ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

এ বাজেট জনকল্যাণমূলক: প্রধানমন্ত্রী

এ বাজেট জনকল্যাণমূলক: প্রধানমন্ত্রী

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -ফোকাস বাংলা

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০১৯ | ১১:১২ | আপডেট: ১৪ জুন ২০১৯ | ১৯:৫৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট জনকল্যাণমুখী। এই বাজেট বাস্তবায়ন হলে দেশ আরও সমৃদ্ধ হবে। সবাই উপকৃত হবেন। তিনি বলেন, সোনার বাংলা গড়ে তোলা, দেশকে সমৃদ্ধ ও উন্নত করা, নাগরিকদের কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য এবং জনগণ যাতে সোনালি দিন দেখতে পায়, তার সব পরিকল্পনা রয়েছে নতুন বাজেটে।

গতকাল শুক্রবার শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ থাকায় প্রধানমন্ত্রী এবার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এবং এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে সম্মান জানিয়ে মঞ্চে বসান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় মুহিতকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আপনি পাশে থাকলে আমি শক্তি পাই।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সাধারণ মানুষ খুশি কি-না, তাদের মঙ্গল হচ্ছে কি-না- সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এখন আমাদেরকে কেউ ভিক্ষুকের জাতি মনে করে না। এটাই সব থেকে বড় অর্জন। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে অপ্রদর্শিত টাকা রয়েছে। নানাভাবে এ টাকা পাচার হচ্ছে। পাচার হওয়া অর্থ অর্থনীতির মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে জিনিসপত্রের দাম সহনীয় থাকবে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণকে কষ্ট দিয়ে নয়, বরং সবাইকে সম্পৃক্ত করে রাজস্ব আদায় বাড়ানো হবে। তিনি আরও বলেন, সরকার সবাইকে চাকরি দিতে পারে না। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। নিজে যাতে কিছু করে স্বাবলম্বী হতে পারে, বাজেটে তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রথমে লিখিত বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। এর পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মাঝে মাঝে রসিকতা করেন। প্রথা অনুযায়ী বাজেট ঘোষণার পরের দিন সংবাদ সম্মেলন করেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু অর্থমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় রেওয়াজ ভেঙে এই প্রথম বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন করলেন সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার সূচনা বক্তব্যে বলেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাই প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন। এ ধরনের ঘটনা সংসদীয় সরকার ইতিহাসে বিরল বলে জানান অর্থ সচিব। এর পরপরই বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।

লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার হলো আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া। কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মেগা প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। তিনি বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বেকারত্ব ঘোচাতে ব্যবসা শুরুর জন্য ১০০ কোটি টাকার তহবিল করা হয়েছে। কৃষিপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সারে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হয়েছে। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গ্রামের মানুষ যাতে শহরের মতো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পায়, তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাজেটে আমদানি করা চিনির ওপর শুল্ক্ক বাড়ানো প্রসঙ্গে রসিকতা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বেশি চিনি খেলে ডায়াবেটিস হয়। সে জন্য চিনির শুল্ক্ক বাড়ানো হয়েছে।'

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়াসহ যেসব বিষয়ে সমালোচনা হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে তার জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অপ্রদর্শিত আয়ের সুযোগ না দিলে দেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে যাবে। কর ফাঁকি হবে। এসব বন্ধে নির্ধারিত হারে অতিরিক্ত কর দিয়ে বিনিয়োগ করলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না। অপ্রদর্শিত টাকা আগে মূলধারায় আনতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আগেও বিভিন্ন সরকারের আমলে ছিল। এখন আবার দেওয়া হলো। তিনি রসিকতা করে বলেন, 'কে কোথায় টাকা গুঁজে রেখেছে তার কোনো ঠিক নেই। পরে আবার ইঁদুরে না খায়।' একজন সাংবাদিক জানতে চান কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় সৎ মানুষ নিরুৎসাহিত হবে কি-না। এর জবাবে তিনি বলেন, 'যারা সৎ তাদের মধ্যে দৃঢ়তা থাকে, আত্মবিশ্বাস থাকে। সততার অনেক পরীক্ষা আমি দিয়েছি। সৎ মানুষের কোনো সমস্যা হয় না। বিপদে পড়ে না। কাজেই সৎ মানুষের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। সৎ মানুষের অসুবিধা হলে সরকার দেখবে।'

