ঋণ বাড়িয়ে জ্বালানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ

মেসবাহুল হক
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০
জ্বালানি তেল আমদানিতে ইতোমধ্যে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৪০ কোটি ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে জেদ্দাভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফিন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি)। সংস্থাটি থেকে আরও ৯০ কোটি ডলার ঋণ নিয়ে দেশে জ্বালানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত এই ৯০ কোটি ডলারের মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যয় করা হতে পারে ৪০ কোটি ডলার। বাকি ৫০ কোটি ডলার ব্যয় হবে বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) মাধ্যমে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে।
গত ৯ জুলাই জ্বালানি তেল আমদানিতে ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সহযোগী সংস্থা আইটিএফসি ১৪০ কোটি ডলার ঋণ দিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এ অর্থ দিয়ে বিপিসি চলতি বছরের জুলাই থেকে আগামী জুন পর্যন্ত অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারবে। আইটিএফসি থেকে নিয়মিত ঋণ নিয়ে তেল আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ। আইডিবির সদস্য হিসেবে এ ব্যাংকে মালিকানা আছে বাংলাদেশের। সব মিলিয়ে প্রায় ৩ শতাংশের কাছাকাছি সুদে আইটিএফসি থেকে ঋণ পেয়ে আসছে বিপিসি।
এর আগে সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাচ্ছিল না সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এতে জ্বালানি তেল আমদানির বেশ কিছু বিল যথাসময়ে পরিশোধ করতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল আমদানিকারক সংস্থা বিপিসি। গত মে মাসে আমদানি বাবদ ৩০ কোটি ডলারের বেশি বিল বকেয়া ছিল। ওই সময় দ্রুত বকেয়া পরিশোধ করা না গেলে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে বলেও শঙ্কা তৈরি হয়। মূলত গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বাংলাদেশে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়ে। ২০২৩ সালে এসে ডলার সংকট আরও প্রকট হয়। আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়াসহ আরও কিছু উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে বাজেট সহায়তা নিয়ে সংকট মোকাবিলা করা হচ্ছে।
ডলার সংকটে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে আইটিএফসি থেকে নেওয়া ১৪০ কোটি ডলার ঋণের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করতে পারছিল না বিপিসি। অর্থ এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে সংস্থাটি জানিয়েছিল, আগে জ্বালানি তেল আমদানির ডলার ব্যাংকগুলো নিজস্ব উৎস থেকে দিতে পারত। ডলার সংকটের কারণে এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকও আইটিএফসির ঋণ শোধের জন্য প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহ করতে পারছে না। এ কারণে নির্দিষ্ট তারিখের পরিবর্তে ৩ থেকে ৪ কিস্তিতে অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক নিয়মের পরিপন্থি। তাই ওই অর্থবছরের জন্য আইটিএফসির অনুমোদিত ১৪০ কোটি ডলার পরিশোধের সময় ছয় মাসের বদলে এক বছর বা তারও বেশি সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানায় বিপিসি। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধে রাজি হয়নি আইটিএফসি।
এদিকে বাংলাদেশকে দেওয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল– এ বছরের জুনে প্রকৃত (নিট) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকতে হবে ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার। ওই সময় দেশে নিট রিজার্ভ ছিল প্রায় ২ হাজার কোটি ডলার। অর্থাৎ আইএমএফের শর্ত পূরণ থেকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে রয়েছে সরকার। তাই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি কমিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সরকারি আমদানি বিঘ্নিত হতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে বিপিসির পরিচালক (অর্থ) কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক সমকালকে বলেন, বর্তমানে ডলার নিয়ে খুব একটা সংকট নেই। প্রয়োজনীয় দায় পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে। তবে আগামীতে যাতে আরও সংকট তৈরি না হয় তার আইটিএফসি থেকে অতিরিক্ত ৪০ কোটি ডলারের ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব অর্থ এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ ঋণ পাওয়া গেলে তা জ্বালানি তেল আমদানি করে দেশে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করবে।
জানতে চাইলে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব এ কে এম শাহাবুদ্দিন সমকালকে বলেন, এ ঋণ নেবে বিপিসি ও পেট্রোবাংলা। তবে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় থাকবে ইআরডি। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন তারা।
- বিষয় :
- ঋণ
- জ্বালানি সরবরাহ
- বিপিসি