বিকাশ ও হুয়াওয়ের সমঝোতা স্মারক সই
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৩ | ১৮:০০
হুয়াওয়ে ও বিকাশ নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারে চুক্তি সই করেছে। ফলে দুটি প্রতিষ্ঠান টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সবার জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং দেশের ডিজিটাল অর্থনীতিতে আরও বেশি গ্রাহকের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে একসঙ্গে কাজ করবে।
বাংলাদেশের বৃহত্তম মোবাইল পেমেন্ট অপারেটর বিকাশ ৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষকে মোবাইল আর্থিক সেবা দিচ্ছে। পরিবারের প্রয়োজন পূরণ করছে। হুয়াওয়ের অত্যাধুনিক ডিজিটাল ফাইন্যান্স সলিউশনের মাধ্যমে বিকাশের সেবা প্রদানে আরও গতিশীলতা আনছে।
হুয়াওয়ে সাউথ এশিয়া রিজিয়নের প্রেসিডেন্ট এবং হুয়াওয়ে বাংলাদেশের সিইও প্যান জুনফেং এবং বিকাশের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও কামাল কাদীর সমঝোতা স্মারক সই করেন।
‘স্মার্ট ফিনটেক: ইনক্লুসিভ. ইনোভেটিভ. ইন্সপায়ারিং বাংলাদেশ’ শিরোনামে সমঝোতা স্মারক অনুষ্ঠানে বিকাশ প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও কামাল কাদীর সহযোগিতার তাৎপর্য উপস্থাপন করেন।
কামাল কাদীর বলেন, ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিকাশ সবার জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং সেবা নিশ্চিতে কাজ করছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আবির্ভাবের সময়ে ডিজিটাল আর্থিক ইকোসিস্টেম এবং স্মার্ট জাতি গঠনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বিকাশ ও হুয়াওয় ব্র্যান্ডের যৌথ প্রচেষ্টার লক্ষ্য হলো আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং উদ্ভাবনী সমাধানের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা।
বিকাশ বাংলাদেশের এমএফএস খাতে অভূতপূর্ব বিল্পব নিয়ে এসেছে। প্রতিনিয়ত সেবার আধুনিকায়নের মাধ্যমে ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট সেবার সঙ্গে এখন বিকাশের মাধ্যম সব ধরনের বিল পে, রেমিটেন্স, বয়স্ক ভাতা, ছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা এখন বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন করা হচ্ছে। সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা বিকাশ এজেন্টরা প্রথাগত ব্যাংকিং সেবার বাইরের মানুষের জন্য এক-একজন এজেন্ট মানবরূপী এটিএম হিসেবে কাজ করছে। বিকাশ সেবার সঙ্গে হুয়াওয়ের প্রযুক্তি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।
হুয়াওয়ে সাউথ এশিয়া রিজিয়নের প্রেসিডেন্ট এবং হুয়াওয়ে বাংলাদেশের সিইও প্যান জুনফেং জানালেন, বাংলাদেশে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি ত্বরান্বিত করাই হলো হুয়াওয়ে ও বিকাশ সমঝোতার অন্যতম লক্ষ্য। ২০১৭ সাল থেকে হুয়াওয়ে মোবাইল মানি প্ল্যাটফর্মের সাহায্যে মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) খাতকে ডিজিটালাইজ করার জন্য বিকাশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। প্ল্যাটফর্মটি ই-ওয়ালেট ও ন্যানো-লোনের মতো পরিষেবা দিচ্ছে। যা সাধারণ মানুষের জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং উদ্ভাবন নিয়ে আসছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের আরও বেশি মানুষকে ক্ষমতায়ন এবং ডিজিটাল অর্থনীতির সুবিধা গ্রহণের সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে সহযোগিতা আরও জোরদার করব।
স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে ক্যাশলেস সোসাইটি। এমএফএস বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল খাত বাংলাদেশকে সেই ক্যাশলেস সোসাইটিতে রূপান্তরিত করছে। বাংলাদেশের এমএফএস খাত প্রসারের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক লেনদেন বিস্তৃত হয়েছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। শিক্ষা-বৃত্তি, সামাজিক সুরক্ষা ভাতাসহ নানা সরকারি সুবিধা নিশ্চিতে সহায়ক এমএফএস পদ্ধতি। যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে।
সময়ের অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে চলেছে হুয়াওয়ে। ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশের এমএফএস খাতে কাজ করছে হুয়াওয়ে। মোবাইল মানি ওয়ালেট সিস্টেম ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে বিকাশকে সেবা দিয়েছে হুয়াওয়ে। ২০১৭ সালে মোবাইল মানি ওয়ালেটের সবশেষ সংস্করণের সেবায় আপগ্রেড করে বিকাশ। ২০১৮ সাল থেকে হুয়াওয়ের হার্ডওয়্যারও ব্যবহার শুরু করে বিকাশ। ফলে হুয়াওয় ব্র্যান্ডের সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার উভয়ই ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের মার্কেটে সেবা প্রদান করা শুরু করে বিকাশ।
২০১৯ সাল থেকে ক্রমাগত টিপিএস (ট্রান্সজেকশন পার সেকেন্ড) চাহিদা বাড়তে থাকায় বিকাশ সম্পূর্ণভাবে হুয়াওয়ে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারে নির্ভরশীল হয়। ২০২০ সালে বিকাশ হুয়াওয়ের স্মার্ট ফিনটেক প্ল্যাটফর্মে শিফট করে। ফলে সেন্ড-মানি, ক্যাশ আউট ছাড়াও বিকাশ ওয়ালেটে অ্যাড মানি, ইউটিলিটি বিল পে, ক্রেডিট কার্ডের বিল পে, লোনের মত আধুনিক সব সুবিধা যুক্ত হয়। যা বাংলাদেশের এমএফএস খাতে মোবাইল মানির ব্যবহার বহুমাত্রিক সুবিধার সংযোজন করে। ফলে হুয়াওয়ে এবং বিকাশ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভবিষ্যতে যৌথভাবে কাজ করবে।
ফিনটেক পণ্যসেবার উদ্ভাবনের পর থেকে হুয়াওয়ে বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়া ও আফ্রিকার ৩০টিরও বেশি দেশে নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম স্থাপন করেছে। বিশ্বের ৪০ কোটিরও বেশি মানুষ হুয়াওয়ের ফিনটেক সেবার সুবিধা পাচ্ছেন।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী প্রতিনিধি সরদার এম আসাদুজ্জামান এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) প্রসঙ্গে বলেন, মূল উদ্যোগের কেন্দ্রে আছে ‘স্মার্ট ফিনটেক, অন্তর্ভুক্তি, উদ্ভাবনী এবং অনুপ্রেরণা’ আদলের ধারণা। হুয়াওয়ে এবং বিকাশ উভয়েই বিষয়টি উপলব্ধি করে বাস্তবায়নে কাজ করছে। ভবিষ্যৎ সহযোগিতামূলক সমঝোতা উদ্যোগটির বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।
ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের অফিসার ইনচার্জ সুজান ভাইজ জানান, এসডিজি আমার কাছে একটি ভিশন। এসডিজি হলো সেই গন্তব্য যেখানে ২০৩০ সালের লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই। আর এক্ষেত্রে আমরা সঠিক পথেই আছি। স্মার্ট ফিনটেক সেই গন্তব্যে পৌঁছানোর কার্যকর মাধ্যম।