পেমেন্ট গেটওয়ে কোম্পানিতে আটকে পড়া ই-কমার্স খাতের ক্রেতাদের আগাম পরিশোধ করা টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া আবারও পিছিয়ে গেল।

পুলিশের কাছ থেকে মামলা থাকা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের তালিকা সংগ্রহে কিছুটা সময় লাগবে। তাই ক্রেতাদের অর্থ পরিশোধও পেছাচ্ছে। শিগগিরই মামলার তথ্য চেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি পাঠাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। 

মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স সেলের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা নেই শুধুমাত্র সেসব কোম্পানির গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু কোন কোন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা আছে, তার তথ্য নেই পেমেন্ট গেটওয়ে কোম্পানির কাছে। ফলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারছে না তারা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স সেলের প্রধান ও অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, এর আগে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো ৩০ জুনের পরে পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানে আটকে পড়া টাকার মধ্যে যেসব ই-কমার্স কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা নেই শুধু তাদের গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার। সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ১৫ ডিসেম্বর একটি সার্কুলারও করে। 

কিন্তু পেমেন্ট গেটওয়ে কোম্পানিগুলোর কাছে মামলা থাকা কোম্পানির তালিকা না থাকায় তারা এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। তাই পুলিশ সদর দপ্তরের কাছে মামলা থাকা কোম্পানির তালিকা চেয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি জানান, আগামী মাস থেকে ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর চালু করা হবে। এছাড়া ই-কমার্স খাতে লজিস্টিকিস সহায়তার জন্য ডাক বিভাগের সহায়তায় একটি অ্যাপ চালু করা হবে। পাশাপাশি ভিসা ও মাস্টার কার্ড থেকে লেনদেনের ক্ষেত্রেও কীভাবে পণ্য পাওয়ার পর লেনদেনটি সম্পন্ন করা যায় তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জুনের পরে বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়ে কোম্পানিতে ই-কমার্স খাতের ক্রেতাদের ২১৪ কোটি টাকা আটকা পড়েছে। ক্রেতারা এসব টাকা আগাম পরিশোধ করেছেন, কিন্তু পণ্য পাননি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে কয়েক হাজার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের কার কার বিরুদ্ধে মামলা আছে- সে তথ্য এককভাবে কোনো সংস্থার কাছে নেই। কারণ অনেকে পুলিশের কাছে মামলা করেছেন। আবার অনেকে আদালতে মামলা করেছেন। 

আদালতে করা সব মামলার তথ্য যে পুলিশের কাছে এসেছে তা নিশ্চিত করাটাও কঠিন। আবার দুর্নীতি দমন কমিশনেও মামলা রয়েছে। আর টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলার যোগসূত্রও পরিস্কার নয়। কারণ আটকা পড়া টাকা ক্রেতাদের। কোনো প্রতিষ্ঠানের অন্যায় থাকলে তার ফল ক্রেতাদেরই ভোগ করতে হচ্ছে। এতে গ্রাহক হয়রানি বাড়ছে বলেই মনে করছেন তারা।

পণ্য সরবরাহের পরই টাকা পাবে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এবং ১০ দিনের পণ্য সরবরাহ না হলে গ্রাহক স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা ফেরত পেয়ে যাবেন, এমন নিয়ম সংযোজন করে গত ৩০ জুন ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকা প্রকাশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গ্রাহক স্বার্থের এমন ইতিবাচক উদ্যোগ দেখে ই-কমার্স খাতে টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেও ক্রেতারা আগাম টাকা পরিশোধ করতে দ্বিধা করেননি। কিন্তু এই ব্যবস্থা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ৩০ জুন থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য কেনার জন্য পেমেন্ট গেটওয়ে কোম্পানির মাধ্যমে ক্রেতারা ৫০৫ কোটি টাকা দিয়েছে। এরমধ্যে পেমেন্টওয়ে কোম্পানিগুলো বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে ২৯১ কোটি টাকা ছাড় করেছে। বাকি ২১৪ কোটি টাকা আটকে আছে। এর মধ্যে পুলিশের অনুরোধে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের ১৬৬ কোটি টাকা ফ্রিজ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আনলকের আদেশ জারি না করা পর্যন্ত কিউকমের গেটওয়ে ফস্টার টাকা ফেরত দিতে পারবে না। ফস্টার ছাড়াও আরও ৪৮ কোটি টাকা আটকে আছে এসএসএল, সূর্যমুখী, বিকাশ, নগদ এবং সাউথইস্ট ব্যাংকে।