- অর্থনীতি
- ‘আয়তন বাড়লেও বাজেটে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি’
বিভিন্ন দলের বাজেট প্রতিক্রিয়া
‘আয়তন বাড়লেও বাজেটে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি’

প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটকে ‘গতানুগতিক ও আমলাতান্ত্রিক’ আখ্যা দিয়ে এর সমালোচনা করেছে বিভিন্ন দল। তারা বলেছে, আয়তন বাড়লেও এই বাজেটে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি। করোনা মহাবিপর্যয়কালে পীড়িত মানুষকে বাঁচানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ প্রাধান্য পাওয়ার জনআকাঙ্খা উপেক্ষিত হয়েছে ঘোষিত বাজেটে।
বৃহস্পতিবার পৃথক বিবৃতিতে প্রস্তাবিত বাজেটের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এসব দলের নেতারা আরও বলেছেন, ধনীকে আরো ধনী ও গরিবকে আরো গরিব করা, ধন-বৈষম্য ও শ্রেণি-বৈষম্য বৃদ্ধি করা, সামাজিক অস্থিরতা ও নৈরাজ্য বৃদ্ধি করা ইত্যাদি হবে এই বাজেটের ফলাফল। এই বাজেট জাতির অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নৈরাজ্য, অস্থিতিশীলতা ও নাজুকতা বাড়িয়ে তুলবে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন এক বিবৃতিতে বলেন, বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প ও কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাঠামোগত পরিবর্তন আনা হলেও অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবনা এখনও প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক। করোনা আক্রান্ত দেশ ও বিশ্বের অর্থনীতির নীতির পরিস্থিতিতে ৮ দশমিক ২ ভাগ প্রবৃদ্ধি কতখানি বাস্তবসম্মত সেটা ভেবে দেখার বিষয়। উন্নয়ন ছয়মাস কিংবা এক বছরের জন্য নেমে থাকতে পারে, কিন্তু জীবন এক লহমার জন্য থেমে থাকতে পারে না।। প্রবৃদ্ধিকে মানুষের জীবনের উর্ধে স্থান দেওয়া সঠিক নয়।
বাজেটে সম্পদ ও মুনাফার ওপর কর আরোপ না করায় বিষ্ময় প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, এদেশে ধনীদের আর কত ছাড় দেওয়া হবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাংসদ হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক এবং সাংসদ শিরীন আখতার বিবৃতিতে বলেন, সবাই আশা করেছিল বৈশ্বিক মহামারি ও জাতীয় বিপর্যয়ের মধ্যে এবারের বাজেট গতানুগতিকতার বাইরে নতুন দিক উন্মোচনকারী বাজেট হবে। সার্বজনীন স্বাস্থসেবা ও সার্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টার শুরু এবারের বাজেট থেকেই শুরু হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু বাজেটে স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, কৃষি, খাদ্য, শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ কিছু বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা খুবই সামান্য।
তারা বলেন, এক কথায় বলা যায়, বাজেট প্রস্তাব গতানুগতিকতার গন্ডিতে আটকে আছে। বাজেট বাস্তবায়নে সক্ষমতা এবং ভয়ংকর দুর্নীতি দূর করে সুশাসন নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ শাহ আলম পৃথক বিবৃতিতে প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাখ্যান করে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট ৯৯ ভাগ মানুষের স্বার্থবিরোধী, গতানুগতিক ও আমলাতান্ত্রিক। এই বাজেট ১ ভাগ লুটেরা ধনিকদের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়েছে। এই বাজেট সাম্রাজ্যবাদ ও লুটেরা ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষার গণবিরোধী দলিল। উত্থাপিত বাজেট প্রস্তাব প্রত্যাহার করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং চলমান করোনাকালীন কঠোর বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য-শিক্ষা-কৃষি-কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে ৯৯ ভাগ মানুষের জন্য বাজেট প্রণয়নের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান নেতারা।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, করোনা দুর্যোগে আক্রান্ত খাতগুলো আলোচনায় যতটা এসেছে, বাজেটে ততটা মনোযোগ পায়নি। বাস্তবতাকে বিবেচনায় না নিয়ে প্রবৃদ্ধি বেশি দেখানোর প্রবণতা বাজেট বাস্তবায়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে আগের চেয়ে আরো নমনীয় শর্তে। ফলে কালো টাকা সাদা করার সুযোগে দুর্নীতি আরো বাড়বে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য-চিকিৎসা এবং কৃষি ও গ্রামীণখাত যে গভীর মনযোগ ও বরাদ্দ পাবার কথা ছিল তা পায়নি। মহামারীকালের বাজেট ও প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রীক গতানুগতিকতার দেয়াল অতিক্রম করতে পারেনি।
করোনা মহামারি মোকাবিলায় ফ্রন্টলাইন ক্লাস্টার্স ডাক্তার, নার্স, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, গণমাধ্যম কর্মী, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য বাজেটে বাড়তি প্রণোদনা বরাদ্দ রাখার আহ্বান জানান তিনি।
মন্তব্য করুন