আপাতত বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের অনুমতি নয়

.
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২২:৪৫
এখন না পারলেও নির্বাচনের পরই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট কাটিয়ে উঠতে পাঁচ বছরের জন্য বিনিময় হার নির্ধারণ-সংক্রান্ত নীতি প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেছেন, এখন হয়তো কিছু করা যাবে না। তবে নির্বাচনের পর যত দ্রুত সম্ভব, এ-সংক্রান্ত নীতি ঢেলে সাজিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে, এটাই নীতি। এর মধ্যেই সবাইকে চলতে হবে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আর কোনো বেসরকারি কোম্পানিকে বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) বার্ষিক সম্মেলনের একটি সেশনের সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বিনিয়োগ চাহিদা মেটাতে দেশি কোম্পানিগুলোর বিদেশি উৎস থেকে নেওয়া বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ পরিশোধও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি করছে বলে মনে করেন ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘এখন কী প্রক্রিয়ায় কোম্পানিগুলোকে বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়, তা জানি না। গত এক-দেড় বছরে টাকার অবমূল্যায়ন ৩০ শতাংশ যোগ করলে তাও ঋণ পরিশোধে একটা বড় সমস্যা তৈরি করেছে। অনেকে যেভাবেই হোক ওই ঋণ শোধ করে দিতে চাচ্ছে। এরই মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলারের মতো পরিশোধ করেছে। এরও একটা চাপ গিয়ে পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে।’
তিনি বলেন, রিজার্ভ সংকটের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আর কোনো কোম্পানিকে বিদেশ থেকে ঋণ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া ঠিক হবে না। নিজের দায়িত্বকালীন সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ওই সাত বছরে বেসরকারি কোম্পানিকে ৭-৮ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে ঢালাওভাবে নয়, গভর্নরের নেতৃত্বে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ একটি যাচাই-বাছাই কমিটি ছিল। কমিটির কাছে বিডা এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এইচএসবিসির ব্যাংকের মাধ্যমে যে প্রস্তাব বা সুপারিশগুলো আসত, তার আলোকে শুধু ওইসব প্রতিষ্ঠানের ঋণ গ্রহণের প্রস্তাব অনুমোদন করা হতো, যারা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে আনতে পারবে এবং ক্রেডিট রেটিং ভালো ছিল।
অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসাইন। তিনি বলেন, অতিমারির সময়ে বড় আমদানির বিপরীতে অপেক্ষাকৃত কম রপ্তানি, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট বাড়িয়েছে। তবে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে ওঠার পর ‘এত ডলার কী করব’ এমন মানসিকতার পাশাপাশি বিনিময় হার কৃত্রিমভাবে ধরে রাখার ভুল নীতির খেসারত দিচ্ছে অর্থনীতি।