- অর্থনীতি
- অনেক ব্যাংকারও নিজেদের সমস্যার কথা জানাচ্ছেন
সাক্ষাৎকার
অনেক ব্যাংকারও নিজেদের সমস্যার কথা জানাচ্ছেন

মোহাম্মদ নূরুল আমিন, সাবেক চেয়ারম্যান এবিবি
সমকাল :ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্ট্রিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস বিভাগ কাজ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কার্যক্রমকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
নূরুল আমিন :অবশ্যই ইতিবাচক। অনেক আগে থেকেই এ কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য ১৬২৩৬ একটি হটলাইন নম্বরও আছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৫ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রাবাজারের বাইরেও জনস্বার্থে কিছু কাজ করার সুযোগ রয়েছে। সেই সুযোগ থেকেই আমানতকারীসহ সব ধরনের গ্রাহকের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এ উদ্যোগ নিয়েছে। অনেক ব্যাংকারও এই ব্যবস্থায় নিজেদের সমস্যার কথা জানাচ্ছে। ফলে ব্যাংকের গ্রাহক, ব্যাংকার সব পর্যায়ে এ উদ্যোগটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
সমকাল :ব্যাংক খাত দেশের অন্যান্য খাতের তুলনায় সুসংগঠিত। এ খাতে প্রয়োজনীয় আইন-বিধি-নির্দেশনাও মেনে চলতে হয়। তা সত্ত্বেও এ ধরনের উদ্যোগ কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কেন নিতে হলো?
নূরুল আমিন :দিন দিন ব্যাংক খাতের কর্মকাণ্ড অনেক বিস্তৃত হয়েছে। ব্যাংকগুলো এখন মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসসহ বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা দিচ্ছে। ক্রেডিট কার্ড, বৈদেশিক লেনদেনসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ডও বেড়ে গেছে। তাই নানা সময় নানা পরিস্থিতি দেখা দিতেই পারে। আবার এ খাতে যে শতভাগ সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাও নয়। করপোরেট গভর্নেন্সও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। আপনি দেখবেন, অনেক ব্যাংকার অভিযোগ করেন, তাদের অনেকে সময়মতো পদোন্নতি পাচ্ছে না, প্রাপ্য সুবিধাও মিলছে না। একবার তো শুনলাম একটি ব্যাংক এক দিনে ১৩৪ জন কর্মী ছাঁটাই করেছে। যে কারণে বলতে হবে সামগ্রিক বিবেচনায় ডিউ ডিলিজেন্সের ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। গ্রাহক অসন্তুষ্টি বা অভিযোগের ক্ষেত্রে এই ঘাটতিও একটি কারণ।
সমকাল :এই ঘাটতির বিষয়টি কি আরেকটু ব্যাখ্যা করবেন?
নূরুল আমিন :দেখুন, ব্যাংক খাতের স্বচ্ছতা এখনও অন্য যে কোনো খাতের তুলনায় অনেক বেশি। ব্যাংক এখনও মানুষের ভরসার জায়গায় রয়েছে। অনেক ভালো কাজ করে ব্যাংক। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে, কাজটি যার নয়, তিনি করছেন বা তাকে দিয়ে করানো হচ্ছে। অথবা যে কাজ যার করার কথা তিনি করছেন না। তখনই গন্ডগোলটা হয়। ঘাটতি থাকতেই পারে। প্রতিদিন নতুন কাজ, নতুন গ্রাহকের মুখোমুখি হতে হয়। ফলে ঘাটতিকে দোষ হিসেবে দেখছি না। আর বাংলাদেশ ব্যাংক যেটা করেছে, তারও দরকার আছে। কারণ এত বড় সেক্টরে চৌকস অ্যান্ড ব্যালান্স দরকার আছে।
সমকাল :ব্যাংকের গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষায় বা হয়রানি বা অভিযোগ কমানোর জন্য আর কী করা যেতে পারে?
নূরুল আমিন : এ জন্য তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। সঠিক, নিরাপদ ও দ্রুত সেবা। এই তিনটি কাজ যদি করা যায়, তাহলে অভিযোগের কিছু থাকবে না। ব্যাংকগুলো সে চেষ্টা করছেও। এ জন্য প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত সেবা দিতে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করছে। কিন্তু ব্যাংকের কার্যক্রমের ব্যপ্তি যেভাবে বাড়ছে, তাতে সবকিছু একসঙ্গে ঠিক করে ফেলা যাবে না।
সমকাল :গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করা বা ব্যাংক-গ্রাহক সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন কি?
নূরুল আমিন :ব্যাংকের চাকরির শুরুতে কর্মীদের ছয় মাসের একটা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখানে এসব বিষয় থাকে। এরপর সময়ে সময়ে অন্যান্য প্রশিক্ষণেও এসব বিষয় থাকে। তবে সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে কর্মীকে তার দায়িত্বের প্রতি যত্নশীল হবে হবে। সততা ও নির্মোহভাবে কাজ করতে হবে। দায়িত্বশীলতা, সততা ও নির্মোহ মনোভাব কারও থাকলে গ্রাহক অসন্তুষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই।
সমকাল :বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে থাকেন, ছোট ব্যবসায়ী ও নতুন উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে সহযোগিতা পাচ্ছেন না। এই অভিযোগের বাস্তবতা আসলে কতটা?
নূরুল আমিন :এক সময় এই অভিযোগ ছিল। যখন সরকারি ব্যাংকগুলোই দেশব্যাপী সেবা দিত। বেসরকারি ব্যাংক কম ছিল। যারা ছিল তারাও প্রধানত শহর পর্যায়ে কাজ করত। এক সময় বেসরকারি ব্যাংকের শহরে পাঁচটি শাখার বিপরীতে গ্রামাঞ্চলে একটি শাখা খোলা হতো। এখন ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েছে। শহরাঞ্চল, গ্রামাঞ্চলের শাখার সংখ্যা প্রায় সমান সমান। এ ছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিং, উপশাখা, এসএমই শাখা ইত্যাদিও এসেছে। ফলে ব্যাংকগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে। আর এখন এসএমই, এমএসএমই এসব খাতকেই ব্যাংক বেছে নিচ্ছে। তবে হ্যাঁ, ব্যক্তি বিশেষে অনেক কিছু নির্ভর করে। বোর্ড, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কীভাবে কাজ করছে, কোন বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ। তবে ঋণের বেলায় কিছু বৈষম্য এখনও আছে সেটা মানছি। পাশাপাশি আশা করি এই বৈষম্যও শিগগিরই কেটে যাবে।
সমকাল :সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতের সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মত রয়েছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
নূরুল আমিন :বেসরকারি ব্যাংকের বেতন কাঠামো সরকারি খাতের তুলনায় ভালো। ব্যাংকগুলোর নিজস্ব সার্ভিস রুলস রয়েছে। নির্ধারিত বেতন কাঠামো রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক হঠাৎ করেই এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করল। কোনো কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অসংগতি দেখা দিলে সেটা নিয়ে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়াই উচিত ছিল। কোনো মতামত না নিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ায় এবিবি, বিএবি যৌথভাবে প্রতিবাদ করেছে। ফলে কাজটি এখন বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। সব বেসরকারি ব্যাংকের অবস্থা এক রকম না। বেশ কয়েকটি ব্যাংক আছে যারা ঠিকমতো মূলধন সংরক্ষণ করতে পারছে না। আবার সব ব্যাংকের মুনাফা সমান না। অনেকের আবার লোকসানও আছে। ফলে সব ব্যাংকের জন্য এ সিদ্ধান্ত এ করম প্রভাব ফেলবে না। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দরকার আছে।
মন্তব্য করুন