এক মাসে ১২ হাজার বিও অ্যাকাউন্ট খালি

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ | ২২:৫৬
তালিকাভুক্ত ৮০ শতাংশ শেয়ারের দর সর্বনিম্ন মূল্যসীমা বা ফ্লোর প্রাইসে নেমে আসার প্রেক্ষাপটে গত এক মাসে ১২ হাজার বিও অ্যাকাউন্ট পুরোপুরি শেয়ার শূন্য হয়েছে। অর্থাৎ এসব অ্যাকাউন্টধারী বিনিয়োগকারী তাঁদের সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। এর মধ্যে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহেই ১০ হাজারের বেশি বিও অ্যাকাউন্ট খালি হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস-সংশ্নিষ্টরা জানান, সংকটের সময় প্রায়ই দেখা যায়, বিনিয়োগকারীদের একটা অংশ বিনিয়োগ তুলে নিয়ে 'সাইড লাইন'-এ বসে থাকেন; অর্থাৎ সুদিনের অপেক্ষায় বাজার পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। তার আগে কেউ কেউ মুনাফার পরিমাণ কম-বেশি যাই থাকুক না কেন, শেয়ার বিক্রি করেন। আবার বড় লোকসানের শঙ্কা থাকলে অল্প লোকসানে থাকা বিনিয়োগকারীদের একটা অংশও শেয়ার বিক্রি করেন। এবারও এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অনারারি অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ফ্লোর প্রাইসে অধিকাংশ শেয়ার আটকে যাওয়ায় সেসব শেয়ারে এখন ক্রেতা নেই। ফলে চাইলেও অনেকে শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। যদি ক্রেতা থাকত, তাহলে খালি হওয়া বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা ছিল।
গতকাল সোমবার দিনের লেনদেন শেষের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ছিল ৩৯০টি। এর মধ্যে ২৯৮টি ফ্লোর প্রাইসে পড়ে ছিল। এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর ফ্লোর প্রাইসে নেমে আসা শেয়ার সংখ্যা সর্বোচ্চ ৩১৫টিতে উন্নীত হয়েছিল। বর্তমানে ফ্লোর প্রাইসের ওপর থাকা ৯২ শেয়ারের মধ্যে ৩৬টির দরই ফ্লোর প্রাইসের তুলনায় মাত্র ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশিতে কেনাবেচা হচ্ছে। দরপতন রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দ্বিতীয় দফায় গত ৩১ জুলাই সব শেয়ারের দরে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এক মাস আগে গত ১০ নভেম্বর সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ১৮ লাখ ৫৫ হাজার ৯৯৩টি। এর মধ্যে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ১৯৭টি অ্যাকাউন্টে একটিও শেয়ার ছিল না। এক মাস ব্যবধানে গত রোববার বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা বেড়ে ১৮ লাখ ৫৯ হাজার ১৬টিতে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছে তিন হাজার ২৩টি।
কিন্তু একই সময়ে অর্থাৎ ১৩ নভেম্বর থেকে গত রোববার পর্যন্ত পুরোপুরি খালি হওয়া বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা বেড়ে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৩৩৭টিতে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ এ সময়ে ১২ হাজার ১৪০টি বিও অ্যাকাউন্ট শেয়ার শূন্য হয়েছে। যদি ধরা হয়, এ সময়ে খোলা নতুন ৩ হাজার বিও অ্যাকাউন্টে কোনো শেয়ার কেনা হয়নি, তার পরও পুরোনো অন্তত ৯ হাজার বিও অ্যাকাউন্ট থেকে বিনিয়োগকারীরা সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন।
সিডিবিএল সূত্রে আরও জানা গেছে, মোট বিও অ্যাকাউন্ট ১৮ লাখ ৫৯ হাজার হলেও গত রোববার দিন শেষে কমপক্ষে একটি শেয়ার ছিল, এমন বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ১৪ লাখ ১৪ হাজার ৭৪৫টি। গত ২২ নভেম্বরও এ সংখ্যা সোয়া ১৪ লাখের বেশি ছিল।
গত এক মাসের হিসাবে শেয়ার থাকা বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা কমলেও ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর গত সাড়ে চার মাসের হিসাবে কিছুটা ভিন্ন চিত্র আছে। গত ৩১ জুলাই মোট বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৮৮৪টি। একই দিনে খালি বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ৩ লাখ ৪৯ হাজার ১৭১টি।
- বিষয় :
- শেয়ারবাজার