি মিলত। স্পট মার্কেটের ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানির দরকার থাকত না।
তাঁদের মতে, দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য কয়েকটি উদ্যোগ নিলেই আগামী দুই মাসে ৫ থেকে ৬ কোটি ঘনফুট উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। কিন্তু সংশ্নিষ্ট কোম্পানিগুলোর গাফিলতিতে এসব উদ্যোগ মাসের পর মাস ধরে ঝুলে আছে।
দেশে গ্যাসের চাহিদা বর্তমানে ৪২০ কোটি ঘনফুট। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ২৮০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে এলএনজি থেকে মিলছে ৫০ কোটি ঘনফুট।

সিস্টেম লসের নামে চুরি :সূত্র বলছে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে সম্প্রতি গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের সিস্টেম লস দেখিয়েছে ৭-৮ শতাংশ। সঞ্চালন কোম্পানি জিটিসিএল ৪ শতাংশ পর্যন্ত সিস্টেম লস দেখিয়েছে। তবে বিতরণ ও সঞ্চালন মিলিয়ে আদর্শ সিস্টেম লস ২.২৫ শতাংশের ওপর হওয়ার কথা নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থাৎ কোম্পানিগুলো ৮-১০ শতাংশ বাড়তি সিস্টেম লস দেখাচ্ছে, যার একটা বড় অংশই অবৈধ সংযোগ এবং অনুমোদনের অতিরিক্ত লোড হিসেবে চুরি হচ্ছে। অতিরিক্ত সিস্টেম লস ৭ শতাংশ ধরলেও চুরির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২১ কোটি ঘনফুট।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিম সমকালকে বলেন, সিস্টেম লস কখনোই ৭-৮ শতাংশ হতে পারে না। সিস্টেম লস বলতে পাইপলাইনে লিকেজ, বিভিন্ন সংযোগে গ্যাস বের হওয়া ইত্যাদি ধরা যেতে পারে। বিতরণ সিস্টেম দুর্বল তাই বলে এত লিকেজ নেই যে, দিনে ১৫-২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস বেরিয়ে যাবে। আর সঞ্চালন লাইনে একটু লিকেজ থাকলেই তা বড় ঘটনা হতো। তাঁর মতে সিস্টেম লসের আড়ালে মূলত চুরির ঘটনা ঘটে। শুধু তিতাস গ্যাসেই দিনে ১৫ কোটি ঘনফুটের মতো গ্যাস চুরি হয় বলে মনে করেন বুয়েটের এই অধ্যাপক।

গত মার্চে অনুষ্ঠিত গ্যাসের দাম বাড়ানোর শুনানিতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেন, গ্যাসের আদর্শ সিস্টেম লস হচ্ছে ২ শতাংশের নিচে। বিশ্বের কোথাও ২ শতাংশের ওপরে সিস্টেম লস নেই। ৭-৮ শতাংশ সিস্টেম লস গ্রহণযোগ্য নয়।

যোগসাজশে গ্যাস চুরি :নিয়মিত অভিযান চালিয়েও খুব বেশি সফলতা পাচ্ছে না বিতরণ কোম্পানিগুলো। সূত্র বলছে, এসব এলাকায় অবৈধ সংযোগের সঙ্গে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা জড়িত। তাই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পরই আবার সংযোগ বসে যায়। ঢাকার কামরাঙ্গীরচর, পুরান ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, নরসিংদীসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগের রমরমা অবস্থা চলছে। সম্প্রতি তিতাস কামরাঙ্গীরচর এলাকায় বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। এই এলাকায় বৈধ সংযোগ ১২ হাজার। কিন্তু গ্যাস সংযোগ ছিল প্রায় ৬০ হাজার। নারায়ণগঞ্জের কিছু এলাকায় ৯০ শতাংশ সংযোগ অবৈধ বলে সূত্র জানিয়েছে। হাইপ্রেশার লাইন ছিদ্র করে ২-৩ ইঞ্চি নিম্নমানের গ্যাসের লোহার পাইপ ও প্লাস্টিকের পাইপ নিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে অধিকাংশ অবৈধ সংযোগ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
সোনারগাঁ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের দশটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ১৫ হাজার অবৈধ সংযোগ রয়েছে। এর মধ্যে সনমান্দি ইউনিয়নে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার এবং সাদিপুর ইউনিয়নে প্রায় ২০ কিলোমিটার গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সনমান্দিতে ৫ হাজার, সাদিপুর ইউনিয়নে ২ হাজার, সোয়াগাঁয়ে ৪০০, পিরোজপুরে ৫০০, কাঁচপুরে ৭০০, শম্ভুপুরায় ১ হাজার ও মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের ২০০ এবং সোনারগাঁ পৌরসভা এলাকায় ২ শতাধিক বৈধ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

