প্রায় চার মাস পর সোমবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একদিনের লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ বাজারে এদিন কেনাবেচা হওয়া সব শেয়ারবাজারের বাজার মূল্য ছিল এক হাজার ৫৩১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

এর আগে ডিএসইতে একদিনে দেড় হাজার কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছিল গত ২৫ জানুয়ারি। ওইদিন এ বাজারে লেনদেন হওয়া শেয়ারের মূল্য ছিল ১ হাজার ৫৮৫ কোটি ২২ লাখ টাকা।

এদিকে ঈদের ছুটির পর দ্বিতীয় দিনেও বেড়েছে শেয়ারবাজারের মূল্য সূচক। এ নিয়ে টানা অষ্টম দিনে সূচক বেড়েছে। যদিও দর হারিয়েছে বেশিরভাগ শেয়ার। মূলত বৃহৎ মূলধনী কোম্পানির খাত ব্যাংকের শেয়ারদর বৃদ্ধি সূচককে ঊর্ধ্বমুখী রেখেছে।

দিনের লেনদেন শেষে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ডিএসইতে ১৪২ শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১৭৫টি শেয়ার দর হারিয়েছে। অপরিবর্তিত রয়েছে ৫২টি শেয়ারের দর।

অধিকাংশ শেয়ারের দর কমলেও ডিএসইএক্স সূচক ২৬.৯২ পয়েন্ট বেড়ে ৫৮৪০ পয়েন্টে উঠেছে। সূচক বৃদ্ধির হার ০.৪৬ শতাংশ। দিনের শেষে সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও শুরুতে কিছুটা অস্থিরতা দেখা যায়। সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর মাত্র ৭ মিনিটের মধ্যে ডিএসইএক্স সূচক ৪৮ পয়েন্ট বেড়ে ৫৮৬১ পয়েন্ট ছাড়ায়। কিন্তু পরের ২৬ মিনিটে সূচকটি ৫২ পয়েন্ট হারিয়ে ৫৮০৯ পয়েন্টে নামে।

এর কারণ বিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, দিনের লেনদেনের শুরুতে টানা অষ্টম দিনে দরবৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিচ্ছিলেন। এ কারণে ব্যাংকসহ অন্য অনেক খাতের শেয়ারদর কমেছিল। এ কারণে সূচক বেড়ে পরে কমে যায়। কিন্তু ব্যাংকের শেয়ার পুনরায় দরবৃদ্ধির ধারায় ফেরার কারণে সূচকও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।

দ্বিতীয় শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ১২১ শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১৫৩টি দর কমেছে, অপরিবর্তিত ২৬টির দর।

ডিএসইতে স্বাভাবিক সাড়ে তিন ঘণ্টার লেনদেনে সোমবার এক হাজার ৫১৮ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। দুপুর দেড়টার পরবর্তী ১০ মিনিটের ক্লোজিং সেশনে আরো ১৩ কোটি টাকার লেনদেনসহ ডিএসইর লেনদেন এক হাজার ৫৩১ কোটি ৭৮ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। সিএসইতে কেনাবেচা হয়েছে ১১৪ কোটি ৮৭ টাকার শেয়ার।

ডিএসইর খাতওয়ারি লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, রোববারের মত আজও ব্যাংকের অধিকাংশ শেয়ারের দর বেড়েছে। তালিকাভুক্ত ৩১ ব্যাংক কোম্পানির মধ্যে ২৭টিরই দর বেড়েছে, বিপরীতে দর হারিয়েছে মাত্র দুইটি। নতুন তালিকাভুক্ত এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার আজও সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দর ২৩ টাকা ৬০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে।

পাশাপাশি দর বেড়েছে বীমার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের। রোববার বীমা খাতের অধিকাংশ শেয়ার দর হারালেও আজ এ খাতের ৫০ কোম্পানির মধ্যে ৩৬টির বাজারদর বেড়েছে, দর হারিয়েছে ৭টি। এ খাতের এশিয়া ইন্স্যুরেন্স সর্বোচ্চ ৯.৯১ শতাংশ দর বেড়ে ছিল দরবৃদ্ধির শীর্ষে।

তবে রোববার যে বস্ত্র খাতের অধিকাংশ শেয়ারের দর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছিল, আজ তার বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত ৫৬ কোম্পানির মধ্যে ৫২টিই দর হারিয়েছে। বিপরীতে দর বেড়েছে মাত্র ২টির।

অন্যান্য খাতের মধ্যে প্রকৌশল খাতের লেনদেন হওয়া ৩২ কোম্পানির মধ্যে ২৬টির দর কমেছে। একইভাবে ওষুধ ও রসায়ন খাতের লেনদেন হওয়া ৩০ কোম্পানির মধ্যে ১৬টির দর কমেছে, বেড়েছে ১১টির দর। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ১৬ শেয়ারের দর কমার বিপরীতে ৪টির দর বেড়েছে।

সোমবার ডিএসইতে ৯ থেকে প্রায় ১০ শতাংশ পর্যন্ত দর বেড়েছে ৭ কোম্পানির। এগুলো হলো- এশিয়া ইন্স্যুরেন্স (সর্বশেষ লেনদেন মূল্য ১০৫ টাকা ৩০ পয়সা), মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক (১২.৩০ টাকা), জিকিউ বলপেন (১৩৭.৬০ টাকা), প্রাইম ব্যাংক (২৩.৬০ টাকা), এনআরবিসি ব্যাংক (২৩.৬০ টাকা), সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ (১৮.১০ টাকা) এবং মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ (১২.৫০ টাকা)।

বিপরীতে ৮ শতাংশ দর হারিয়ে তসরিফ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার সর্বশেষ ১৪ টাকা ৭০ পয়সায় এবং মীর আকতার লিমিটেড ৭০ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। উভয় শেয়ার ছিল দরপতনের শীর্ষে।