অর্থনৈতিক অপশাসনের সুবিধাভোগীদের পক্ষে গেছে বাজেট- গবেষণা সংস্থা সিপিডির এমন মতামতের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কিছু লোক থাকে, যাদের মানসিক অসুস্থতা থাকে। তাদের কিছুই ভালো লাগে না। যখন দেশে একটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি থাকে, যখন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়, সাধারণ মানুষের উন্নতি হয়, তখন তারা কোনো কিছুই ভালো দেখে না। সব কিছুতেই কিন্তু খোঁজে। আসলে ভালো না লাগা পার্টির কিছুই ভালো লাগে না। তিনি বলেন, যারা সমালোচনা করে, তারা করে যাক। সমালোচনা ভালো। কিন্তু এত সমালোচনা করেও আবার বলবে, তারা কথা বলতে পারছেন না। এ রোগটাও আছে। এটা অনেকটা অসুস্থতার লক্ষণ।

খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ব্যাংক খাতে সুদের হার অত্যন্ত বেশি। আর সুদ ধরা হয় চক্রবৃদ্ধি হারে। ফলে যখন হিসাব প্রকাশ করা হয় তখন চক্রবৃদ্ধি হারে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বড় দেখায়। প্রকৃত ঋণটা যদি ধরা হয়, তাহলে দেখা যাবে অত বড় নয়। এ সময় তিনি পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মালিকদের খেলাপি ঋণ আছে কি-না, থাকলে তা নিয়ে সংবাদ প্রকাশেরও আহ্বান জানান।

উত্তরাঞ্চলে উন্নয়ন-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নে সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে মঙ্গা নেই। সড়ক, ব্রিজ, পুলসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। উত্তরা ইপিজেড করা হয়েছে। বিমানবন্দর চালুরও উদ্যোগ রয়েছে।

ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়ন না হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সব সময় চেয়েছে সুদহার যেন সিঙ্গেল ডিজিটে থাকে। সিঙ্গেল ডিজিটে রাখার জন্য কিছু সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক বেসরকারি ব্যাংক তা মানেনি। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে থাকলে বিনিয়োগ বাড়বে। কারণ চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বাড়তে থাকলে মানুষ ব্যবসা করতে পারে না। ব্যাংক খাতের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ব্যাংক কোম্পানি আইন করা হবে। সরকারি ব্যাংক নিয়ে চিন্তার কিছু নেই বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধানের গুদাম নির্মাণ হচ্ছে। ধান কেনা হবে। চার লাখ টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হয়। কৃষি উৎপাদনে কৃষকদের নিজস্ব অর্থ বিশেষ ব্যয় হয় না। বলতে গেলে সরকারই সবচেয়ে বেশি অর্থ দিয়ে থাকে। কৃষকের সব রকমের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে সরকার। এ জন্যই এত ধান উৎপাদন হয়েছে। না হলে এত ধান উৎপাদন হতো না। তিনি আরও বলেন, কৃষকদের ভালো-মন্দ দেখা সরকারের দায়িত্ব। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, বিশ্বে ধান উৎপাদনে চতুর্থ। বেশি ধান উৎপাদন করতে পারলে কৃষক বেশি ধান বেচতে পারবে। সরকার তো ধান ক্রয় করছেই।

নতুন বাজেটে তিন কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার কথা উল্লেখ থাকলেও কীভাবে করা হবে তার দিকনির্দেশনা নেই কেন জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মসংস্থান তৈরির কথা বলা হয়েছে। চাকরি দেওয়ার কথা বলা হয়নি। ১৬ কোটি মানুষকে কি চাকরি দেওয়া যায়? পৃথিবীর কোনো দেশ কি দেয়? মানুষ যেন কাজ করে খেতে পারে, সেই সুযোগটি তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, বাজেটে ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ আছে। প্রযুক্তি শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা বাড়ানো হবে। সরকার চায় প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষিত হয়ে নিজের কাজ নিজে করা শুরু করুক। কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে।

আরও পড়ুন

×