সম্প্রতি আলু ও ভোজ্যতেলের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যৌক্তিক দর নির্ধারণ করে সরকার। অথচ নির্ধারিত দরে পণ্য বিক্রির আশ্বাস দিয়েও তা মানছেন না ব্যবসায়ীরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দামে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করেন ক্রেতারা।
ক্রেতাদের অভিযোগ, পণ্য দুটির দাম সরকার নির্ধারণের পর সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ওই দামে বিক্রি হয়নি। ব্যবসায়ীরা উল্টো দাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে বাজার তদারকি জোরদার করার দাবি তুলেছেন ক্রেতারা।
চলতি মাসের শুরুতে আলুর কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় উঠে যায়। এ জন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে গত ২০ অক্টোবর খুচরায় প্রতিকেজি আলু ৩৫ টাকা, পাইকারি ৩০ টাকা ও হিমাগারে ২৭ টাকা নির্ধারণ করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এর আগে গত ৭ অক্টোবর প্রতি কেজি খুচরা ৩০ টাকা, পাইকারি ২৫ টাকা ও হিমাগারে ২৩ টাকা নির্ধারণ করেছিল এ অধিদপ্তর।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে দর নির্ধারণের পরে কেজিতে ১০ টাকা কমে আলু ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় নেমে আসে। তখন হিমাগারে ৩০ টাকা ও পাইকারিতে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু দর নির্ধারণের ৯ দিন পরেও পণ্যটি এখন বেশি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। গত দুই দিনে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে এখন খুচরায় ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে আলু। পাইকারিতে একই হারে বেড়ে ৪০ থেকে ৪২ টাকা হিসাবে ৬০ কেজির বস্তা ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হিমাগারেও প্রতি কেজি আলু ৩৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজার নিয়ন্ত্রণে কৃষি বিপণন অধিপ্তর ছাড়াও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও প্রতিযোগিতা কমিশন ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করেছে। বৈঠকে ব্যবসায়ীরা আশ্বাস দিলেও বাজারে তার প্রভাব নেই। এমন পরিস্থিতিতে বাজার তদারকি জোরদার করতে জেলা প্রশাসকের কাছে আলুর মজুদের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে প্রতিযোগিতা কমিশন। আলু মজুদের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ব্যবসায়ীদের নিয়ে আগামী রোববার আবারও বৈঠক করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দাবি করেন, আলুর উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে। এর পরে চলতি বছরে আলু ত্রাণ দিয়েছে। বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে সবজির ঘাটতিতে আলুর চাহিদা বেড়েছে। একই কারণে আলু আবাদ দেরিতে হচ্ছে। এতে আগামী দুই মাস মজুদ আলু দিয়ে চাহিদা মেটাতে হবে। এই ঘাটতির সুযোগ নিয়ে পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেশি দামে আলু বিক্রি করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দর বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারেও দাম বাড়তে থাকে। এ কারণে গত ২২ অক্টোবর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতি লিটার সয়াবিন ৯০ টাকা ও প্রতি লিটার পাম তেল ৮০ টাকা নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই দর নির্ধারণের এক সপ্তাহ পরেও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েনি।
গত এক মাস ধরে খোলা সয়াবিন এবং পাম অয়েলের দাম বেশি। সরকার মিলগেটে দাম বেঁধে দিলেও তা মানা হচ্ছে না। কখনও আন্তর্জাতিক বাজার, কখনও বা কৃত্রিম সংকটের কারণ দেখিয়ে দাম বেশি রাখা হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়ছেন ভোক্তারা।
গতকাল খুচরায় প্রতি লিটার আরও দুই টাকা বেড়ে সয়াবিন ৯৮ থেকে ১০০ টাকা ও পাম তেল ৮৭ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়। এদিকে গত এক সপ্তাহে পাইকারিতে প্রতি মণে ১০০ টাকা বেড়েছে। গতকাল পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে প্রতি মণ সয়াবিন ৩ হাজার ৫৫০, পাম সুপার ৩ হাজার ৪৪০ ও পাম তেল ৩ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়। এ হিসাবে পাইকারিতে প্রতি লিটার সয়াবিন ৮৭, পাম সুপার ৮৪ ও পাম তেল ৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী ভুট্টু সমকালকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে গেছে। তাছাড়া কোম্পানিগুলো মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে তেল আনার জন্য জাহাজ পাচ্ছে না। এ কারণে বাজারে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর ফলে পাইকারি বাজারে দাম বাড়ছে। আমদানি করা তেল দেশে এলে বাজার স্বাভাবিক হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দামের সঙ্গে সমন্বয় করে পাইকারিতে বেচাকেনা হয়। এ ক্ষেত্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম ঠিক রাখতে সরকারের নীতিমালা করা উচিত, যাতে বাজার স্বাভাবিক থাকে।
এ বিষয়ে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা সমকালকে বলেন, মিলগেটে খোলা ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়নি। পাইকারি বাজারে বাড়লে তা তদারকি করা উচিত। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়িয়ে দেন। এ ক্ষেত্রে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কোম্পানির দরে বেচাকেনা করেন না। সরকার নির্ধারিত দরে তাদের কোম্পানি বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি।



বিষয় : আলু ও ভোজ্যতেলে নির্ধারিত দর মানছেন না ব্যবসায়ীরা

মন্তব্য করুন