- অর্থনীতি
- রবির শেয়ার নিয়ে জালিয়াতি!
রবির শেয়ার নিয়ে জালিয়াতি!
আগাম বিক্রি করছে একটি চক্র * ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএসইসি

মোবাইল ফোন অপারেটর রবির আইপিওর শেয়ার নিয়ে জালিয়াতি হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত রবি আইপিওর শেয়ার বিক্রি শুরু করেনি। তবে একটি চক্র সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আগাম বিক্রি করছে। কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক এ অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। তারা আইপিও কোটায় পাবেন এমন সম্ভাব্য শেয়ার থেকে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে আগাম শেয়ার বিক্রি করছে। সমকালের অনুসন্ধানে এর সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আইপিওতে অভিহিত মূল্যে (শেয়ারের প্রকৃত মূল্য) ১০ টাকা দরে শেয়ার বিক্রি করবে রবি। কিন্তু কোনো কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী আগাম বিক্রি করছে ১২ থেকে ২২ টাকা দরে। কিছুদিন আগে ৪০ টাকা দরেও বিক্রি করেছে। বিএসইসি জানিয়েছে, আইপিওর আগে রবির শেয়ার কেনাবেচার কোনো সুযোগ নেই। যে চক্র এভাবে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছে, তাদের ব্যাপারে কমিশন তথ্য পেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আইপিও প্রক্রিয়ায় ১০ টাকা দরে শেয়ার বিক্রির জন্য শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছ থেকে অনুমোদন পেয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে মোট ৩৮ কোটি ৭৭ লাখ শেয়ার বিক্রি করবে কোম্পানিটি। রবির আইপিও শেয়ারের মধ্যে ব্যক্তি শ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পৌনে আট কোটি শেয়ার কেনার সুযোগ পাবেন। প্রবাসীদের জন্য কোটা আছে প্রায় তিন কোটি ৮৮ লাখ শেয়ার। বাকি ২৭ কোটি ১৪ লাখেরও বেশি শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত। আগামী ১৭ নভেম্বর থেকে আইপিও প্রক্রিয়ায় শেয়ার বিক্রির কার্যক্রম শুরুর কথা রয়েছে। জানা গেছে, রবির আইপিওতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য বিপুল অঙ্কের কোটা বরাদ্দ থাকছে। ৫০০ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী শেয়ার কিনলেও প্রতি প্রতিষ্ঠান গড়ে সাড়ে পাঁচ লাখ শেয়ার পাবে। আইপিওতে একজন ব্যক্তি বিনিয়োগকারীর এক লট বা ৫০০টির বেশি পাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে বেশি পরিমাণ শেয়ার কিনতে পারলে রাতারাতি বড় অঙ্কের মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে- এমন আশা থেকে অনেকে আগাম শেয়ার কিনতে লাখ লাখ টাকা লগ্নি করছেন।
জানতে চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম সমকালকে বলেন, এভাবে শেয়ার বিক্রি সম্পূর্ণ অবৈধ। জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ও মুখপাত্র রেজাউল করিম জানান, কমিশনের পক্ষ থেকে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিসহ রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য দিয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
