লকডাউনে ব্যাংক খোলা থাকবে- ঠিক এ খবরে বড় উত্থান হয়েছে শেয়ারবাজারে। সিংহভাগ শেয়ারের দরবৃদ্ধি পাওয়ায় প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচকের উত্থানে সেঞ্চুরি হয়েছে।

গতকালের তুলনায় আজ দিনের লেনদেন শেষে সূচক ১০৭ পয়েন্ট বেড়ে ৬১৫০ পয়েন্টে উঠেছে। সূচকের এ অবস্থান ২০১৮ সালের জানুয়ারির পর বা গত ৩ বছর ৫ মাসের সর্বোচ্চ।

অথচ পুনরায় সর্বাত্মক ও কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেওয়ার পর গত রোববার ঠিক বিপরীত অবস্থা ছিল শেয়ারবাজারে। ওইদিন সূচকটির পতনে সেঞ্চুরি হয়েছিল। একদিনে ১০০ পয়েন্ট হারিয়ে ডিএসইএক্স সূচক নেমেছিল ৫৯৯২ পয়েন্টে।

এদিকে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে আগামীকাল থেকে সরকার দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনে ঘোষণা দিয়েছে। বলা হচ্ছে, গত সোয়া বছরে সরকার যত লকডাউন দিয়েছিল, এটি হবে তার থেকে আলাদা। জরুরি সেবার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া কেউ বাসা থেকে অপ্রয়োজনে বের হলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।

লকডাউন সফল করতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র‌্যাব, আনসার এবং সেনাবাহিনীও নামাচ্ছে সরকার।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এমনই লকডাউন আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। এর পর শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হলেও ব্যাপক দরপতন হয়।

এর কারণ ছিল, লকডাউনের ঘোষণার পরই শেয়ারবাজারে গুঞ্জন ওঠে- লকডাউন কঠোর হলে শেয়ারবাজারের লেনদেন কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। গত বছর এপ্রিল ও মে মাসের লকডাউনে টানা দুই মাস শেয়ারবাজার বন্ধের নজিরই তাদের এমন ধারণার কারণ ছিল।

গত শুক্রবারই শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম জানিয়ে দেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং কার্যক্রম খোলা থাকলে শেয়ারবাজারও খোলা থাকবে।

কিন্তু তার এ বক্তব্যেও খুব আশাবাদী ছিলেন না বিনিয়োগকারীরা। তাদের মনে প্রশ্ন ছিল লকডাউনে মানুষ বের হতে না পারলে ব্যাংক কী জন্য খোলা হবে। তবে লকডাউন বিষয়ে আজকের প্রজ্ঞাপন দেখে বিনিয়োগকারীরা আশস্ত হয়েছেন।

আজকের লকডাউন সম্পর্কিত জারি করা সরকারি প্রজ্ঞাপনের ১.৭ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

জানা গেছে, আজ বিকেলেই নির্দেশনাটি জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। শিল্পাঞ্চলে কল-কারখানার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালুর রাখার স্বার্থে ওই এলাকায় ব্যাংক শাখা খোলা রাখা হবে। পাশাপাশি দেশব্যাপী কর্মজীবী মানুষদের জুন মাসের বেতন-ভাতাদি পরিশোধের স্বার্থে প্রধান কার্যালয়সহ অনেক শাখাই খোলা রাখা হতে পারে।

এদিকে বুধবার শেয়ারবাজারে দিনের লেনদেন শেষে দেখা গেছে, ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৭৯ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৭১টি লেনদেনে এসেছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩০১৭টির। দর হারিয়ে কেনাবেচা হয়েছে ৪১টির এবং শেষ পর্যন্ত দর অপরিবর্তিত ছিল ২৩ শেয়ারের।

তবে সূচকের এ উত্থানের দিনে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪০৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার।

ডিএসইর খাতওয়ারি লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আজ প্রতিটি খাতেরই সিংহভাগ শেয়ারের বাজারদর বেড়েছে। তবে বীমা খাতের লেনদেনে আসা ৪৯ শেয়ারের গড় বাজার দর বেড়েছে সর্বাধিক ৫.৬২ শতাংশ হারে। ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের গড় বাজার বেড়েছে সোয়া ২ শতাংশ। এ খাতই সূচক বৃদ্ধিতে সবচেয়ে ভূমিকা রেখেছে। অন্য বেশিরভাগ খাতেরও গড়ে ১ শতাংশের ওপর দর বেড়েছে।

আজ ৯ শতাংশের ওপর দর বেড়েছে ২২ কোম্পানির শেয়ারের। ৫ শতাংশের ওপর দর বেড়েছে মোট ৬৮ কোম্পানির শেয়ারের।

বিপরীতে ৫ শতাংশের ওপর দর হারিয়েছে মাত্র দুই কোম্পানি। এগুলো হলো- বিডি মনোস্পুল পেপার এবং মুন্নু ফেব্রিক্স।

একক কোম্পানি হিসেবে সাড়ে ৮৭ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা নিয়ে লেনদেনের শীর্ষে ছিল স্কয়ার ফার্মা। ৪৬ কোটি টাকার লেনদেন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড।

২৫১ কোটি টাকার লেনদেন নিয়ে খাতওয়ারি লেনদেনের শীর্ষে ছিল বীমা খাত। এ লেনদেন ছিল আজকের মোট লেনদেনের ১৮ শতাংশ। ২২১ কোটি টাকার লেনদেন নিয়ে এর পরের অবস্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত।