গত কয়েক বছর বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ কম থাকায় কিছুটা স্বস্তিতে ছিল সরকার। বাজেট বাস্তবায়ন অনেকটা সহজ হয়। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের আক্রমণে সব হিসাব পাল্টে গেছে। আসন্ন বাজেটে ভর্তুকির চাপ সামলানো সরকারের জন্য কঠিন হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কৃষি, রপ্তানি, খাদ্যসহ অন্যান্য খাতে ভর্তুকি বাবদ সর্বমোট ৫৪ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব থাকছে। এই বরাদ্দ চলতি বছর সংশোধিত বরাদ্দের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ ৪৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত পাঁচ অর্থবছরে বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভর্তুকিতে বরাদ্দের পরিমাণ পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে গড়ে বেড়েছে ১০ শতাংশ। সে তুলনায় আসন্ন বাজেটে এ খাতে বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব থাকছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেছেন, ভর্তুকি বাড়লেও তেমন চাপে পড়বে না সরকার। কারণ চলতি অর্থবছর সংশোধন করে বাজেটে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত তা পুরোপুরি খরচ হবে না। ফলে সাশ্রয় করা অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করা যাবে।
বর্তমানে ছয় থেকে সাতটি খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়। এর মধ্যে বিদ্যুৎ, কৃষি, গ্যাস ও জ্বালানি, রপ্তানি, খাদ্য, পাট ও পাটজাতপণ্য উল্লেখযোগ্য। এর বাইরে আরও কিছু খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়। তবে এসব খাতে বরাদ্দ খুব কম থাকে। জানা যায়, আগামী বাজেটে খাদ্য ও প্রণোদনা ছাড়া অন্যান্য খাতে বরাদ্দ তেমন কোনো হেরফের হবে না।
করোনাকালে কম দামে ও বিনামূল্যে চাল বিতরণ করতে হচ্ছে সরকারকে। ফলে খাদ্যে ভর্তুকি বাড়ছে অনেক। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে খাদ্যে ভর্তুকি বাবদ ৬ হাজার ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব থাকছে, যা সংশোধিত বাজেটে আছে ৪ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। বর্তমান বরাদ্দের চেয়ে এটা ২০ শতাংশ বেশি।
ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প পুনর্বাসনে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার। এ খাতেও বাড়তি ব্যয় করতে হবে। এই প্রণোদনা মূলত ঋণনির্ভর। এ জন্য শিল্প-সেবা খাতে ৩০ হাজার এবং এসএমইতে ২০ হাজার মোট ৫০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে। ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ। এর মধ্যে অর্ধেক সুদ দেবেন শিল্পের মালিক। বাকি অর্ধেক দেবে সরকার। ফলে এখানেও ভর্তুকি রাখতে হচ্ছে। জানা গেছে, মোট ঋণ ব্যবহার হলে এ খাতে সরকারের ভর্তুকি দিতে হবে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। একই সঙ্গে করোনার কারণে দুই মাসের জন্য ঋণের সুদ স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত সুদ বাবদ ২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি লাগবে। ফলে এসব ক্ষেত্রে ভর্তুকি বাবদ অতিরিক্ত মোট ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।
এ ছাড়া কৃষি খাতে সার-বীজসহ অন্যান্য উপকরণের জন্য ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব থাকছে। এর মধ্যে সার-ডিজেলের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা। বাকি অর্থ বীজ, কীটনাশকসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণে ব্যয় হবে। এ ছাড়া অন্য সব খাতে ভর্তুকি আগের মতো অপরিবর্তিত থাকছে। এর মধ্যে রপ্তানিতে ৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ ৯ হাজার কোটি টাকা, গ্যাস ও এলএনজি ৯ হাজার কোটি টাকা, রেমিট্যান্স ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা, পাট খাতে ৫০০ কোটি টাকাসহ সর্বমোট ৫৪ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকার বরাদ্দের প্রস্তাব থাকছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর সমকালকে বলেন, সঙ্গত কারণে খাদ্যে ভর্তুকি এবার বেশি লাগবে। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প পুনর্বাসনে আরও বেশি সহায়তা লাগবে। তিনি মনে করেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ অনেক খাত এখনও অদক্ষ। যে কারণে সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে। এসব খাতে দক্ষতা বাড়াতে পারলে বছরে কমপক্ষে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হতো। পাটকলগুলোর জন্য যে টাকা খরচ হয়, তা অপচয় বলে মনে করেন তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, করোনার কারণে রপ্তানিতে ভাটা পড়েছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে প্রবাসী আয় তথা রেমিট্যান্স প্রবাহে। কলকারখানা বন্ধ থাকায় ব্যবহার কমেছে বিদ্যুতের। আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেলের দাম কমে গেছে। এসব কারণে উল্লিখিত খাতগুলোয় চলতি অর্থবছর শেষে বরাদ্দের পুরো অর্থ খরচ হবে না। ফলে আশা করা হচ্ছে, বাজেট বাস্তবায়ন খুব কঠিন হবে না।














বিষয় : ভর্তুকির চাপ বাড়ছে

মন্তব্য করুন