জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে প্রতি বছর বাজেটের আগে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। মোট জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ স্বাস্থ্য খাতে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন অনেকে। গত কয়েক বছরে টাকার অঙ্কে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়লেও তা কখনও মোট জিডিপির এক শতাংশও অতিক্রম করেনি। এরপরও যে পরিমাণ বরাদ্দ স্বাস্থ্য খাতে দেওয়া হয় তাও ব্যয় করতে পারছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এমনকি করোনা মহামারির এই সময়েও এখন পর্যন্ত সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার মতো অব্যয়িত রয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্নিষ্টরা বলেছেন, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সর্বোচ্চ হলেও দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করা সম্ভব হবে না। বাকি টাকা ফেরত যাবে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য বিভাগের টাকা ব্যয়ের সামর্থ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অর্থ ব্যয় না হওয়ার পেছনে সরকারের পরিকল্পনার অভাবকে দায়ী করে সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। তাদের অভিমত, প্রতি বছর স্বাস্থ্য খাতে যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় তার বড় একটি অংশ ফেরত যায়। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মতো স্বাস্থ্য খাতের টাকা ব্যয় করা সম্ভব নয়। এটি একটি টেকনিক্যাল মন্ত্রণালয়। আগে থেকে জনবল প্রস্তুতসহ চাহিদাপত্র তৈরি করতে হবে। এজন্য পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন। অথচ তা না করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই অর্থ ব্যয় করার সক্ষমতা স্বাস্থ্য বিভাগের নেই। সুতরাং আগে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এরপর প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ দিতে হবে। তাহলে অর্থ ফেরত যাবে না।
স্বাস্থ্য খাতের টাকা কেন ব্যয় হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় তার সিংহভাগ মূলত নতুন হাসপাতাল নির্মাণ, ভারী যন্ত্রপাতি কেনাকাটার পেছনে ব্যয় হয়। বাকি অর্থ ব্যয় হয় প্রয়োজনীয় ওষুধসামগ্রী, গজ, ব্যান্ডেজ, তুলাসহ হালকা যন্ত্রপাতি ও পথ্য ক্রয়ের পেছনে। এসব সামগ্রীকে এমএসআর বলা হয়। প্রতি তিন মাস অন্তর হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী এমএসআর সামগ্রীর জন্য অর্থ ছাড় করা হলেও ভারী যন্ত্রপাতি কেনা হয়নি। সারাদেশে ভারী যন্ত্রপাতি কেনার কাজের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় ঔষধাগারও প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করেনি। এসব কারণে সিংহভাগ অর্থ অব্যয়িত থেকে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কয়েক বছর ধরে স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটায় হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ খাতে যন্ত্রপাতি সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া করোনাকালে কেনাকাটা নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত ঠিকাদাররা নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন। অপরদিকে নতুন করে যেসব ঠিকাদার গ্রুপ সরবরাহ কাজে যুক্ত হয়েছেন তাদের ততটা সক্ষমতা নেই। আবার দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে বেশকিছু হাসপাতালের পরিচালক ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আবার কারও কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে হয়রানি করা হয়েছে। এসব কারণে সারাদেশে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষ ও কর্মকর্তা কেনাকাটার ঝুঁকি নিতে চাননি। স্থানীয় প্রতিষ্ঠান থেকে যন্ত্রপাতি কেনার চাহিদা না পাঠানো হলে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর নিজ থেকে সরবরাহ করতে পারে না। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হয়রানি এড়াতে কেনাকাটা থেকে বিরত থাকায় ৮০ ভাগ অর্থই ব্যয় করা সম্ভব হয়নি।
বরাদ্দের ৮০ ভাগই ব্যয় হয়নি :চলতি অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন খাতে ১১ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে গত ৯ মাসে ব্যয় হয়েছে মাত্র দুই হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। এই হিসাবে প্রায় ৮০ ভাগ অর্থ ব্যয় হয়নি। অর্থবছর শেষ হতে আর মাত্র এক মাস বাকি রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে এই সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন সংশ্নিষ্টরা।
