ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন নিষ্পত্তিতে আলোচনায় ‘কারেন্সি সোয়াপ’

রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন নিষ্পত্তিতে আলোচনায় ‘কারেন্সি সোয়াপ’

ওবায়দুল্লাহ রনি

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে ঝুঁকি বাড়ছে। দেশটির সঙ্গে আটকে থাকা লেনদেন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আবার আলোচনায় এসেছে কারেন্সি সোয়াপ তথা মুদ্রার অদলবদল পদ্ধতি। আপাতত তৃতীয় দেশের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানিসহ কিছু পরিশোধ হলেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিশোধ আটকে আছে। বিকল্প হিসেবে চীনের একটি ব্যাংকের মাধ্যমে রূপপুরের দেনা পরিশোধের চুক্তি সই হলেও আপাতত তাও আর হয়নি। এ কারণে কারেন্সি সোয়াপ পদ্ধতিতে লেনদেন নিষ্পত্তির বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে।

জানা গেছে, রাশিয়ার সঙ্গে আটকে থাকা লেনদেন নিষ্পত্তি বিষয়ে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বর্তমান বাস্তবতায় কারেন্সি সোয়াপকেই বিকল্প হিসেবে ধরা হচ্ছে। রাশিয়া কারেন্সি সোয়াপে রাজি হলে এক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বিপরীত মুদ্রায় অ্যাকাউন্ট খুলবে। অর্থাৎ রাশিয়ার ব্যাংকে রুবলে অ্যাকাউন্ট খুলবে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকায় অ্যাকাউন্ট খুলবে রাশিয়া। আমদানি, রপ্তানি ও অন্যান্য বাণিজ্যে সমপরিমাণ বাণিজ্যিক দায় নিজ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিয়ে দেবে। শুধু অতিরিক্ত পাওনা আন্তর্জাতিকভাবে বিনিময়যোগ্য তৃতীয় মুদ্রায় এক দেশ আরেক দেশকে পরিশোধ করবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্ধারিত সময়ে কোনো দায় পরিশোধ করতে না পারলে খেলাপি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। খেলাপি এড়াতে আইএমএফের পরামর্শে রাশিয়ার পাওনার সমপরিমাণ অর্থ এরই মধ্যে সোনালী ব্যাংকে একটি ‘স্ক্রো’ হিসাব খুলে জমা রাখছে। বর্তমানে এই হিসাবে জমা আছে ৩৩০ মিলিয়ন ডলার। এর আগে সরাসরি রাশিয়াকে দায় শোধ না করে পিপলস ব্যাংক অব চায়নার মাধ্যমে পরিশোধের জন্য গত এপ্রিলে দুই দেশের মধ্যে একটি প্রটোকল চুক্তি সই হয়। তবে বাংলাদেশ থেকে অন্য যে কোনো দেশের লেনদেন নিষ্পত্তির একমাত্র উপায় ‘সুইফট’। ফলে কেন অর্থ দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ঝুঁকির মুখে পড়বে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, রাশিয়া অনেক আগে থেকে তাদের প্রস্তুত করা লেনদেন নিষ্পত্তির মাধ্যম ‘এসপিএফএস’ নেটওয়ার্কে বাংলাদেশকে যুক্ত করতে চাইছে। তবে বাংলাদেশ তাতে রাজি হয়নি। আবার চীনের মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের বিষয়টি সামনে আসছে। যে কারণে আপাতত চীনের মাধ্যমে পরিশোধ করা যাচ্ছে না। ঘুরেফিরে বিকল্প হিসেবে কারেন্সি সোয়াপের বিষয়টি সামনে আসছে। অবশ্য কারেন্সি সোয়াপ হলেও রূপপুরের অর্থ পরিশোধের সমস্যা এখনই সমাধান হবে না। তবে বাণিজ্যিক লেনদেন নিষ্পত্তি সহজ হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাশিয়ার প্রস্তুত করা লেনদেনের বার্তা পাঠানোর মাধ্যম এসপিএফএস নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় বাংলাদেশকে যুক্ত হওয়ার জন্য অনেক আগে থেকে প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। তবে তাতে সায় না দিয়ে এর পরিবর্তে কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তির প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। রাশিয়া এ উপায়ে লেনদেনে রাজি ছিল না। নতুন করে আবার এই কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তির প্রস্তাব দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় তৈরি পোশাকসহ কিছু পণ্য রপ্তানি হয়। দেশটি থেকে গম, প্রতিরক্ষা সরঞ্জামসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ঋণ চুক্তি হয়। এ প্রকল্পে চুক্তিমূল্যের ৯০ শতাংশ তথা ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার অর্থায়ন করছে রাশিয়া। প্রকল্পের মূল ঋণ পরিশোধ শুরু হবে ২০২৭ সালের মার্চ থেকে। তবে প্রকল্প ঋণের বাইরে প্রাথমিক কাজের জন্য দেশটি থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ নেয় বাংলাদেশ। ওই ঋণ পরিশোধ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। মূলত রাশিয়ার যেসব ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন হয়, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে।

এ রকম পরিস্থিতিতে পরিশোধ স্থগিত রাখার জন্য গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছিল রাশিয়া। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না হলে কোনো ধরনের জরিমানা, বাড়তি সুদ বা চার্জ না নেওয়ার কথা তখন জানানো হয়েছিল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘ হওয়ায় বিকল্প উপায়ে পাওনা আদায়ের চেষ্টা করছে দেশটি।

আরও পড়ুন

×