আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণে সমন্বয়ে ঘাটতি
আনোয়ার ইব্রাহীম
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২২ | ২১:৪৮
আইনি জটিলতা ও সাংঘর্ষিক অবস্থা নিরসনের পাশাপাশি নিজেদের কাজে সমন্বয় করতে দেশের আর্থিক খাতের ছয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নিয়ে ২০১২ সালে একটি কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বা সমন্বয় পরিষদ গঠন করা হয়। তবে সমন্বয় খুব একটা হচ্ছে না। বিশেষত, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মধ্যে মতপার্থক্য বাড়ছে। দীর্ঘদিন অনিষ্পত্তি অবস্থায় থাকছে অনেক ইস্যু।
সমন্বয়ের অভাবের বিষয়টি সংশ্নিষ্টরা স্বীকার করলেও প্রকাশ্যে এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন কেউ। সূত্র জানায়, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেতৃস্থানীয়দের দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্যই বড় হয়ে আসছে। সমন্বয় পরিষদের অন্য সদস্যরা হলো- বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা-আইডিআরএ, ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-এমআরএ, সমবায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা সমবায় অধিদপ্তর এবং যৌথ মূলধনী কোম্পানিগুলোর নিবন্ধক সংস্থা-আরজেএসসি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদকে ফোন করলে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। তবে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আগে কিছু সমস্যা থাকলেও এখন নেই।
সমন্বয় পরিষদের সর্বশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয় গত ৬ সেপ্টেম্বর। ওই সভায় পূর্ববর্তী আলোচনা সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসির অসহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে অন্তত চার ইস্যুর সমাধান হচ্ছে না। গত সভায় আলোচনার একটি বিষয় ছিল- মুদ্রা এবং আর্থিক পরিসংখ্যান (এমএফএস) সংকলনের জন্য পুঁজিবাজার সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বৈঠকে জানানো হয়, ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এমন তথ্য চেয়ে পুঁজিবাজার সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তথ্য পেলেও গত বছর থেকে পাচ্ছে না। গত বছরের ১৮ নভেম্বর এবং চলতি বছরের ১৪ জুন চিঠি দিয়ে বিএসইসি এভাবে সরাসরি তথ্য চাওয়া নিয়ে আপত্তি তোলে। সংস্থাটি জানায়, তথ্যের সংবেদনশীলতার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক যাতে সরাসরি এ-সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে সরাসরি তথ্য না চেয়ে বিএসইসিকে চিঠি দেয়। এর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগ গত ১৮ মে এবং ৩০ জুন দুই দফায় বিএসইসিকে চিঠি দিয়ে এ-সংক্রান্ত তথ্য চায়। কিন্তু সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএসইসি তথ্য দেয়নি।
একই সভায় বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, বিএসইসির পক্ষ থেকে সিআইবি ডাটাবেজে সরাসরি প্রবেশাধিকার চেয়ে চিঠি দেওয়ার হলেও ১৯৭২ সালের অধ্যাদেশের কথা বলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা অনুমোদন করছে না। এর জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, গোপনীয়তার স্বার্থেই সিআইবি ডাটাবেজে প্রবেশাধিকার দেওয়া হচ্ছে না। তবে চাওয়া মাত্র এ-সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, তালিকাভুক্ত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা নিয়োগ ও বেতন-ভাতা নির্ধারণে পরিচালনা পর্ষদের স্বতন্ত্র পরিচালকদের সমন্বয়ে এনআরসি কমিটি গঠন বিষয়ে বিএসইসির প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নীতিমালার সঙ্গে ব্যাংক কোম্পানি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের সাংঘর্ষিক অবস্থা নিয়ে গত বছর একটি সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত ছিল, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে পৃথকভাবে আলোচনা করে এর সমাধান করা হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব কর্মকর্তাদের মনোনীত করে গত বছরের ৩১ অক্টোবর বিএসইসিকে চিঠি পাঠালেও এক বছরেও বিএসইসি কাউকে মনোনীত করেনি। ফলে ওই ইস্যুর সমাধান হয়নি।
কাউকে মনোনীত করা হয়েছে কিনা, জানতে গতকাল ফোন করলে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, 'মনে নেই। কাউকে এখনও মনোনীত করে চিঠি না দেওয়া হলে আগামীকালই বলে দেব।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ডেপুটি গভর্নর সমকালকে বলেন, বিএসইসির সঙ্গে সমন্বয় নিয়ে আগে যতটা সমস্যা ছিল, এখন ততটা নেই। তবে দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য এখনও আছে। সহযোগিতামূলক মনোভাব না থাকলে সমন্বয় সম্ভব নয়। এ কারণে কিছু সমস্যা রয়ে যাচ্ছে।