সমকালের অনুসন্ধানে বেনকো সিকিউরিটিজ নামে ব্রোকারেজ হাউস থেকে রবির শেয়ার আগাম বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে। ব্রোকারেজ হাউসটি নিজস্ব অফিস প্যাডে চুক্তি করে শেয়ার বিক্রি করছে। আগ্রহী ক্রেতাকে অন্তত এক লাখ শেয়ার কিনতে হচ্ছে। অন্তত তিনজন গ্রাহকের সঙ্গে করা চুক্তিপত্রের ফটোকপি সমকালের কাছে রয়েছে। যদিও এসব চুক্তিপত্রে শেয়ারের মূল্য ১০ টাকা উল্লেখ রয়েছে। তবে এর বাইরে বাড়তি অর্থ নেওয়া হচ্ছে বা হবে অন্য প্রক্রিয়ায়।
বেনকো সিকিউরিটিজ থেকে রবির শেয়ার কেনাবেচার ক্ষেত্রে আগ্রহী ক্রেতা ও ব্রোকারেজ হাউসটির মালিকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে দেওয়ার প্রাথমিক কাজ করছেন চট্টগ্রামের বদরুদ্দিন আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। সম্প্রতি তিনি ফেসবুকে শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের একাধিক গ্রুপের রবির লকইন ফ্রি শেয়ার ৩৫ টাকা বিক্রির জন্য পোস্ট দেন। তার সঙ্গে প্রথমে সম্ভাব্য ক্রেতা সেজে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। বদরুদ্দিন জানান, ফেসবুকে ৩৫ টাকা দর উল্লেখ করলেও ২২ টাকা দরে শেয়ার বিক্রিতে রাজি তিনি। এর মধ্যে তার নামে শেয়ারপ্রতি ২ টাকার পৃথক চেক দিতে হবে। শেয়ারপ্রতি বাকি ২০ টাকা যে প্রতিষ্ঠান শেয়ার বিক্রি করবে, তার নামে চেক দিতে হবে। এজন্য সংশ্নিষ্ট ব্রোকারেজ বা মার্চেন্ট ব্যাংকে গিয়ে বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। বিও অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য এনআইডি কপি, আগ্রহী ক্রেতা, তার নমিনির ছবিসহ প্রয়োজনীয় নথি ও চেক জমা দিতে হবে। বিও অ্যাকাউন্ট খোলার পর ওই ব্রোকারেজ হাউসের নিজস্ব প্যাডে রবির শেয়ার বিক্রির চুক্তিপত্র দেওয়া হবে। ক্রেতা চাইলে এক বা দুই হাজার টাকার স্ট্যাম্পেও চুক্তি করতে রাজি তারা।
বদরুদ্দিনের মাধ্যমে বেনকো সিকিউরিটিজে মাসুদ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে এ প্রতিবেদকের যোগাযোগ হয়। মাসুদের সঙ্গে কথা হয় রাজধানীর মতিঝিলের ইস্পাহানি বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় বেনকো সিকিউরিটিজের কার্যালয়ে। মাসুদ জানান, ২২ টাকা দরে শেয়ার বিক্রি হচ্ছে মাল্টি সিকিউরিটিজ নামে অপর একটি ব্রোকারেজ হাউস থেকে। বেনকো থেকে শুধু মুনাফার অর্ধেক শেয়ার করার শর্তে ১২ টাকা দরে শেয়ার বিক্রি করা হচ্ছে। মাসুদ আরও জানান, রবি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারে লেনদেনের প্রথম দিনে বেনকো নিজের কেনা আইপিওর লক-ইন ফ্রি শেয়ার থেকে ক্রেতার বিও অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করবে। চাইলে ওই দিন ক্রেতা তার শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন। বিক্রির পর অগ্রিম করের টাকা বাদ দিয়ে মুনাফার অর্ধেক ভাগাভাগি হবে।
বদরুদ্দিন দাবি করেন, শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হলে অচিরেই রবির শেয়ারদর ৭০ টাকা ছাড়াবে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার কীভাবে এত হবে- এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের পার্টির (জুয়াড়ি চক্র) ইচ্ছায় শেয়ারদর নির্ধারিত হয়। প্রায় একই দাবি মাসুদের। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দর এখন ৩৩৪ টাকা। রবিও স্বনামধন্য কোম্পানি। কোম্পানির মুনাফা যাই থাকুক, সুনামের কারণে এর শেয়ারদর অনেক বেশি হবে।
