কভিড-১৯ এ বিপর্যস্ত সমগ্রজাতি। এ অবস্থা মোকাবিলায় আমাদের স্বাস্থ্য সেবা খাতকে প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগ করা জরুরি। এরই ধারাবাহিকতায় সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং ইজেনারেশন যথাযথ প্রযুক্তির মাধ্যমে চলমান মহামারিতে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের সহায়তায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

কভিড-১৯ এর সম্ভাব্য চিকিৎসা হিসেবে প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগক রতে ‘সহযোদ্ধা-একটি প্লাজমা নেটওয়ার্ক’ নামে জাতীয় ডিজিটাল প্লাটফর্ম তৈরি করেছে আইসিটি ডিভিশন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, এটুআই ইনোভেশন ল্যাব, সন্ধানী এবং ইজেনারেশন, যার মাধমে দেশে প্লাজমা সংগ্রহ এবং সরবরাহের সুবিধা দেয়া হচ্ছে।

এক সাথে কাজ করা কেনো জরুরী সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করতে, বিশেষ করে চলমান কঠিন সময়ে উদ্ভাবনী স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যমে চিকিৎসাখাতের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ‘রিইমাজিন হেলথকেয়ার: সহযোদ্ধা- কভিড-১৯ মোকাবিলায় তথ্যপ্রযুক্তি’ শীর্ষক ওয়েবিনারের আয়োজন করে ইজেনারেশন। আরটিভির সাথে যৌথ উদ্যোগে এবং দ্য ডেইলি স্টার এবং সমকালের সহযোগিতায় এই ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ঝুঁকি কালীন দেশের জনগণকে নিরাপদ রাখতে সরকার নানাবিধ সফল উদ্যোগ নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ করতে সরকারের আরেকটি উদ্যোগ হলো ‘সহযোদ্ধা’ প্লাটফর্ম। আমরা আমাদের বিদ্যমান জনস্বাস্থ্য অবকাঠামো এবং তথ্য প্রযুক্তি অবকাঠামো কার্যকরী ভাবে ব্যবহার করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্যক্তিগত এবং সামাজিক স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে চাই। আর সেই লক্ষ্য অর্জনে, ইজেনারেশনের মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে অংশীদারিত্ব খুবই জরুরি।

ইজেনারেশন গ্রুপের চেয়ারমান শামীম আহসান বলেন, আইসিটিডিভিশন ও এটুআই ইনোভেশন ল্যাবের সাথে মিলে যুগান্তকারী ও জীবনরক্ষাকারী উদ্যোগ হিসেবে ‘সহযোদ্ধা’ প্রযুক্তি প্লাটফর্ম তৈরি করতে পেরে আমরা গর্বিত। পাশাপাশি, চলমান করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আইসিইউ ওভার দ্য ক্লাউড, টেলিমেডিসিন, টেলি-রেডিওলজি, হসপিটাল ম্যানেজমেন্টস ফটওয়্যার, এআই ভিত্তিক চ্যাটবট ইত্যাদি প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালকে সহযোগিতা করতে চায় ইজেনারেশন, ঠিক যেভাবে বর্ডারগার্ড বাংলাদেশের ৫০০ শয্যা বিশিষ্ঠ পাঁচটি হাসপাতালকে অটোমেটেড করা হয়েছে।

ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, আমাদের তথ্যপ্রযুক্তিখাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে এবং পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। শুধু স্বাস্থ্যসেবা নয়,আমাদের অন্যান্য খাতেওপরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা সাধারণ জনগণকে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের জন্য আগ্রহী করতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে পারি।

এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল সেবা বিভাগের প্রধান আরিফ মাহমুদ বলেন, ভাইরাস প্রতিরোধে জয়ী হতে প্রয়োজনীয় টুলস খুবই সীমিত। তারপরেও, এই জীবনঘাতী রোগের চিকিৎসায় প্লাজমাথেরাপি বেশ সাফল্যের যেখানে করোনা রোগ থেকে সেরে উঠা ব্যক্তিদের প্লাজমা অন্য রোগীদের দেহে প্রবেশ করানো হয়। এটা বেশ জনপ্রিয় বিশ্বাস যে, করোনাভাইরাস পজিটিভ হওয়ার প্রথম ১৪ দিনের মধ্যে প্লাজমা ট্রানফিউশন হলে সফলতার হার খুব বেশি হয়।

ইনস্টিউট অব ইপিডেমিওলজিডিজিজেস কনট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের পরামর্শক এবং প্রধান উপদেষ্ঠা মোহাম্মাদ মুসতাক হোসেন বলেন, হাসপাতালে খালি থাকা শয্যার সংখ্যা একটি প্লাটফর্মে থাকা প্রয়োজন এবং এটি দ্রুতই করা উচিত যাতে দেশের নাগরিকরা সহজেই জানতে পারে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে কোন হাসপাতালে যাওয়া উচিত। এটি হাসপাতাল এবং রোগী উভয়কেই কার্যকরীভাবে সহযোগিতা করবে।

