বৈষম্য কমাতে কৌশল নেই বাজেটে: সিপিডির সংলাপে বক্তারা
রোববার প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ। ছবি: সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০১৯ | ১৬:২২ | আপডেট: ২৩ জুন ২০১৯ | ১৬:৪২
দারিদ্র্যের হার কমলেও দেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য বাড়ছে। কিন্তু এবারের বাজেটে বৈষম্য কমানোর কৌশল নেই। বাজেটে গরিব ও মধ্যবিত্তের তুলনায় ধনীদের বেশি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সুষম উন্নয়নের কোনো রূপরেখাও বাজেটে নেই। ফলে বৈষম্য আরও প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রোববার আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সংলাপে বক্তাদের কেউ কেউ এ অভিমত দেন। রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে অনুষ্ঠিত এ সংলাপে সভাপতিত্ব করেন অর্থনীতিবিদ সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
রেহমান সোবহান বলেন, সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে অর্থনৈতিক অগ্রগতি হচ্ছে। দারিদ্র্যের হার কমেছে। তবে বৈষম্য বেড়েছে। সরকারের নীতির কারণে অল্পসংখ্যক লোকের হাতের সম্পদ জমা হচ্ছে। বিভিন্ন খাতে সরকারি বরাদ্দের কারণেও বৈষম্য বাড়ছে। আবার কোনো ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া এবং না নেওয়ার কারণেও বৈষম্য বাড়ছে।
তিনি বলেন, রাতারাতি বৈষম্য কমানো সম্ভব নয়। সরকারি বিভিন্ন খাতের ভর্তুকি, কর মওকুফের অর্থ সঠিক ব্যবহারের মধ্যেমে বৈষম্য কমানো যায়। আবার খেলাপি ঋণ আদায় করে সঠিকভাবে ব্যবহার করেও বৈষম্য কমানো সম্ভব। প্রকল্প শেষে এর থেকে কী সুফল পাওয়া গেল সে বিষয়ে ভেবে দেখা দরকার। একইভাবে অর্জিত প্রবৃদ্ধি থেকে জনগণ কী পেল সে বিষয়েও আলোচনা করতে হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের প্রথম দিকে বৈষম্য বৃদ্ধি স্বাভাবিক। বৈষম্যের চেয়ে দারিদ্র্য বিমোচনই সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার। এ লক্ষ্যে গ্রামীণ পর্যায় পর্যন্ত অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সামান্য হলেও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। এসব পদক্ষেপের কারণে বৈষম্য কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
এমএ মান্নান বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল জনগণ পাচ্ছে। হাওর, বাজার, মাঠে গেলে এসব জনগণকে পাওয়া যায়। তারাই ১০ বছরের উন্নয়নের চিত্রের বর্ণনা করছে। অন্যদিকে সমালোচনাকারীরা থাকেন ঢাকার পাঁচতারকা হোটেলে কিংবা জাতীয় প্রেস ক্লাবে। এ কারণে উন্নয়নের প্রকৃত চিত্র তারা পান না।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাজেটের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং আমলারা। দেশে এরা সবাই একটি শ্রেণী তৈরি করেছেন। জনগণের কোনো মতামত বাজেটে প্রতিফলিত হয় না। ৮ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে রাজনৈতিক পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার।
তিনি বলেন, ১২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হচ্ছে। ৬ বিলিয়ন ডলারের রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলার। প্রকল্পের টাকা লুটপাট হচ্ছে এবং পাচার হচ্ছে। এসব মেগা প্রকল্পের কারণে বিদেশি ঋণের খপ্পরে পড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ব্যাংকিং খাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে মরতে দেওয়া উচিত। জনগণের করের টাকায় সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণ করা ঠিক নয়।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেটে কর কাঠামোতে ধনী শ্রেণিকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এর থেকে বেশি সুফল পাবেন। ৩০ বছরের তৈরি পোশাক খাতে বাড়তি প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে আরও ভাবা দরকার ছিল। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য পাঁচ হাজার টাকা ভর্তুকির দাবি জানানো হয়েছিল; কিন্তু বাজেটে তা দেওয়া হয়নি।