বেনকো সিকিউরিটিজের এক চুক্তিপত্রে থাকা তথ্য অনুযায়ী এসএম ময়নাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি তিন লাখ ১০ হাজার শেয়ার কিনতে বেনকোর নামে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের একটি চেকের মাধ্যমে ৩১ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। ওই ব্যক্তির নামে বেনকোতে একটি বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। বেনকোর অফিশিয়াল প্যাডে লেখা চুক্তিপত্রে বলা হয়েছে, এই বিও কোডের রবির শেয়ার পরিচালক মো. শফিউল আজম এবং ক্রেতা এসএম ময়নাল হোসেন উভয়ের সম্মতিতে বিক্রি হবে। বিক্রির পর অগ্রিম কর কাটার পর মুনাফা সমহারে বণ্টন করা হবে। ঠিক একইভাবে এক চুক্তিতে মো. জাকারিয়া চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি চার লাখ রবির শেয়ার বিক্রি বাবদ ৪০ লাখ টাকার চেক এবং খাজা তাসিন আহমেদ অপর ব্যক্তি এক লাখ শেয়ার কিনতে ১০ লাখ টাকার চেক জমা দিয়েছেন (তার চেক নম্বর ৮১১০৫৯২, ব্যাংক এশিয়া)।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে নিজের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বদরুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। এ সময় ভোল পাল্টে যায় তার। নানা রকম হুমকিও দেন। এ সময় দাবি করেন, তাদের এ শেয়ার বিক্রি বৈধ। ১২ থেকে ১৫টি ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে এভাবে শেয়ার বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে বেনকো সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজমের বক্তব্য নিতে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে গেলে কর্মকর্তারা জানান তিনি অফিসে নেই। তবে তার অফিসের এক কর্মকর্তার ফোনে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি স্বীকার করেন, তার প্রতিষ্ঠান থেকে আইপিওর শেয়ার বিক্রির জন্য আগাম টাকা নিচ্ছেন। শেয়ার কিনতে বিও হিসাব খুলে টাকা জমা দিতে হবে। আইপিওতে তার প্রতিষ্ঠান শেয়ার পেলে সংশ্নিষ্ট ব্যক্তিকে শেয়ার দেওয়া হবে। তবে কোনো চুক্তিপত্রের মাধ্যমে হচ্ছে না। একাধিক চুক্তিপত্র এ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে জানালে তিনি জানান, একটি সুপরিচিত ব্রোকারেজ হাউস-সংশ্নিষ্ট একজন শেয়ার নিয়েছেন বলে অফিস প্যাডে চুক্তিপত্র করেছেন বলে স্বীকার করেন।
আইপিওতে অভিহিত মূল্যে (শেয়ারের প্রকৃত মূল্য) ১০ টাকা দরে শেয়ার বিক্রি করবে রবি। কিন্তু কোনো কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী আগাম বিক্রি করছে ১২ থেকে ২২ টাকা দরে। কিছুদিন আগে ৪০ টাকা দরেও বিক্রি করেছে। বিএসইসি জানিয়েছে, আইপিওর আগে রবির শেয়ার কেনাবেচার কোনো সুযোগ নেই। যে চক্র এভাবে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছে, তাদের ব্যাপারে কমিশন তথ্য পেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আইপিও প্রক্রিয়ায় ১০ টাকা দরে শেয়ার বিক্রির জন্য শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছ থেকে অনুমোদন পেয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে মোট ৩৮ কোটি ৭৭ লাখ শেয়ার বিক্রি করবে কোম্পানিটি। রবির আইপিও শেয়ারের মধ্যে ব্যক্তি শ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পৌনে আট কোটি শেয়ার কেনার সুযোগ পাবেন। প্রবাসীদের জন্য কোটা আছে প্রায় তিন কোটি ৮৮ লাখ শেয়ার। বাকি ২৭ কোটি ১৪ লাখেরও বেশি শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত। আগামী ১৭ নভেম্বর থেকে আইপিও প্রক্রিয়ায় শেয়ার বিক্রির কার্যক্রম শুরুর কথা রয়েছে। জানা গেছে, রবির আইপিওতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য