এসব অবৈধ সংযোগে রাইজারপ্রতি গ্রাহকের কাছ থেকে গড়ে ৩৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। শাসক দলের স্থানীয় নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে জানা গেছে। বৈদ্যেরবাজার ও বারদিতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও আবার নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব, হাটিপাড়া, কাজীপাড়া, বানিয়াদী, মুড়াপাড়া, রূপসী, বরপা, কাঞ্চন, ভুলতা, শিংলাবো, মাছিমপুর, কায়েতপাড়া, দড়িকান্দিসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০ হাজার অবৈধ ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাকর্মী ও অসাধু ঠিকাদাররা সংযোগপ্রতি ৩০-৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এগুলোর ৯০ ভাগেই নিম্নমানের পাইপ ও সংযোগসহ সামগ্রী ব্যবহূত হয়েছে। গত বছর তিতাস গ্যাস লিকেজের কারণে বিস্ম্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল সাওঘাট এলাকার একটি তিনতলা বাড়িতে গ্যাসের লাইনের লিকেজ থেকে এ বিস্ম্ফোরণে তিনজন নিহত হন।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ২নং ওয়ার্ডের কান্দাপাড়া, হাজের মার্কেট, মাদ্রাসা রোড, ধনু হাজী রোড, মিজমিজি পশ্চিমপাড়া, বাতানপাড়া ক্যানেল পাড়, সানারপাড়, মৌচাক, মতিন সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক মশার কয়েল কারখানায় অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ রয়েছে। হীরাঝিল, ভূমিপল্লি, সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিং, বাতানপাড়া ও পাইনাদি এলাকায় কয়েক হাজার ভবনে অবৈধ চুলা ব্যবহূত হচ্ছে।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের দুটি গ্রামে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রাইজারপ্রতি ১ হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে অবৈধ সংযোগের কাজ করেছেন, যা স্বীকারও করেছেন সংশ্নিষ্ট ওয়ার্ডের সদস্য মোসলেম উদ্দিন। উপজেলার টেংগারচর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নাছিম মিয়া মহাসড়কের ভাটেরচর ব্যাংকক কেবল কারখানার পাশের সঞ্চালন লাইন থেকে দুই ইঞ্চি ব্যাসার্ধের পাইপে ইউনিয়নটির মীরপুর, উত্তর শাহপুর, বৈদ্যেরগাঁও ও মীরেরগাঁও এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। স্থানীয় সূত্রমতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশের প্রায় ১৩ কিলোমিটারজুড়ে ১৫টি হোটেল-রেস্তোরাঁয় দিনরাত অবৈধ সংযোগে চলে রান্না। এ ছাড়া অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে ডজনখানেক ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান চলছে।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করে গিভেন্সি গ্রুপের মেসার্স গিভেন্সি গার্মেন্ট লিমিটেড। ৩ ইঞ্চি সার্ভিস লাইন থেকে ১ ইঞ্চি পাইপের মাধ্যমে ৪ ইঞ্চি হাউস লাইনের সঙ্গে অবৈধভাবে সংযোগ করে ৬ টন ক্ষমতার ১টি বয়লারে গ্যাস ব্যবহার করে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ গত সোমবার ওই কারখানার গ্যাসলাইন বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি পুরো লাইন অপসারণ করে। অভিযোগ রয়েছে, গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় বছরের পর বছর ধরে অবৈধ গ্যাস-ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিতাস সূত্র জানায়, গত এক বছরে জেলার ৪৪৬টি পয়েন্টে ১১১ কিলোমিটার অবৈধ লাইন শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২ হাজার ২১১টি বাড়িতে অবৈধ সংযোগ রয়েছে। বাড়িগুলোর মধ্যে অবৈধ চুলার সংখ্যা ৪৪ হাজার ৭০২টি। এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে তিতাস কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সরকার গ্যাস চুরি ঠেকাতে বদ্ধপরিকর। এ জন্য যত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তাই নেওয়া হবে।
গ্যাসের অপচয় :অদক্ষ, পুরোনো যন্ত্রাংশ, বয়লার ও জেনারেটর ব্যবহারের কারণে দেশের সারকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পকারখানার বয়লার এবং জেনারেটরে অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহূত হচ্ছে। দেশের ৪টি সরকারি সারকারখানায় গড়ে ১ টন ইউরিয়া উৎপাদনের জন্য ৪৩ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ঘনফুট (এমসিএফ) গ্যাস প্রয়োজন হয়। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একই পরিমাণ সার উৎপাদনের জন্য ২৫ এমসিএফ গ্যাস ব্যব্যহূত হওয়ার কথা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কলকারখানায় ব্যবহূত অধিকাংশ ক্যাপটিভ জেনারেটরের দক্ষতা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। যেখানে একটি দক্ষ কমবাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের দক্ষতা প্রায় ৪০-৪৫ শতাংশ। ফলে ক্যাপটিভে পুড়িয়ে যে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় সমপরিমাণ গ্যাস দিয়ে দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। শিল্পকারখানার বয়লারেও গ্যাস অপচয় ঘটে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ছাড়া অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বহু পুরোনো হওয়ায় দক্ষতা কমে গেছে। এ ছাড়া সিম্পল সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর দক্ষতা কম। কমবাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর দক্ষতা যেখানে ৪০-৫০ শতাংশ, সেখানে সবচেয়ে দক্ষ সিম্পল সাইকেল কেন্দ্রটির দক্ষতা ৩০ শতাংশের বেশি নয়। দেশের অধিকাংশ সিম্পল সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের দক্ষতা ২০ শতাংশের কম। অনেক কমবাইন্ড সাইকেলের দক্ষতা ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অদক্ষতা আর পুরোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র, সারকারখানা ও শিল্পকারখানায় দিনে ২০-২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাসের অপচয় ঘটছে।

