ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

শ্রম অধিকার সংরক্ষণে আরও পদক্ষেপ নেবে সরকার

শ্রম অধিকার সংরক্ষণে আরও  পদক্ষেপ নেবে সরকার

.

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২২:২৩

শ্রম অধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা, ভিসা বিধিনিষেধসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার অন্যতম সম্ভাব্য লক্ষ্য হতে পারে বাংলাদেশ– এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন শ্রম অধিকার স্মারকের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আগামীতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নির্ধারণে আগামীকাল সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ডাকা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে বৈঠকে পররাষ্ট্র, শ্রম সচিবসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। 

সম্প্রতি ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, শ্রমিক অধিকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সম্প্রতি ঘোষিত নতুন নীতির লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এর ব্যবহার করতে পারে। শ্রম অধিকারের লঙ্ঘন হয়েছে মনে করলে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সুযোগ রয়েছে। এর প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক খাতের ওপর পড়তে পারে। সবাইকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলা হয় চিঠিতে। ওই চিঠির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘বিশ্বব্যাপী শ্রমিক ক্ষমতায়ন, অধিকার ও উচ্চ শ্রমমান এগিয়ে নিতে স্মারক’সংক্রান্ত একটি সংকলিত প্রতিবেদনও পাঠানো হয়।

বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকার বিষয়ে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ১৬ নভেম্বর এ স্মারকে স্বাক্ষর করেন। স্বাক্ষরের পর সান ফ্রান্সিসকোর এক হোটেলে বিশ্ব-শ্রমিক নেতাদের সামনে এর বিস্তারিত তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। তিনি বলেন, যারা শ্রমিকদের হুমকি-ধমকি দেবে, ভয় দেখাবে; শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা, শ্রম অধিকারের পক্ষে কাজ করা ব্যক্তি ও শ্রম সংগঠনের ওপর আক্রমণ করবে, তাদের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। এ সময় তিনি বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকারকর্মী কল্পনা আক্তারের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, তারা কল্পনা আক্তারের মতো মানুষদের পাশে থাকতে চান, যিনি (কল্পনা) বলেন, তিনি এখনও জীবিত আছেন, কারণ আমেরিকার দূতাবাস তাঁর পক্ষে কাজ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র যখন সারাবিশ্বের জন্য নতুন এ শ্রম অধিকার স্মারক জারি করে তখন ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবিতে রাস্তায় নামে বাংলাদেশের পোশাক খাতের শ্রমিকরা। তাছাড়া বাংলাদেশের একজন শ্রমিক অধিকারকর্মীকে উদাহরণ হিসেবে সামনে আনায় বিষয়টি সতর্কবার্তা হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে উদ্বেগে রয়েছে রপ্তানিকারকরা। 
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সমকালকে বলেন, কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে এ স্মারক, কেনই বা এতে বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকারকর্মীর নাম এলো– এসব বিষয় ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র, বাণিজ্য এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সরকারের অন্যান্য দপ্তর পর্যালোচনা করেছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাস এ বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে। সামগ্রিকভাবে আলোচনার জন্যই আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ঢাকা হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে নতুন কিছু পদক্ষেপ নেবে সরকার।

গতকাল বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে তার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। এ চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোনো চাপ অনুভব করছে না। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যে ধরনের পরিস্থিতিতে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিতে পারে বলে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশে সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তাছাড়া সরকার প্রতিনিয়ত শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায় কাজ করছে। একই সঙ্গে আগামীতে শ্রম অধিকার বিষয়টি কীভাবে আরও এগিয়ে নেওয়া যায় সেদিকে জোর দেওয়া হচ্ছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহছানে এলাহী সমকালকে বলেন, শ্রমিক অধিকার রক্ষায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে নেওয়া সরকারের কর্মপরিকল্পনা এবং আইএলও’র রোডম্যাপ অনুযায়ী গত আড়াই বছরে প্রায় ৯০ শতাংশ অর্জন হয়েছে। এ অর্জনকে শতভাগে উন্নীত করতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে। তারপরও বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র, আইন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের সঙ্গে আলোচনার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×