প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য তিন হাজার ৮৬০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। অসহায় নারীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে । নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ও হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। প্রতি উপজেলায় হবে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র। 

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী সব বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতার আওতায় আনা হবে।  এতে ৩ লাখ ৫০ হাজার জন নতুন উপকারভোগী যোগ হবে এবং এ খাতে ২১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হবে।

নারীদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন নিয়ে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, নারীর রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সরকারের পদক্ষেপের ফলে জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আজ নারীর অগ্রগতি দৃশ্যমান হচ্ছে। এখন শিক্ষার সকল স্তরে মেয়েদের অংশগ্রহণ ছেলেদের তুলনায় বেশি। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে দেশের সব অঞ্চলে নারী পুরুষের সমতা অর্জিত হয়েছে। শিক্ষায় নারীদের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি কর্মক্ষেত্রেও নারীর অধিকহারে অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করেছে যা সিভিল সার্ভিসে নিয়োগ পরীক্ষার গত পাঁচটির ফলাফলে প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়া, দেশে কৃষির বাইরে উপার্জনশীল শ্রমশক্তির ৪১ শতাংশই নারী। লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে বাংলাদেশ ১৫৩টি দেশের মধ্যে ৫০তম স্থান নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ অবস্থানে আছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে মহিলাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। সুবিধাবঞ্চিত নারীদের তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে তথ্যআপা শীর্ষক প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। 

অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, গ্রামীণ দুঃস্থ ও অসহায় মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদান কার্যক্রমকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শক্তিশালী করা  হয়েছে। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে দেশে বাল্যবিবাহ সমস্যা নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর। 

মোস্তফা কামাল বলেন, সরকার নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের ভাত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া শিশু কল্যাণ নিশ্চিত করতে শিশু অধিদপ্তর প্রতি জেলায় শিশু কমপ্লেক্স নির্মাণ, সকল উপজেলায় শিশু দিবা যত্নকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। 

বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নারী লক্ষ্যভিত্তিক প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে এবং জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচির (এনএনএস) আওতায় কমিউনিটি নিউট্রিশন প্রোগ্রাম সম্প্রসারণ করা হয়েছে। শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং মেটারনাল, নিওনেটাল ও চাইল্ড এডোলসেন্ট হেলথ শীর্ষক দুইটি প্রকল্প বাস্তবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে মোট দুই হাজার ৮৫৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক নিরাপদ প্রসবসেবা এবং ৭২টি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে জরুরি প্রসূতিসেবা চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৪০টি, ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ২৫ টি, তিনটি ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ৩টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,  কুমিল্লায় ১টি ১০০ শয্যা বিশিষ্ট শিশু হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে।