শেয়ার বাজার
ডিএসইর লেনদেন আট মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন
শেয়ার বাজার
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:৩১
মন্দ শেয়ারে ভর করে এতদিন ঢাকার শেয়ারবাজারের লেনদেন ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার ঘরে আটকে ছিল। এখন ওইসব শেয়ারে লেনদেনও কমছে। তাতে ফের ডুবছে শেয়ারবাজার। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩০৫ কোম্পানির ২৯৭ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যা গত আট মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে গত ২৭ মার্চ এ বাজারে ২৭২ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
গত বছরের জুলাই শেষে দরপতন ঠেকাতে সব শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর থেকে ক্রমাগত লেনদেন কমছিল। প্রায় সব ভালো কোম্পানির শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে, যেগুলোর লাখ লাখ শেয়ারের বিক্রেতা থাকলেও ক্রেতা নেই। ফলে লেনদেন হচ্ছে না। এখন ভালো-মন্দ সব শেয়ারের লেনদেন কমছে। এ অবস্থায় সার্বিক লেনদেন ফের তলানিতে নামছে।
চলতি বছরের ১১ মাসে ১৩ দিন লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমেছে। এর মধ্যে ১১ দিনই গত জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ে। গতকালের আগে ৩০০ কোটি টাকার কম শেয়ার কেনাবেচা হয় ১৬ আগস্ট।
মঙ্গলবার বন্ধ, লোকসানি কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেন বেশি হয়েছে। এর নেপথ্যে কোনো না কোনো কারসাজি চক্র রয়েছে বলে মনে করছেন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা।
২৯৭ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেনের মধ্যে ব্লক মার্কেটের প্রায় ৩০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ মূল মার্কেটে শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে ২৬৭ কোটি টাকার। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত ৩৯২ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩০৫ কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হলেও শীর্ষ ২০ কোম্পানিরই ১৬২ কোটি ৫২ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়, যা মোট লেনদেনের পৌনে ৫৫ শতাংশ।
শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘এ বাজারে গ্রামীণফোন, রেনাটা, স্কয়ার ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মার মতো শেয়ারের ক্রেতা নেই। অথচ বন্ধ, মালিকদের হদিস নেই– এমন সব খারাপ শেয়ারের ক্রেতার অভাব নেই। লোকে কেন যে এ বাজারকে শেয়ারবাজার বলে বুঝি না। এটা পুরোপুরি জুয়ার বাজার। জুয়ার বাজারে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা থাকে না। এমন বাজারে জুয়াড়ি চক্র আর কিছু লোভী মানুষ থাকে। লোভীদের টাকা ফুরালে জুয়াড়িরাও সাময়িক লেনদেন কমায়। এভাবে কখনও লেনদেন বাড়ে, কখনও কমে। এখনও তাই হচ্ছে।’
গতকাল একক কোম্পানি হিসেবে সর্বাধিক ১৬ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে সেন্ট্রাল ফার্মার। গত কয়েক বছর এ কোম্পানির ব্যবসা কার্যক্রম নেই। সাড়ে ৫ শতাংশ দর হারিয়ে সর্বশেষ ১৭ টাকা ১০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে। নভেম্বরেই শেয়ারটির দর ১১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৬৭ শতাংশ বেড়ে ১৯ টাকা ৪০ পয়সায় ওঠে। দুই দিন ধরে দর কমছে।
গতকাল দরবৃদ্ধির তালিকার শীর্ষে ছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বড় লোকসানি কোম্পানি জিল বাংলা সুগার মিলসের শেয়ার। এটির দর প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ ১৪৬ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। গত ৬ থেকে ১৬ নভেম্বর শেয়ারটির দর ১৩০ থেকে ১৮৮ টাকায় ওঠে। যদিও গত ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে ১০ টাকার শেয়ারের বিপরীতে সাড়ে ৫২ টাকা করে লোকসান করে এ কোম্পানি।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নিয়মিত বিরতিতে এ শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয়। যেমন– গত চার বছরের মধ্যে ২০২০ সালের জুন, ২০২১ সালের জুন এবং ২০২২ সালের জানুয়ারিতে বড় ধরনের কারসাজি হয়েছে। এখন নতুন করে কারসাজি চলছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিশ্চুপ। কোম্পানিটি প্রতি বছর ১০ টাকার শেয়ারের বিপরীতে ৮৮ থেকে ১১৬ টাকা পর্যন্ত লোকসান করছে।
এমন বহু লোকসানি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বড় ধরনের কারসাজি হলেও দু-একটি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে তদন্ত করে বিএসইসি। যেমন– গতকাল ইমাম বাটন কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে ডিএসইকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছে কমিশন। চিঠিতে বলা হয়, গত ৭ সেপ্টেম্বর শেয়ারটির দর ছিল ১০৪ টাকা ৪০ পয়সা, যা গত ২৬ অক্টোবর ১৯৪ টাকা ১০ পয়সায় ওঠে।
ইমাম বাটন কোম্পানিটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত হিসাব বছরে এর শেয়ারপ্রতি ৭৬ পয়সা লোকসান হয়েছে। কিন্তু গত ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ৯ পয়সা মুনাফা দেখায় তারা। এ মুনাফা থেকে ১ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। শেয়ারদর বৃদ্ধির ধারাকে উস্কে দিতে এমন ঘোষণা বলে ধারণা অনেকের।
গতকাল ডিএসইতে ৫৫ কোম্পানির শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৭৬টির দর কমেছে, অপরিবর্তিত থেকেছে ১৭৪টির দর। ক্রেতার অভাবে ৮৭ কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন হয়নি। গতকালের দরপতনে ফ্লোর প্রাইসে নামা শেয়ার সংখ্যা চারটি বেড়ে ২৫৫টিতে উন্নীত হয়েছে, যা মোট শেয়ারের ৬৫ শতাংশ।