স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণ থেকে বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি বরাদ্দ থেকে ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং বিদেশি ঋণ সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পগুলোতে ব্যয় হয়েছে মাত্র ১০ দশমিক ৩১ শতাংশ অর্থ। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে বাস্তবায়নাধীন মোট ৫৩ প্রকল্পের মধ্যে বিদেশি ঋণ সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের সংখ্যা ৩০টি।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, করোনাকালে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বেশি ৯৫ শতাংশ অর্থ ছাড় করা হয়েছে। অথচ বড় বরাদ্দ ছাড় করা ১৫ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এডিপি বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সবার পেছনে রয়েছে। সরকারের ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে এডিপি বাস্তবায়নের দিক থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৩৮তম অবস্থানে রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর (সিডিসি) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম সমকালকে বলেন, টিকা সংগ্রহে বিশ্বব্যাংক ৩ হাজার কোটি টাকা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে টিকা সংগ্রহ করতে পারলে এই টাকা ব্যয় হবে। তখন এডিপি বাস্তবায়নের হারও বেড়ে যাবে। টিকা সংগ্রহ করা না গেলে অর্থ ব্যয় হবে না। তখন বাস্তবায়নও কম হবে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী সমকালকে বলেন, করোনাকালে স্বাস্থ্যসেবার ভগ্ন চিত্র উন্মোচিত হয়েছে। বিশেষ করে সারাদেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আইসিইউ শয্যা স্থাপন, হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাসহ চিকিৎসাসামগ্রীর সংকট সামনে এসেছে। এগুলো কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ ছিল। এসব সামগ্রী কেনা হলে টাকা ফেরত যেত না। বরং আরও অর্থের প্রয়োজন হতো। জীবন রক্ষাকারী সামগ্রী না কেনায় পুরো টাকা ফেরত চলে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্যব্যয়ে সর্বনিম্ন কাতারে বাংলাদেশ :বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু সরকারি ব্যয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ। মাথাপিছু প্রায় দুই হাজার ডলার ব্যয় করে এ দেশটি দক্ষিণ এশিয়ায় সবার শীর্ষে রয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে শ্রীলঙ্কা ৩৬৯ ডলার, ভারত ২৬৭ ডলার, পাকিন্তান ১২৯ ডলার ব্যয় করে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ সবচেয়ে কম মাথাপিছু ব্যয় করে মাত্র ৮৮ ডলার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, দেশের মোট বাজেটের অন্তত ১৫ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ হতে হবে স্বাস্থ্য বাজেট বরাদ্দ। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বাজেট মোট বাজেটের ৫ শতাংশেরও কম। আর জিডিপির এক শতাংশের নিচে। বিশ্বে স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বেশি ডিজিপির ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ ব্যয় করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সুইজারল্যান্ড ১২ দশমিক ২ শতাংশ এবং তৃতীয় অবস্থানে থাকা জার্মানি ১১ দশমিক ২ শতাংশ ব্যয় করে। জিডিপির তুলনায় স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে কম ব্যয় করে যথাক্রমে মোনাকো, পাপুয়া নিউগিনি ও ব্রুনেই। এই তিন দেশেরও পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংকের ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এই দুই দেশের নাগরিকরা নিজেরা স্বাস্থ্যব্যয়ের ৭০ শতাংশের বেশি জোগায়। তবে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জাতীয় স্বাস্থ্যব্যয় সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোগী নিজের পকেট থেকে জোগায় ৬৭ শতাংশ। খরচের ২৩ শতাংশ জোগায় সরকার, ৭ শতাংশ জোগায় উন্নয়ন অংশীদাররা। বাকি ৩ শতাংশ আসে গোষ্ঠী স্বাস্থ্যবীমাসহ অন্যান্য উৎস থেকে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে রোগীর নিজের পকেট থেকে ব্যয়ের অংশ সবচেয়ে বেশি।