বিপুল অঙ্কের কোটা বরাদ্দ থাকছে। ৫০০ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী শেয়ার কিনলেও প্রতি প্রতিষ্ঠান গড়ে সাড়ে পাঁচ লাখ শেয়ার পাবে। আইপিওতে একজন ব্যক্তি বিনিয়োগকারীর এক লট বা ৫০০টির বেশি পাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে বেশি পরিমাণ শেয়ার কিনতে পারলে রাতারাতি বড় অঙ্কের মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে- এমন আশা থেকে অনেকে আগাম শেয়ার কিনতে লাখ লাখ টাকা লগ্নি করছেন।
জানতে চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম সমকালকে বলেন, এভাবে শেয়ার বিক্রি সম্পূর্ণ অবৈধ। জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ও মুখপাত্র রেজাউল করিম জানান, কমিশনের পক্ষ থেকে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিসহ রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য দিয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
সমকালের অনুসন্ধানে বেনকো সিকিউরিটিজ নামে ব্রোকারেজ হাউস থেকে রবির শেয়ার আগাম বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে। ব্রোকারেজ হাউসটি নিজস্ব অফিস প্যাডে চুক্তি করে শেয়ার বিক্রি করছে। আগ্রহী ক্রেতাকে অন্তত এক লাখ শেয়ার কিনতে হচ্ছে। অন্তত তিনজন গ্রাহকের সঙ্গে করা চুক্তিপত্রের ফটোকপি সমকালের কাছে রয়েছে। যদিও এসব চুক্তিপত্রে শেয়ারের মূল্য ১০ টাকা উল্লেখ রয়েছে। তবে এর বাইরে বাড়তি অর্থ নেওয়া হচ্ছে বা হবে অন্য প্রক্রিয়ায়।
বেনকো সিকিউরিটিজ থেকে রবির শেয়ার কেনাবেচার ক্ষেত্রে আগ্রহী ক্রেতা ও ব্রোকারেজ হাউসটির মালিকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে দেওয়ার প্রাথমিক কাজ করছেন চট্টগ্রামের বদরুদ্দিন আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। সম্প্রতি তিনি ফেসবুকে শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের একাধিক গ্রুপের রবির লকইন ফ্রি শেয়ার ৩৫ টাকা বিক্রির জন্য পোস্ট দেন। তার সঙ্গে প্রথমে সম্ভাব্য ক্রেতা সেজে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। বদরুদ্দিন জানান, ফেসবুকে ৩৫ টাকা দর উল্লেখ করলেও ২২ টাকা দরে শেয়ার বিক্রিতে রাজি তিনি। এর মধ্যে তার নামে শেয়ারপ্রতি ২ টাকার পৃথক চেক দিতে হবে। শেয়ারপ্রতি বাকি ২০ টাকা যে প্রতিষ্ঠান শেয়ার বিক্রি করবে, তার নামে চেক দিতে হবে। এজন্য সংশ্নিষ্ট ব্রোকারেজ বা মার্চেন্ট ব্যাংকে গিয়ে বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। বিও অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য এনআইডি কপি, আগ্রহী ক্রেতা, তার নমিনির ছবিসহ প্রয়োজনীয় নথি ও চেক জমা দিতে হবে। বিও অ্যাকাউন্ট খোলার পর ওই ব্রোকারেজ হাউসের নিজস্ব প্যাডে রবির শেয়ার বিক্রির চুক্তিপত্র দেওয়া হবে। ক্রেতা চাইলে এক বা দুই হাজার টাকার স্ট্যাম্পেও চুক্তি করতে রাজি তারা।
বদরুদ্দিনের মাধ্যমে বেনকো সিকিউরিটিজে মাসুদ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে এ প্রতিবেদকের যোগাযোগ হয়। মাসুদের সঙ্গে কথা হয় রাজধানীর মতিঝিলের ইস্পাহানি বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় বেনকো সিকিউরিটিজের কার্যালয়ে। মাসুদ জানান, ২২ টাকা দরে শেয়ার বিক্রি হচ্ছে মাল্টি সিকিউরিটিজ নামে অপর একটি ব্রোকারেজ হাউস থেকে। বেনকো থেকে শুধু মুনাফার অর্ধেক শেয়ার করার শর্তে ১২ টাকা দরে শেয়ার বিক্রি করা হচ্ছে। মাসুদ আরও জানান, রবি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারে লেনদেনের প্রথম দিনে বেনকো নিজের কেনা আইপিওর লক-ইন ফ্রি শেয়ার থেকে ক্রেতার বিও অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করবে। চাইলে ওই দিন ক্রেতা তার শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন। বিক্রির পর অগ্রিম করের টাকা বাদ দিয়ে মুনাফার অর্ধেক ভাগাভাগি হবে।