কেয়ার হাসপাতালের চেয়ারম্যান পারভিন ফাতিমা বলেন, চলমান মহামারি আমাদেরকে টেলিমেডিসিনের উপর নির্ভরশীলতা বাড়িয়েছে এবং রোগীদের চিকিৎসা দিতে সহযোগিতা করছে; যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারছি প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা ও এটি উন্নত হলে আরও কী সুবিধা পাওয়া যাবে। সরকারকে দেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রক্রিয়া বিবেচনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে ও সহযোগিতা করতে হবে।

বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আর এমরান চৌধুরী বলেন, দেশে যাতে আরও বেশি হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার তৈরি হয় তার জন্য বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে যা রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে ছাড়পত্র দেয়া পর্যন্ত সকল প্রক্রিয়াকে স্বয়ংক্রিয় করবে। এটি বাস্তবায়ন হলে রোগী বর্তমানে যেসব অনাকাঙ্খিত অভিজ্ঞতা পান তা কমে যাবে।

ল্যাব এইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা কমিটির পরিচালক মাহবুবুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছরে প্রযুক্তি প্রত্যাশাতীতভাবে এগিয়ে গেছে। আমাদেরকে সমন্বিত মেডিকেল সেবার বাস্তবায়নের মাধমে স্বাস্থ্য সেবা খাতকে আধুনিক করতে হবে। এতে আমাদের সেবা প্রদান দ্রুত, উন্নত এবং উদ্ভাবনী হবে, যা আমাদের রোগী এবং বর্তমানের স্বাস্থ্যখাতের জন্য খুবই জরুরী।

গাজী মেডিকেলের চেয়ারমান গাজী মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে স্বাস্থ্য অনুশীলন ব্যবস্থাপনায় কোনো নির্দিষ্ট মান মেনে চলা হয় না। সাধারণ জনগণ যেকোনো স্বাস্থ্য সমস্যা হলে প্রথমে জেনারেলপ্রাকটিশনারের সাথে পরামর্শ করা ছাড়াই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে চলে যান। সমন্বিত আইটি অবকাঠামো তৈরির আগে আমাদেরকে স্টান্ডার্ড হেলথ প্রাকটিস ম্যানেজমেন্ট বাস্তবায়ন করতে হবে।

ওয়েসিস হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলাইমান আহমেদ বলেন, আমরা যদি চলমান করোনাভাইরাস মোকাবিলা করে জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই তাহলে আমাদেরকে স্বাস্থ্যখাতে তথ্যপ্রযুক্তিকে সন্নিবেশিত করতে হবে।

এটুআই ইনোভেশন ল্যাবের প্রযুক্তি প্রধান ফারুখ আহমেদ জুয়েল বলেন, ‘সহযোদ্ধা’ হলো একটি প্লাটফর্ম যার মাধ্যমে দেশের নাগরিকদের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্লাজমা সরবরাহে সহাযোগিতা করা হয়। এছাড়া আমরা ডাক্তারদের একটি ডেটাবেজ পোর্টাল বানাতে পারি যেখানে ডাক্তারদের সকল তথ্য সন্নিবেশিত থাকবে এবং সাধারণ জনগণ উপকৃত হতেপারবে। এটি আমাদের দেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতের মান পাল্টে দেবে।

চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট তাসমিমা মমতাজ বলেন, আমরা বর্তমানে অধিক পরিমানে টেলিমেডিসিন সেবা ব্যবহার দেখে বুঝতে পারি যে সময়ের পরিবর্তনে আমাদের ডাক্তারদের মনোভব বদলে গেছে। তারপরেও, অধিকাংশ হাসপাতাল ভিন্ন ভিন্ন হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ব্যবহারের কারণে ইন্টিগ্রেশনে একটি ব্যবধান থেকে যাচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট মোহাম্মাদ আখতার আলী বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয় জাতীয় মেডিকেল ডেটাবেজ তৈরি করে সেখানে রোগীদের মেডিকেল রেকর্ড সংরক্ষণক রাহলে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে গেলে ও রোগীর ভোগান্তি কমে যাবে।

ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির আইসিইউ বিভাগের প্রধান কামরুল হাসান বলেন, আইসিইউ মনিটরিং সিস্টেমের মতো বিভিন্ন হেলথ টেক সল্যুউশন অনেক আগেই প্রয়োগ করা উচিত ছিলো যা আমাদের চলমান করোনাভাইরাসের মতো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে সহযোগিতা করতো। বর্তমানে আমরা বিভিন্ন সল্যুউশন ব্যবহার করছি এবং অন্য সময়ের তুলনায় এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করা জরুরী হয়ে পড়েছে।

ওয়েসিস হাসপাতালের ফিন্যান্স পরিচালক নুরুল হাসান বলেন, এটি প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ নয়, এটি প্রযুক্তি নিয়ে জ্ঞান এবং মনোভবের চেয়ে বেশি কিছু। আমরা প্রায়ই আমাদের রোগী এমনকি ডাক্তারদেরও প্রযুক্তি গ্রহণে অনীহা দেখতে পাই। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

বিষয় : সহযোদ্ধা-একটি প্লাজমা নেটওয়ার্ক’

মন্তব্য করুন