ব্যয়ের সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের :স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতা তৈরির প্রতি মনোযোগী হতে সংশ্নিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএমএর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব। তিনি সমকালকে বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ ব্যয় করার সক্ষমতা তৈরির জন্য এ পর্যন্ত কতজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, এটি জানা প্রয়োজন। যেসব চিকিৎসক অথবা কর্মকর্তা বিভিন্ন প্রকল্পের প্রধান হিসেবে কাজ করেন তাদের অধিকাংশের প্রশিক্ষণ নেই। কারণ প্রকিউরমেন্ট আইন জানা, প্রকল্প তৈরি করার অভিজ্ঞতা খুব কম কর্মকর্তার রয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় চাহিদার আলোকে বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন। সেটি তো হচ্ছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি টেকনিক্যাল বিভাগ। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মতো এখানে টাকা ব্যয় করা যাবে না। যেসব মেশিন ক্রয় করা হবে, তা পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত জনবল প্রয়োজন। আগে সেই জনবল তৈরি করতে হবে। সেটি না করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর ওই বরাদ্দের টাকা বছর শেষে আবারও ফেরত চলে যায়। এটি শুধু স্বাস্থ্য বিভাগ নয়, সরকারের অদূরদর্শিতার প্রতিফলন বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা ব্যয় করতে পারে না- এটি দৃশ্যমান। এর কারণ স্বাস্থ্য খাতের বাজেট তৈরির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বাস্তব চাহিদার ওপর ভিত্তি করে বাজেট প্রস্তুত করেন না। আগের বছরের বাজেটের চেয়ে ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়িয়ে পরের বছরের বাজেট তৈরি করেন। পরিকল্পনামাফিক না হওয়ায় অর্থ অব্যয়িত থেকে যায়। এজন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে বরাদ্দ দিতে হবে। দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, বাজেট বরাদ্দ, ছাড় করার বিষয়ে সরকারের নীতির পরিবর্তন করতে হবে। জুনে বাজেট দেওয়ার পর সারাবছর কোনো টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় না। বছরের শেষভাগে গিয়ে পুরো বরাদ্দ ছাড় করা হয়। মে মাসের শেষ দিকে যখন অর্থছাড় করা হয়, তখন হাতে মাত্র এক মাসের মতো সময় থাকে। এই স্বল্প সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয় না। এ কারণে অর্থ ফেরত চলে যায়। সুতরাং পদ্ধতিগত পরিবর্তন না করলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না। একই সঙ্গে যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়, তাও অপ্রতুল। এটি পর্যাপ্ত মাত্রায় বাড়িয়ে তা ব্যয় করার সক্ষমতা সৃষ্টি করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
গুরুত্ব পাবে করোনা :অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রগুলো বলছে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা বিভাগের উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য ১২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আগামী অর্থবছরে এ বরাদ্দ বাড়িয়ে ১৭ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দুই বিভাগের পরিচালন ব্যয়ও কিছুটা বাড়িয়ে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাজেটে বরাদ্দ পেতে যাচ্ছে ৩২ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। গত বছর স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। করোনা পরিস্থিতি সামনে রেখে পুরো বাজেট সাজানো হয়েছে। বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আগামী অর্থবছরে প্রায় ১০ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য ২০ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন হবে। টিকা ক্রয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ যন্ত্রপাতি, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপনের জন্য বাজেটের একটি বড় অংশ রাখা হয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা বাড়ানোর জন্যও বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সমকালকে বলেন, করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নমূলক অনেক কাজ হয়েছে। বিশেষ করে আইসিইউর শয্যা বাড়ানো হয়েছে। অধিকাংশ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাসহ অন্যান্য সুবিধাও বাড়ানো হয়েছে। অর্থবছরের মাঝামাঝি সময় থেকে মূল ফোকাস ছিল টিকা নিয়ে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী টিকা সংগ্রহ না হওয়ায় বরাদ্দের বড় একটি অংশ অব্যয়িত রয়েছে। এখন জুন মাসের মধ্যে টিকা চলে এলে এডিপির হার বাড়বে। তবে করোনার কারণে অন্যান্য রোগের চিকিৎসাসেবা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। এ কারণেও অর্থ ব্যয় হয়নি। তবে আগামী অর্থবছর থেকে পরিকল্পনা করে যেসব জায়গায় ঘাটতি রয়েছে, তা দূর করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।