বদরুদ্দিন দাবি করেন, শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হলে অচিরেই রবির শেয়ারদর ৭০ টাকা ছাড়াবে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার কীভাবে এত হবে- এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের পার্টির (জুয়াড়ি চক্র) ইচ্ছায় শেয়ারদর নির্ধারিত হয়। প্রায় একই দাবি মাসুদের। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দর এখন ৩৩৪ টাকা। রবিও স্বনামধন্য কোম্পানি। কোম্পানির মুনাফা যাই থাকুক, সুনামের কারণে এর শেয়ারদর অনেক বেশি হবে।
বেনকো সিকিউরিটিজের এক চুক্তিপত্রে থাকা তথ্য অনুযায়ী এসএম ময়নাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি তিন লাখ ১০ হাজার শেয়ার কিনতে বেনকোর নামে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের একটি চেকের মাধ্যমে ৩১ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। ওই ব্যক্তির নামে বেনকোতে একটি বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। বেনকোর অফিশিয়াল প্যাডে লেখা চুক্তিপত্রে বলা হয়েছে, এই বিও কোডের রবির শেয়ার পরিচালক মো. শফিউল আজম এবং ক্রেতা এসএম ময়নাল হোসেন উভয়ের সম্মতিতে বিক্রি হবে। বিক্রির পর অগ্রিম কর কাটার পর মুনাফা সমহারে বণ্টন করা হবে। ঠিক একইভাবে এক চুক্তিতে মো. জাকারিয়া চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি চার লাখ রবির শেয়ার বিক্রি বাবদ ৪০ লাখ টাকার চেক এবং খাজা তাসিন আহমেদ অপর ব্যক্তি এক লাখ শেয়ার কিনতে ১০ লাখ টাকার চেক জমা দিয়েছেন (তার চেক নম্বর ৮১১০৫৯২, ব্যাংক এশিয়া)।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে নিজের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বদরুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। এ সময় ভোল পাল্টে যায় তার। নানা রকম হুমকিও দেন। এ সময় দাবি করেন, তাদের এ শেয়ার বিক্রি বৈধ। ১২ থেকে ১৫টি ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে এভাবে শেয়ার বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে বেনকো সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজমের বক্তব্য নিতে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে গেলে কর্মকর্তারা জানান তিনি অফিসে নেই। তবে তার অফিসের এক কর্মকর্তার ফোনে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি স্বীকার করেন, তার প্রতিষ্ঠান থেকে আইপিওর শেয়ার বিক্রির জন্য আগাম টাকা নিচ্ছেন। শেয়ার কিনতে বিও হিসাব খুলে টাকা জমা দিতে হবে। আইপিওতে তার প্রতিষ্ঠান শেয়ার পেলে সংশ্নিষ্ট ব্যক্তিকে শেয়ার দেওয়া হবে। তবে কোনো চুক্তিপত্রের মাধ্যমে হচ্ছে না। একাধিক চুক্তিপত্র এ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে জানালে তিনি জানান, একটি সুপরিচিত ব্রোকারেজ হাউস-সংশ্নিষ্ট একজন শেয়ার নিয়েছেন বলে অফিস প্যাডে চুক্তিপত্র করেছেন বলে স্বীকার করেন।
মন্তব্য করুন