ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধ বেড়েছে ৫২%

বিদেশি ঋণের সুদাসল  পরিশোধ বেড়েছে ৫২%

.

Advertisement
Advertisement

 সমকাল প্রতিবেদক 

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ২১:৪০

বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধের চাপ বাড়ছে। মূল ঋণ এবং সুদ দুই ক্ষেত্রেই আগের তুলনায় বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিশ্রুত ঋণের ছাড় কমিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। অবশ্য নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি অনেক বাড়িয়েছে তারা।  
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধে ব্যয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৫২ শতাংশ। গত চার মাসে মোট ১১০ কোটি ১৪ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়েছে এ বাবদ, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭২ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের চার মাসে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে ব্যয় বেড়েছে ৩৭ কোটি ৭২ লাখ ডলার।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, এ পরিস্থিতিতে নতুন ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক হতে হবে। কম সুদের ঋণের দিকে নজর বাড়াতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করতে হবে সময়মতো। কারণ বাস্তবায়ন বিলম্বিত হলে ব্যয় বেড়ে যায়। বিভিন্ন পর্যায় থেকে অর্থনীতিতে যে মূল্য সংযোজন হওয়ার কথা, সে হারে সুবিধা পাওয়া যায় না। 

তবে তিনি মনে করেন, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বিবেচনায় নিলে সামগ্রিকভাবে বিদেশি ঋণ পরিশোধ পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক পর্যায়ে যায়নি। ২০১৫ সালে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পর থেকেই বিদেশি ঋণের সুদহার বেড়েছে। এ ছাড়া বৈশ্বিক সুদহার নির্ধারণের অন্যতম মাপকাঠি সিকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেট (সোফর)-এর ওপর অতিরিক্ত সুদ ধার্য করা হয়। সোফর রেট ৫ শতাংশের মতো। সোফর এবং ঋণদাতা সংস্থার সুদ মিলে কোনো কোনো ঋণে সুদহার ৭ শতাংশের ওপরে গিয়ে ঠেকে। বাজেট সহায়তার মতো স্বল্পমেয়াদি অনেক ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ  ধরনের ঋণে রেয়াতকাল তুলনামূলক কম থাকে। সুদহার থাকে বেশি। এসব কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সুদাসল বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে।
ইআরডির প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় বেড়েছে ১৪৯ শতাংশ। মোট ৪৬ কোটি ৭৪ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে সুদ বাবদ। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১৮ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।

অন্যদিকে বিদেশি ঋণের আসল বাবদ পরিশোধ বেড়েছে ১৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। গত জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে মোট ৬৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়েছে এ বাবদ। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৫৩ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আসল বাবদ পরিশোধ বেড়েছে ৯ কোটি ৭৫ ডলার। 
সুদাসল পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার হিসাবে দেখা যায়, গত চার মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে পরিশোধ বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। ঋণের সুদাসল মিলিয়ে ১২ হাজার ৮৭ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে গত চার মাসে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল মাত্র ৬ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ৫ হাজার ১৮১ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে। 

ঋণ পরিশোধে বড় অংকের ব্যয় হলেও সে হারে প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় করেনি উন্নয়ন সহযোগীরা। ইআরডির তথ্যমতে, গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে গত চার মাসে অর্থছাড় কমেছে ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। মোট ১৬২ কোটি ৬২ লাখ ডলার অর্থছাড় হয়েছে এ সময়। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১৯৭ কোটি ডলারের মতো। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের চার মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় উন্নয়ন সহযোগীরা ছাড় কমিয়েছে ৩৪ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। ঋণের পাশাপাশি অনুদানের অর্থছাড়ও কমে গেছে এ সময়ে। 
অবশ্য অর্থছাড় কমলেও নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে গত চার মাসে। প্রায় ৩৬৩ কোটি ডলারের ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে রেকর্ড ৭৭৭ শতাংশ। ঋণ ও অনুদান দুই ক্ষেত্রেই সহায়তার প্রতিশ্রুতি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। 

আরও পড়ুন