বিদ্যুতে সঞ্চালন, বিতরণ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জ্বালানিতে গ্যাস আহরণের পরিমান বাড়ানোকে গুরুত্ব দিয়ে ২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এই বরাদ্দ চলতি ২০১৯-২০ অর্থ বছরের চেয়ে কম। চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটে এই দুই খাতে ২৮ হাজার ৫১টি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। বাজেটের প্রবৃদ্ধি ৮.৫৬ শতাংশ ধরা হলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে এক হাজার ২৯৩ কোটি টাকা কম বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম কমায় এবং গ্যাসের দাম বাড়ানোতে জ্বালানি খাতে কোন ভর্তুকি রাখা হয়নি। বিদ্যুতের সংকট সামাল দিতে থাকছে আট হাজার কোটি টাকার ভর্তুকির প্রস্তাব।

বাজেটে আগামী অর্থবছরের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য ২৪ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জন্য ১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। 

তবে নিজস্ব অর্থায়ন, বিভিন্ন তহবিল এবং ইসিএ ফাইনান্সিং মিলিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩০ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে বলে বিদ্যুৎ জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎখাতের ৯৩ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২৭ হাজার ৫৯৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং জ্বালানির ২৪ প্রকল্পে তিন হাজার ১৩৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা খরচ হবে।  বিদ্যুৎ খাতে ২৭ হাজার ৫৯৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকার মধ্যে অর্থ বিভাগ দেবে ২৪ হাজার ৮০৩ কোটি ৯৩ লাখ, ইসিএ (ঠিকাদারদের মাধ্যমে অর্থায়ন) হবে এক হাজার ৮৩৭  কোটি ৯৬ লাখ এবং নিজস্ব তহবিল থেকে আরো ৯৫৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

জ্বালানিতে তিন হাজার ১৩৮ কোটি ৬৫ লাখের মধ্যে অর্থ বিভাগ দেবে এক হাজার ৮৩৫ কোটি ৬২ লাখ, জিডিএফ (গ্যাস উন্নয়ন তহবিল) থেকে ২৬০ কোটি ২৯ লাখ এবং নিজস্ব খাত থেকে আরো এক হাজার ৪২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ২০৪১ সাল মেয়াদি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এখন যা সব মিলেয়ে ২৪ হাজার মেগাওয়াট। মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫১০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। 

বাজেট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে কেন্দ্র নির্মাণ এবং জমি অধিগ্রহণে থাকছে বেশিরভাগ বরাদ্দ। তবে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে। সঞ্চালনের ১৮ প্রকল্পে আগামী অর্থ বছর বরাদ্দ রাখা হয়েছে সাত হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। যা চলতি বাজেটে বরাদ্দের  চেয়ে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বেশি। 

বিতরণে ছয় প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটির জন্য পৃথক পৃথক প্রকল্প থাকছে। এর মধ্যে পিডিবির জন্যে প্রিপেইড মিটার ও বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়নে বরাদ্দ থাকছে। তিন পার্বত্য জেলার বিতরণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণেও পিডিবিকে বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে সাতটি প্রকল্পে, সৌর সেচ পাম্প প্রকল্পে এবং দেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের জন্য বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পৃথক পৃথক বরাদ্দ পাবে। ঢাকার দুই কোম্পানি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি  (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা ইলেকিক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি  ডেসকো বাজেটে ছয়টি করে পৃথক প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ পেয়েছে। দুটি কোম্পানিই প্রিপেইড মিটার এবং ভূগর্ভস্থ লাইন নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে এই অর্থ বিনিয়োগ করবে। এছাড়া ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ৪টি এবং নর্দান ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি তিনটি প্রকল্পে বরাদ্দ পেয়েছে।

জ্বালানিতে প্রায় সব প্রকল্পই সাজানো হয়েছে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধ করার জন্য। অনেকগুলো গ্যাস ক্ষেত্রের কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলনের পরিমান কমেছে। এজন্য ২২ টি ওয়েলহেড কম্প্রেসার কিনছে বিভিন্ন উত্তোলন কোম্পানি। এছাড়া গ্যাসের বিদ্যমান নেটওয়ার্ক উন্নয়নে বরাদ্দ থাকছে এবার বাজেটে।