টেন্ডার ছাড়াই বিদেশ থেকে ভোজ্যতেল কিনবে সরকার
প্রতীকী ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২২ | ২১:৩৬ | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২২ | ২১:৩৬
টেন্ডার বা দরপত্র ছাড়াই সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে প্রথমবারের মতো বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে সয়াবিন তেল কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিদেশি দুই প্রতিষ্ঠান থেকে ৩ কোটি ৩০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনা হবে। টিসিবির পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আজ বুধবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বর্তমানে সরকার সারাদেশের এক কোটি দরিদ্র পরিবারকে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সয়াবিন তেলসহ কয়েকটি পণ্য সরবরাহ করছে। একটি কার্ডের বিপরীতে একবারে দুই লিটার করে তেল দেওয়া হয়। এই ব্যাপক পরিমাণে তেল অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে এ মুহূর্তে সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য বিদেশ থেকে কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সংগ্রহ করার জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করতে হচ্ছে। এর আগে দেশীয় প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সয়াবিন তেল কিনেছে টিসিবি। আর দুই বছর আগে সংকটের সময় বিদেশি কোম্পানি থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে পেঁয়াজ কেনা হয়।
জানা গেছে, কানাডা ও পোল্যান্ডের দুই কোম্পানি সয়াবিন তেল সরবরাহ করবে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সয়াবিন তেল সংগ্রহ করে সরবরাহ করবে তারা। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) একেএম আলী আহাদ খান সমকালকে বলেন, এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনা হলে কম দামে পণ্য পাওয়া যায়। সেজন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিস্তারিত যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান সমকালকে বলেন, তিনটি কারণে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সয়াবিন তেল কেনা হচ্ছে। প্রথমত, অভ্যন্তরীণ বাজারের তুলনায় কম দামে পাওয়া যাবে। প্রতি লিটার সয়াবিন কেনা হবে ১ দশমিক ৪৪ ডলারে। কিন্তু দেশে টেন্ডার দিয়ে কিনতে গেলে এর চেয়ে বেশি দাম পড়বে। দ্বিতীয়ত, দ্রুত সময়ে পণ্য পাওয়াও সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির লক্ষ্য। এ ছাড়া স্থানীয় কোম্পানির কাছ থেকে টেন্ডার দিয়ে কিনলে দেশের মধ্য থেকেই সংগ্রহ করা হয়। ফলে বাজারে তেলের সরবরাহ তেমন বাড়ে না। বিদেশ থেকে আমদানি করা হলে অভ্যন্তরীণ বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়বে।
কয়েক মাস ধরে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা চলছে। উৎপাদন কম হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়া, ডলারের বিপরীতে টাকার দর কমে যাওয়া এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমে যায়। এ কারণে সয়াবিন ও অন্যান্য ভোজ্যতেলের দাম বেশ বেড়ে যায়। যদিও বেড়ে যাওয়া দর এখন কমছে। টিসিবির বাজারদরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর বাজারগুলোতে গতকাল প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮০-১৮৫ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। যা এক বছর আগের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি। কিছু দিন আগে দেশের বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কোনো কোনো বাজারে তেল পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় দরিদ্র মানুষকে সহায়তা করতে সরকার টিসিবির মাধ্যমে প্রতি লিটার সয়াবিন ১১০ টাকা দরে বিক্রি করছে।
অন্যান্য এজেন্ডা :ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি ও সৌদি আরবের সাবিক এগ্রিনিউট্রিয়েন্ট কোম্পানি থেকে ৩০ হাজার টন করে মোট ৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কেনার প্রস্তাব উপস্থাপন করবে। পাশাপাশি সরকার টু সরকার ভিত্তিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ইউরিয়া সার আমদানির নীতিগত অনুমোদনের প্রস্তাব উঠবে। একই সময়ে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বিএডিসির এমওপি সার কেনার নীতিগত অনুমোদন চাইবে কৃষি মন্ত্রণালয়।