নামমাত্র উদ্যোগও আটকে আছে :তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে জোরালো উদ্যোগ না থাকায় দেশে গ্যাস ঘাটতি চরম আকার ধারণ করেছে। যথাযথ পদক্ষেপ না থাকায় বরং গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে উৎপাদন কমে গেছে। এর মধ্যেও কিছু ছোট ছোট উদ্যোগ নিজেদের গাফিলতিতে মাসের পর মাস ফেলে রেখেছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। সূত্র জানিয়েছে, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবহেলা করছে সিলেট গ্যাসফিল্ডস কোম্পানি। কোম্পানিটির রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্রের ৯ নম্বর কূপ ৫ বছর আগেই উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এই কূপ থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরে ৭ নম্বর কূপের প্রসেস প্লান্টের সঙ্গে একটি পাইপলাইন বসালেই ১ থেকে দেড় কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া সম্ভব। কিন্তু এই পাইপলাইন এতদিন বসানো হয়নি। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প নিয়েছে সিলেট গ্যাস কোম্পানি। পুরোনো পাইপলাইনের ত্রুটির কথা বলে ১৭ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানোর কথা বলা হয়েছে, যা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন এ খাত-সংশ্নিষ্টরা। কারণ পুরোনো পাইপলাইনে ত্রুটি রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা না করেই এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত এপ্রিলেই উৎপাদনে এসেছে কৈলাসটিলার ৭ নম্বর কূপ। এখান থেকে অল্পদূরের বিয়ানীবাজারের একটি কূপ ওয়ার্কওভার (সংস্কার) করার কথা রয়েছে, যেখানে দেড় থেকে ২ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু গত চার মাসেও কৈলাসটিলা-৭নং কূপ থেকে রিগ বিয়ানীবাজারে নেওয়া হয়নি। কৈলাস-৭ থেকে লগইনের যন্ত্রপাতি অনতিদূরের বন্ধ হওয়া কৈলাস-২ ও ৩ নিয়ে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কিন্তু গত কয়েক মাসে সেই উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। খাত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, এই ধরনের ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপ নিলে দুই মাসে ৫-৬ কোটি ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। কিন্তু তা নেওয়া হচ্ছে না।




আরও পড়ুন

×