বস্ত্রখাতের তালিকাভুক্ত নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। একই সঙ্গে কমিশন নিজেই এর পর্ষদ গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বুধবার অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি ফেনী জেলার ফতেহপুর অবস্থিত নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার কোম্পানির কারখানায় সরেজমিন পরিদর্শন করে, তা বন্ধ পেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এরপর কোম্পানিটির রাজধানীর বাংলা মোটরস্থ প্রধান কার্যালয়ে গিয়েও তা বন্ধ পায়। গত ৯ আগস্ট ডিএসই তার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এ তথ্য জানায়। একইসঙ্গে বিএসইসিকেও অবহিত করে।

ডিএসই পরিদর্শন প্রতিবেদনে জানায়, কারখানা ও প্রধান কার্যালয় বন্ধ পাওয়া গেলেও কোম্পানিটি নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদনসহ অন্যান্য তথ্য দিচ্ছে। ওইসব থেকে দেখে কখনোই মনে হয়নি, এর কারখানা এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

কারখানা ও প্রধান কার্যালয় যে বন্ধ, তা লিখিতভাবে জানানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও কোম্পানিটি তা জানায়নি।

আবার বন্ধ হলেও নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদনসহ অন্য তথ্য দিচ্ছে। যাতে কোম্পানি বন্ধের কোনো তথ্য নেই। এমনকি কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনেও এ কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা বিষয়ে তথ্য গোপন করা হয়েছে।

এ দায়ে কোম্পানিটির বহিঃনিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানগুলোর (অডিট ফার্ম) বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।

ডিএসইর কর্মকর্তারা জানান, কোনো কোম্পানির কারখানা বা ব্যবসা কার্যক্রম কোনো কারণে সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধ হলে বা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হলে, তার আধা ঘণ্টার মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জকে জানাতে হয়। এ তথ্য জানানো বাধ্যতামূলক। কিন্তু কোম্পানিটি এ তথ্য জানায়নি।

তবে কবে থেকে নূরানী ডাইং কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ আছে, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

তবে গত ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় কোম্পানিটির তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন গ্রহণ করা হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি ৪২ পয়সা লোকসান হয়েছে।

১১২ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানি ২০১৭ সালের আইপিও প্রক্রিয়ায় ৪৩ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এরমধ্যে ২০১৮ সালের জন্য এ কোম্পানি তার শেয়ারহোল্ডারদের ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ওই বছর আরও ১১ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশও দিয়েছিল নূরানী ডাইং।

অন্য দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানিটির মতো এ কোম্পানিও প্রতি বছর লভ্যাংশ হিসেবে বোনাস শেয়ার নিয়েছে। ২০১৭, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে শেয়ারহোল্ডারদের কেবল ১০ শতাংশ করে বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল।

কোম্পানি বন্ধ হলেও গত মে থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত শেয়ারটির দর ৫.৫০ টাকা থেকে দ্বিগুণ বেড়ে ১১.২০ টাকায় ওঠে। ডিএসই-এর কারখানা বন্ধের খবর দেওয়ার পর বুধবার শেয়ারটির দর সাড়ে ৬ শতাংশ কমে সর্বশেষ ৯.৯০ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে, ছিল দরপতনের শীর্ষে।