- অর্থনীতি
- কমেছে ওএমএস, খালি হাতে ফিরছেন ক্রেতারা
কমেছে ওএমএস, খালি হাতে ফিরছেন ক্রেতারা
ছয় মাসেই বরাদ্দের ৮০ ভাগ শেষ

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে রাজধানীর টিসিবির ট্রাকের সামনে ক্রেতার ভিড়। রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে তোলা ছবি- ফোকাস বাংলা
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ওএমএস ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন এলিজা বেগম। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে থাকেন তিনি। গত কয়েক দিন এখানে এসেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাকে। কথায় কথায় বললেন, 'এখানে ১টা বাজলেই চাল শেষ হয়া যায়। আইজ যদি চাল না পাই তাইলে বাইরে থেইকা কেনার সামর্থ্য আমার নাই।'
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এলিজার মতো নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকেই খোলাবাজারে বিক্রি বা ওপেন মার্কেট সেলের (ওএমএস) চাল-আটা কিনে থাকেন। কিন্তু সঠিক তদারকি করতে না পারায় গত ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা মহানগরে ২০টি ওএমএস ট্রাকসেলের ১০টিতে বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। বাকি ১০টি ট্রাকসেলের মধ্যে পাঁচটির প্রতিটিতে তিন টন আতপ ও এক টন আটা দেওয়া হচ্ছে। আতপ চালের ভাত খাওয়ার অভ্যাস না থাকায় অনেকেই চাল না কিনে ফিরে যাচ্ছেন।
ওএমএস ক্রেতা নাজিরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, কয়েক দিন ধরে সকাল ১০টার আগে লাইনে না দাঁড়ালে চাল পাওয়া যায় না।
২০২১-২২ অর্থবছরে ওএমএসের জন্য দেড় লাখ টন চাল ও দুই লাখ ৬৩ হাজার ১৫৮ টন আটা বরাদ্দ রয়েছে। এ বছর শুরু থেকে টানা ওএমএস ও বিশেষ ওএমএস দেওয়া হয়েছে। এতে বছরের ছয় মাস যেতেই বরাদ্দের প্রায় ৮০ ভাগ চাল শেষ হয়ে গেছে। আটা বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪৫ ভাগ।
তদারকিতে নেই অগ্রগতি: এমন অবস্থায় ওএমএসের চাল ও আটা বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য ৬ ডিসেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবদের নেতৃত্বে টিম গঠন করা হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, একই রেশনিং এলাকাভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী সমন্বয় করে অতিরিক্ত সচিবরা নির্দেশিত এলাকায় ওএমএস দোকান মনিটরিং করবেন। মনিটরিং করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেবেন মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু এর পরও পরিস্থিতি পাল্টায়নি।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. সালমা মমতাজ গতকাল রোববার সমকালকে জানান, কমিটি মাত্র গঠিত হয়েছে। অধস্তন কর্মকর্তারা এখনও কোনো প্রতিবেদন দেননি।
গত ১২ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুর ময়ূর ভিলা বেড়িবাঁধ এলাকায় দায়িত্বরত উপ-খাদ্য পরিদর্শক আব্দুর রহমান সমকালকে বলেন, 'তিন টন চাল ও এক টন আটা সর্বোচ্চ ৮৫০ জন মানুষকে দেওয়া যাবে। কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় হাজার মানুষ! লাইন থাকছে না, নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।' তিনি বলেন, 'গতকালও অনেকে ওএমএসের চাল-আটা পাননি। এর পরিমাণ বাড়ানো দরকার।'
যা বলছেন খাদ্যমন্ত্রী: এ প্রসঙ্গে সাধন চন্দ্র মজুমদার সমকালকে বলেন, ভালোভাবে তদারকির জন্য ওএমএসের ট্রাক বন্ধ রেখেছি। চাহিদা বাড়লে প্রয়োজনে আবার চালু করা হবে। আতপ চালের বিষয়ে তিনি বলেন, আতপ চাল বিক্রি না করলে নষ্ট হয়ে যাবে। শীতে অনেকে এ চাল দিয়ে পিঠা খেতে পারবে।
খাদ্যমন্ত্রী জানান, ওএমএস বরাদ্দের পরিমাণ দ্বিগুণ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগির এ বিষয়ে অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠানো হবে। দক্ষ তদারকির জন্য টিমও গঠন করা হয়েছে। রাজধানীতে আটজন তদারকি কর্মকর্তা ছিলেন। এর মধ্যে সাতজনকে বদলি করা হয়েছে। কোনো ডিলারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
'ওএমএস বাড়াতে হবে': সবুজবাগ এলাকার ডিলার আরাফাত ফেরদৌস খান জানান, আগে তিনি তার দোকানে দেড় টন চাল ও দেড় টন আটা পেতেন। এখন পাচ্ছেন এক টন চাল ও এক টন আটা।
মোহাম্মদপুর এলাকার ডিলার আব্দুল হালিম বলেন, এ এলাকায় ১২টি পয়েন্টে ১২টি ট্রাক ছিল। ট্রাক কমানোর ফলে প্রতি সপ্তাহে সব পয়েন্টে ট্রাক থাকে না।
খাদ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক বদরুল হাসান বলেন, 'এত বড় সিটিতে ওএমএসের ১০টি ট্রাক দিয়ে লাখ লাখ গরিব মানুষকে সহায়তা করা সম্ভব নয়। ৫০টির বেশি ট্রাক চালু রাখা প্রয়োজন।'
সদ্য বদলি হওয়া প্রধান নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, ঢাকা রেশনিংয়ের প্রধান নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আমিনুল এহসান বলেন, ওএমএস কেন কমিয়েছে জানি না। এটা খাদ্য বিভাগের প্রস্তাবের ভিত্তিতে হয়নি।
ঢাকা বিভাগের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক তপন কুমার দাস বলেন, রাজধানীতে ওএমএসের কলেবর বাড়ানো হলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে। গরিব মানুষের জন্য এটা খুবই কাজে দিচ্ছে।
মন্তব্য করুন