ঢাকা মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩

লভ্যাংশ ২ শতাংশ, দর বেড়েছে ২৩ শতাংশ

লভ্যাংশ ২ শতাংশ, দর  বেড়েছে ২৩ শতাংশ

.

Advertisement
Advertisement

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৩ | ২২:৪২ | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩ | ২২:৪৪

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ফু-ওয়াং সিরামিক কোম্পানি গত হিসাব বছরের জন্য সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ২ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে সাড়ে ২৩ শতাংশ, ছিল দরবৃদ্ধির শীর্ষে। এমনকি গত ২৮ আগস্টের পর কোম্পানিটির লাখ লাখ শেয়ার বিক্রির আদেশের বিপরীতে যেখানে কোনো ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছিল না, সেখানে গতকাল এ কোম্পানিরই প্রায় ৪৬ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটাই এ বাজারের কারসাজি চক্রের নিয়মিত ‘খেল’। শুধু ফু-ওয়াং সিরামিক নয়, রুগ্‌ণ, বন্ধ ও লোকসানি বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ার নিয়েও কারসাজি চলছে। যেমন, মাত্র ১৫ কার্যদিবসে খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ারদর সোয়া দুই গুণে উন্নীত হয়েছে। এ নিয়ে কারও বিকার নেই।

ফু-ওয়াং সিরামিকের পর্ষদ ৩০ জুন ২০২৩ সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের মাত্র ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে– এমন ঘোষণার পর গতকাল সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর মাত্র আধা ঘণ্টাতেই শেয়ারটির দর ১৮ শতাংশ বেড়ে সাড়ে ২০ টাকায় ওঠে। মাঝে সর্বোচ্চ ২১ টাকা ৯০ পয়সা দর উঠলেও সর্বশেষ কেনাবেচা হয় সাড়ে ২১ টাকা দরে।
ঘোষণা অনুযায়ী, গত হিসাব বছরে ফু-ওয়াং সিরামিকের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকা। উদ্যোক্তা-পরিচালকরা কোনো লভ্যাংশই নেবেন না। শুধু সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অথচ এ টাকার লভ্যাংশ নেওয়ার আগে গতকালই কোম্পানিটির সব শেয়ারের বাজারদর ৫৬ কোটি টাকা বেড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউসের এমডি সমকালকে বলেন, শেয়ারবাজারে শেয়ারদর ওঠানামা করবে এটাই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু কোনো কোম্পানির ভালো ব্যবসা নেই, নতুন ব্যবসা পরিকল্পনা নেই বা ভালো লভ্যাংশও দিচ্ছে না– এমন কোম্পানির শেয়ারদর রাতারাতি দ্বিগুণ-তিন গুণ হয়ে গেলে তা অস্বাভাবিক মনে হয়। 

ফু-ওয়াং সিরামিকের দরবৃদ্ধির উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, এটা এ বাজারে নতুন কিছু নয়, বরং নিয়মিত ঘটনা। ভালো মুনাফা দেয়, ভালো ব্যবস্থাপনায় চলে– এমন কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা নেই। অথচ ফু-ওয়াং সিরামিকের মতো শেয়ারের দর লাগাম ছাড়া বাড়ে। কারা নেপথ্যে থেকে আগ্রাসীভাবে শেয়ার কোথায় বসে এবং কাদের সহায়তায় কারসাজি করছে, তা সবাই জানে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং স্টক এক্সচেঞ্জও জানে। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। 

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ফু-ওয়াং সিরামিকের বাইরে গতকাল ডিএসইতে ৫ শতাংশের ওপর দর বেড়েছে আরও পাঁচ কোম্পানির শেয়ারের। এগুলো হলো– সেন্ট্রাল ফার্মা (প্রায় ১০ শতাংশ), খুলনা প্রিন্টিং (প্রায় ৯ শতাংশ), ইভিন্স টেক্সটাইল (সাড়ে ৮ শতাংশ), ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড (প্রায় ৬ শতাংশ) এবং অলিম্পিক এক্সেসরিজ (সাড়ে ৫ শতাংশ)। এর মধ্যে সেন্ট্রাল ফার্মা ও খুলনা প্রিন্টিংয়ের ব্যবসা কার্যক্রম বহু বছর বন্ধ। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডও বহু বছর ধরে ধুঁকছে। বাকি দুটির ব্যবসা ভালো নয় বা লোকসানে।

এমন দরবৃদ্ধির বিপরীতে গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০৮ শেয়ারের মধ্যে কমেছে ১১৩টির, দর বেড়েছে মাত্র ৩৪টির এবং অপরিবর্তিত থেকেছে ১৬১টির দর। ক্রেতার অভাবে ৮৪ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের কোনো লেনদেন হয়নি। বড় অঙ্কের শেয়ারের দরপতনে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৬ পয়েন্ট হারিয়ে ৬২৪০ পয়েন্টে নেমেছে। দিনব্যাপী কেনাবেচা হয়েছে ৪৩৪ কোটি টাকার শেয়ার।
গতকাল দরপতনের শীর্ষে ছিল রাষ্ট্র মালিকানাধীন শ্যামপুর সুগার ও জিল বাংলা সুগার মিলসের শেয়ার। ১০ শতাংশ দর হারিয়ে জিল বাংলার দর ১৫৬ টাকা ৬০ পয়সায় এবং শ্যামপুর সুগারের দর পৌনে ৯ শতাংশ কমে ২১৫ টাকা ৪০ পয়সায় নেমেছে। এ দুই কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে বলে মনে করেন ব্রোকারেজ হাউস কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন