জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমালো আইএমএফ

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০
বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমালো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে বলা হয়েছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ শতাংশ। এর আগে গত এপ্রিলে চলতি অর্থবছরের জন্য ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল সংস্থাটি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয় ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরের জন্য ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে বাজেটে।
এদিকে এডিবির মতো আইএমএফও মনে করছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার কমতে পারে। গতকাল প্রকাশিত আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি হতে পারে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। সম্প্রতি এডিবি বলেছে, অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি নেমে আসতে পারে ৬ দশমিক ৬ শতাংশে।
বিবিএসের হিসাবে, গত অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ শতাংশ। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির পর চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেও পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ছিল সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল মনে করছে, এই অর্থবছরে বাংলাদেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে জিডিপির শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরে যেটি ছিল জিডিপির শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আইএমএফের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, অতিমারি করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সংকট থেকে বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার অব্যাহত রয়েছে। যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাদ্যের বাজারে ব্যাঘাতের ফলে এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন দেশের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতির গতি ধীর হয়ে গেছে। তবে তা স্থবির হয়ে যায়নি।
বিশ্ব অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি ঝুঁকির কথাও জানিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটির মতে, চীনের আবাসন খাতে সংকট আরও বাড়তে পারে। এটি বিশ্ব অর্থনীতির জন্যও একটি ঝুঁকি। এ ছাড়া নতুন করে দেখা দেওয়া ভূরাজনৈতিক সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার কারণে পণ্যবাজারে নতুন করে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে গত জুন মাসের তুলনায় জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া অনেক দেশে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে। কোনো কোনো দেশে বিদেশি ঋণ বাড়ার পাশাপাশি বেড়ে গেছে অর্থায়নের খরচ। নেই চাহিদা অনুসারে সম্পদের জোগান। কোথাও কোথাও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে গেছে। এসব বিষয় বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিস্বরূপ। এ ছাড়া অনেক দেশে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির ইতিবাচক দিক থাকলেও এর কিছু বিপদ থাকতে পারে। এর ফলে ডলারের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। বিনিয়োগের খরচ বাড়তে পারে। এমনকি বেড়ে যেতে পারে অর্থ পাচারও।
সব মিলিয়ে ২০২৩ সালের জন্য বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস অপরিবর্তিত রেখেছে আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ শতাংশ। আগামী বছর তা আরও খানিকটা কমে দাঁড়াতে পারে ২ দশমিক ৯ শতাংশ।