পণ্য আমদানিতে ভারতের কোটা চায় বাংলাদেশ
মেসবাহুল হক
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৩:৫৬
তিন দিনের সফরে আজ ভারত যাচ্ছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সফরকালে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পিয়ুশ গয়ালের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশ-ভারত সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সেপা) স্বাক্ষরের জন্য আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরুর ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া চাল, গম, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য আলাদা কোটা নির্ধারণে চুক্তির প্রস্তাব দেবেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, 'সেপা' স্বাক্ষরের আলোচনা শুরুর পর প্রথমে একটি কাঠামো তৈরি করা হবে। পণ্য, সেবা এবং বিনিয়োগ- তিনটি বিষয় কাঠামোতে থাকবে। পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে শুল্ক্ক ছাড় কীভাবে হবে, কয় বছরে হবে, কোন কোন পণ্য থাকবে- এসব বিষয়ে বিধিমালা তৈরি হবে। দু'দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে বন্দর ও সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে। এসব কার্যক্রম কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা বাণিজ্যমন্ত্রীর এবারের সফরের মূল্য উদ্দেশ্য।
সূত্র জানায়, বর্তমানে মালদ্বীপকে কোটার আওতায় পণ্য আমদানির সুবিধা দেয় ভারত। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিলে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের সংকট হলে কিংবা অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কমে গেলে বা বাজারে অস্থিরতা থাকলে নির্ধারিত পরিমাণ পণ্য দেবে ভারত। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের সুবিধার প্রয়োজন বোধ করছে বাংলাদেশ।
'সেপা' কার্যকর হলে উভয় দেশের কী লাভ হবে তার ওপর ইতোমধ্যে যৌথ সমীক্ষা হয়েছে। এ প্রতিবেদনে বলা হয়, এ চুক্তি হলে বাংলাদেশ ও ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যথাক্রমে ১ দশমিক ৭২ শতাংশ ও দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ যোগ হবে। সেপা স্বাক্ষরিত হলে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ১৯০ শতাংশ বাড়বে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি ১৮৮ শতাংশ বাড়বে।
ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়লেও গত অর্থবছরে দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানির তুলনায় রপ্তানির পার্থক্য, অর্থাৎ বাণিজ্য ঘাটতি ১ হাজার ৪১৮ কোটি ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৮৬০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ভারত থেকে আমদানি করে, যার বড় অংশই খাদ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি। সেপার আওতায় ভারত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি স্বল্পমূল্যে ও আরও সহজে আমদানি করতে পারবে বলেও মনে করা হচ্ছে। এ চুক্তি হলে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভিন্ন নন-ট্যারিফ ও প্যারা-ট্যারিফ প্রত্যাহার হবে। ফলে ভারতে রপ্তানি সম্ভাবনা ও বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ বাড়বে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের পাটপণ্যের ওপর আরোপিত অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক্ক প্রত্যাহার চাইবেন বাণিজ্যমন্ত্রী। ২০১৭ সালে প্রতি টন বাংলাদেশি পাটপণ্যের ওপর ১৯ থেকে ৩৫২ ডলার পর্যন্ত অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক্ক আরোপ করে দেশটি।
মন্ত্রীর ভারত সফর প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পাবে না। ওই সময় বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে চায়। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতের সঙ্গে 'সেপা' চুক্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে এবারের সফর থেকে।
আলোচনা শুরুর পর পূর্ণাঙ্গ চুক্তি হতে কতদিন সময় লাগবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা অনেক বড় চুক্তি। তাই স্বাভাবিকভাবেই অনেক ধরনের আলাপ-আলোচনা প্রয়োজন হবে। তবে আমাদের লক্ষ্য তিন বছরের মধ্যে চুক্তি করা। তাহলে ২০২৬ সালের পর যে চ্যালেঞ্জ আসবে, সেগুলো মোকাবিলা করা সহজ হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সেপাকে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) একটি উন্নত সংস্করণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এরই মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে এ চুক্তি করেছে ভারত। ২০২৬ সালের আগে ভারত, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, জাপান, সিঙ্গাপুরের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করতে চায় সরকার।
- বিষয় :
- পণ্য আমদানি
- ভারতের কোটা চায় বাংলাদেশ