ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ভ্যাট

খরচ বাড়বে শিল্প স্থাপনে

বাজেট বিশ্লেষণ

খরচ বাড়বে শিল্প স্থাপনে

আবু কাওসার

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০১৯ | ২১:০৪

যে কোনো শিল্প স্থাপনে মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারিজ) অপরিহার্য উপকরণ। এটি ছাড়া শিল্প স্থাপন সম্ভব নয়। উদ্যোক্তারা যাতে শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত হন, সে জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে কম হারে শুল্ক্ক আরোপ করা হয়। মূলত দেশে দ্রুত শিল্পায়নের লক্ষ্যে এই সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। এখন আমদানি পর্যায়ে শুল্ক্ক কাঠামোর যে স্তর রয়েছে, তাতে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে মাত্র ১ শতাংশ শুল্ক্ক (কাস্টম ডিউটি) রয়েছে। এর বাইরে অন্য কর নেই।

দেশীয় শিল্প বিকাশের ধারা অব্যাহত এবং উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে একই অর্থাৎ ১ শতাংশ শুল্ক্ক হার বহাল রাখা হলেও এর সঙ্গে বাড়তি মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ঘোষণায় আমদানি পর্যায়ে বাণিজ্যিক এবং বাণিজ্যিক আমদানির বাইরে (কমার্শিয়াল-নন কমার্শিয়াল) সকল পণ্যে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেওয়া হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। সূত্র জানায়, বাজেটে এই ভ্যাট প্রস্তাব কার্যকর হলে তখন স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মূলধনী যন্ত্রপাতি আনতে বিদ্যমান ১ শতাংশ শুল্ক্কের সঙ্গে বাড়তি ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ১ শতাংশ শুল্ক্ক হারে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি হয় এমন কাস্টমসের শ্রেণীকৃত বা এইচএস কোডভুক্ত পণ্যের সংখ্যা ৬৫৯টি। নতুন আইনে ওই সব পণ্যের ওপর বাড়তি ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। ফলে ওই সব পণ্যের আমদানি খরচ বাড়বে।

বিষয়টি আরও পরিস্কার করা যায়। ধরা যাক, দেশীয় একজন উদ্যোক্তা একটি সিরামিক শিল্প স্থাপন করবেন অথবা সম্প্রসারণ করবেন।

এর জন্য তাকে ১০ কোটি টাকার মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হবে। সমপরিমাণ মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য আগে শুল্ক্ক দিতে হতো ১০ লাখ টাকা। বাজেটে নতুন কর প্রস্তাব কার্যকর হলে ওই শিল্প উদ্যোক্তাকে ১ শতাংশের শুল্ক্কের সঙ্গে আরও অতিরিক্ত ৫ শতাংশ ভ্যাটসহ মোট ৬ শতাংশ শুল্ক্ক-কর দিতে হবে। ফলে ১০ কোটি টাকার মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য তার খরচ পড়বে ৬০ লাখ টাকা।

প্রাথমিক পর্যায়ে ওই শিল্প উদ্যোক্তার খরচ বাড়বে ছয় গুণ বা তারও বেশি। স্থানীয় উদ্যোক্তারা বলেছেন, মূলধনী যন্ত্রপাতির ওপর ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব কার্যকর হলে তাদের ব্যয় বেড়ে যাবে। এতে করে অনেকেই শিল্প স্থাপনে নিরুৎসাহিত হবেন।

ভ্যাট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মূলধনী যন্ত্রপাতির ওপর ভ্যাট হয় না। এটি অযৌক্তিক, যা শিল্পায়নের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করবে। যোগাযোগ করা হলে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম সমকালকে বলেন, এটি অযৌক্তিক এবং এই কর অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে। সরকার ব্যবসাবান্ধব। প্রস্তাবিত বাজেটে এই পদক্ষেপ সরকারের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যদিও এনবিআর বলছে যে, ওই ভ্যাট পরে ফেরত পাওয়া যাবে। তাতে কর-ভার বাড়বে না- এ বিষয়ে আবুল কাশেম বলেন, সেটা অন্য বিষয়। তবে প্রাথমিকভাবে শিল্পের খরচ বাড়বে। এনবিআরের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ের অভাবে এটা করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

এনবিআর সূত্র বলেছে, আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট পরিশোধ করলেও পরবর্তী সময় রিটার্ন জমার দেওয়ার সময় ওই ভ্যাট ফেরত দেওয়া হবে। ফলে করের চাপ বাড়বে না। তবে উদ্যোক্তারা বলেছেন, সাধারণত আমাদের দেশে শিল্প স্থাপনের লক্ষ্যে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির পর বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে কমপক্ষে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগে। ফলে আমদানি পর্যায়ে প্রদেয় ভ্যাট পরিশোধ করার পর তা ফেরত পেতে ওই সময় পর্যন্ত উদ্যোক্তাকে অপেক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া প্রত্যেক বছর বাজেটে পরিবর্তন হয়। নতুন নিয়ম কার্যকর করলে আদায়ে জটিলতা তৈরি হবে। মাঠ পর্যায়ে একাধিক ভ্যাট কমিশনার সমকালকে বলন, ৯০ শতাংশ ব্যবসায়ী এখনও ভ্যাট রিটার্ন দেন না। এ ছাড়া ভ্যাট বিভাগে অটোমেশন সম্পূর্ণ হয়নি। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট ফেরত (রিফান্ড) প্রদানে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হবে। এনবিআর সূত্র বলেছে, বাজেট ঘোষণার পর নিয়ম অনুযায়ী শুল্ক্ক-কর আদায়ে চট্টগ্রামসহ সকল কাস্টম হাউসে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং এর মধ্যে তা কার্যকর হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে মূলধনী যন্ত্রপাতি বাবদ আমদানি হয় মোট ৩৯ হাজার কোটি টাকার মতো। চলতি অর্থবছরে এপ্রিল পর্যন্ত আমদানি হয় ৩৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির পাশাপাশি সার, বীজ ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধে বাড়তি ভ্যাট আরোপ করা হয়। আগে এসব পণ্যে শূন্য শতাংশ আমদানি শুল্ক্ক ছিল। প্রস্তাবিত বাজেটে এর সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। ফলে এসব পণ্যের দামে প্রভাব পড়বে।

আরও পড়ুন

×